ঢাকা: পিতৃহীন লালনকে সংসারী করতে বিয়ে করিয়ে দেন মা পদ্মাবতী। কিন্তু বৈবাহিক জীবন তাকে সংসারী করতে পারেনি।
একদিন রাতে সবার অগোচরে ঘর ছাড়েন লালন। পথে আধ্যাত্মিক গুরু সাঁই সিরাজের সান্নিধ্য পান তিনি। আবার মিলিত হওয়ার আশা ব্যক্ত করে তাকে বিদায় জানিয়ে এগিয়ে যান লালন।
কিন্তু রাস্তায় বসন্তে আক্রান্ত হন তিনি। পরে পথে এক নারী তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে ছেলে হিসেবে গ্রহণ করেন।
এদিকে কবিরাজ রামহরি গ্রামে রটিয়ে দেন- লালন ফকিরের মৃত্যু হয়েছে। এক পর্যায়ে ওই কবিরাজের নজর পড়ে লালনের তরুণী স্ত্রীর ওপর। তাকে পেতে নানা ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠেন তিনি।
চিকিত্সায় ভালো হয়ে নিজ গ্রামে বাড়িতে ফিরে যান গৃহ ত্যাগী লালন। কিন্তু রামহরি কবিরাজ ও তার দলবল তাকে ‘যবনের’ ঘরে ভাত খাওয়ার ফলে জাত
গেছে-বলে লালনকে একঘরে করে সূর্য ওঠার আগেই গ্রাম ছাড়ার নির্দেশ দেয়।
এমনই গল্প নিয়ে ‘লালন ফকির ও সাঁই সিরাজী’ যাত্রাপালা মঞ্চস্থ করেছে আকাঙ্ক্ষা নাট্যগোষ্ঠী।
বুধবার (১১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ হলে গ্রাম বাংলার সংস্কৃতির এ যাত্রাপালা মঞ্চায়ন করা হয়।
আবহমান গ্রামীণ জনপদের সংস্কৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ যাত্রাপালা দেখতে শিল্পকলায় ছুটে আসেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার দর্শক।
অনেকে পরিবার-পরিজন ও বন্ধু-বান্ধব নিয়ে যাত্রাপালা উপভোগ করেন।
দেবেন্দ্রনাথের লেখা যাত্রাপালাটির পরিচালনা করেন মাহবুব উল আলম। আর সার্বিক নির্দেশনায় ছিলেন ভিকটর ড্যানিয়েল।
যাত্রাপালায় লালন ফকিরের চরিত্র নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলে ধরেন নাট্য শিল্পী শহিদুল হক এনা। আর সাঁইজির চরিত্রে অভিনয় করেন মাহবুবুল উল আলম।
এই দুই চরিত্রের পাশাপাশি লালনের মায়ের ভূমিকায় তপতী রায়ের অভিনয়ও দর্শকদের বিমোহিত করেছে। অন্যান্য চরিত্রের শিল্পীরাও তাদের পরিবেশনাও মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন।
লালন ফকিরের ঘর ও সংসার ত্যাগী জীবন, ধর্মের নামে তার ওপর নির্যাতন, গ্রাম থেকে বিতাড়িত করা, স্ত্রীর ওপর অত্যাচার ও ধর্মের নামে যেসব ব্যক্তি ব্যবসা করে তাদের মুখোশ উন্মোচন করা হয়েছে এ যাত্রাপালায়।
পাশাপাশি তুলে ধরা হয়েছে সেই সময়ের সমাজের নানা কুসংস্কার, সমাজপতিদের আধিপত্য ও প্রভাব ও কিছু বাস্তব ঘটনা।
‘লালন ফকির ও সাঁই সিরাজী’ আকাঙ্ক্ষা নাট্যগোষ্ঠীর ৫৫তম পরিবেশনা।
এর আগে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
যাত্রাপালার পরিচালক মাহবুবুল উল আলম বাংলানিউজকে বলেন, বাঙালির লোক সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতেই আমাদের এ প্রয়াস। দিন দিন সংস্কৃতির এসব অনুষঙ্গ হারিয়ে যাচ্ছে।
তাই নিজ নিজ জায়গা থেকে সবাইকে যাত্রাসহ আরও যেসব লোক সংস্কৃতি আছে সেগুলো টিকিয়ে রাখতে কাজ করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৩১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৫
এমআইকে/এমএ