ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

কবি ও রাজনীতিক মাহবুবুল হক শাকিলের সাক্ষাৎকার

সাক্ষাৎকার ~ শিল্প-সাহিত্য | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৬
কবি ও রাজনীতিক মাহবুবুল হক শাকিলের সাক্ষাৎকার মাহবুবুল হক শাকিল। ছবি : রেজওয়ানা চৌধুরী জিনিয়া

কবিতা ও রাজনীতি—উভয় মাধ্যমে সমানভাবে সরব, কবি ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিলের দ্বিতীয় কবিতার বই ‘মন খারাপের গাড়ি’ প্রকাশিত হবে এবারের বইমেলায়। এর আগে গত বছর বইমেলায় প্রকাশিত হয় তার প্রথম কবিতার বই ‘খেরোখাতার পাতা থেকে’।

প্রকাশিতব্য বই, কবিতা যাপন, রাজনীতি ও কবিতার পৃথক দুটি গণ্ডিতে নিজের ভারসাম্য স্থাপনসহ নানা বিষয়ে সম্প্রতি বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেন শাকিল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলানিউজের ফিচার সম্পাদক তানিম কবির
 

বইমেলায় তো আপনার কবিতার বই আসছে।
হ্যাঁ, বইমেলায় এবার আমার দ্বিতীয় কবিতার বই ‘মন খারাপের গাড়ি’ প্রকাশিত হচ্ছে। প্রকাশক গতবারের মতোই অন্বেষা। ৬ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তনে বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হবে।

৬ তারিখেই কেন? তারিখ কি আপনি বেছে নিয়েছেন?
হ্যাঁ এটা আমিই বেছে নিয়েছি। আমার প্রথম কবিতার বই বেরিয়েছিল গতবারের বইমেলায়, ৬  তারিখে। সে বইমেলাতেই, যেদিন আমার বইয়ের প্রকাশনা উৎসব, সেদিনই আমরা ঠিক করলাম বন্ধুবান্ধবরা বসে, যে, হোক না একটি নির্দিষ্ট দিনেই একটি নির্দিষ্ট বইয়ের আত্মপ্রকাশ। ঠিক এক বছর পরপর।

তাহলে আগামী বছরও ফেব্রুয়ারির ৬ তারিখ আপনার নতুন বই বেরুবে?
হ্যাঁ, যদি বেঁচে থাকি। কলম বা কিবোর্ড বেঁচে থাকে।

গত বছর প্রকাশিত বইয়ের নাম কী ছিল?
গত বছর প্রকাশিত আমার কবিতার বইয়ের নাম ছিল ‘খেরোখাতার পাতা থেকে’।

কবি পরিচয়ের বাইরেও আপনার আরেকটা বড় পরিচয় আপনার রাজনৈতিক পরিচয়। একইসঙ্গে এ দুই পরিচয়ের ভারসাম্য রক্ষা করেন কিভাবে?
আমার মনে হয় কবি পরিচয় বা রাজনৈতিক কর্মী পরিচয়ের মধ্যে খুব একটা ভেদরেখা নেই। রাজনীতি যেমন একটি শিল্পী, কবিতাও তেমনি একটি শিল্প। এবং কবিতা যদি হয় ব্যক্তিগত স্বপ্নের নির্মাণ, রাজনীতি হলো একটি সামগ্রিক বা সামষ্টিক স্বপ্নের নির্মাণ। স্বপ্নের সঙ্গে স্বপ্নের যেমন কোনো সংঘাত হয় না, কবি পরিচয়ের সঙ্গেও রাজনৈতিক পরিচয়ের কোনো সংঘাত হয় না।

কিন্তু কবিতায় শুধু ব্যক্তিগত স্বপ্নেরই নির্মাণ কেন, কবিতায় কি সামষ্টিক বা সামগ্রিক স্বপ্নের নির্মাণ হয় না?
আমি মনে করি কবিতা কখনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের হাতিয়ার না। আমি যদি আরেকটু খোলামেলা বলি, কবিতা হলো একধরনের দুঃখবোধ, আবেগ, প্রেম, অপ্রেম, বিরহ, চাওয়া, না পাওয়া—এই সমস্ত বিষয়গুলোর একটি সম্মিলিত যোগফল।

এটা কি তাহলে আপনার একটা চয়েজ। কারণ আমরা তো কবিতাকে আরো অনেক ধরনের দায়বদ্ধতা পূরণ করতেও দেখি।
কবিতা অবশ্যই রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা পূরণ করে। কিন্তু আপনি যেটা বললেন যে রাজনৈতিক হাতিয়ার, সেটার সঙ্গে আমি একমত নই। অবশ্যই যে শামসুর রাহমান প্রেমের কবিতা লেখেন, তিনিই আবার মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও কবিতা লেখেন, যে নির্মলেন্দু গুণ অমীমাংসিত রমণী খোঁজেন, সে তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড পরবর্তীসময়ে শেখ মুজিবের নামের ওপর কাঁদেন তার কবিতায়। এখানে কবিতা শিল্পের পর্যায়ে উত্তীর্ণ হয়, আমি যে কথাটি বলতে চেয়েছি যে, কবিতা কখনো রাজনৈতিক স্লোগান নয়। মোটকথা রাজনীতি যখন একটি সর্বোচ্চ মার্গে পৌঁছায়, রাজনৈতিক কবিতাও তখন একটি শিল্পিত জায়গায় পৌঁছায়।

রাজনৈতিক অনুসারীরা আপনার কবিপরিচয় নিয়ে মাতামাতি করবে এটা স্বাভাবিক, জানতে চাইছি কবি লেখক মহল আপনার রাজনৈতিক পরিচয়টাকে কিভাবে নেয়?
আমার মনে হয়েছে আমার কবিতার যে অডিয়েন্স, তারা আমার রাজনৈতিক পরিচয়কে ভুলে গিয়েই, হয়তো কারণে অকারণেই আমার কবিতাকে ভালোবাসেন। আমার কবিতা পড়েন। এবং কবি হিসেবে অবশ্যই তখন আমি ধন্য হই।

আপনার কবিতা লিখতে শুরু করার সময়টা জানতে চাইছি। কাদের কবিতা আপনাকে অনুপ্রাণিত করত?
লিখতে শুরু করার সময় বলতে.. লিখি ছোটবেলা থেকেই। ছোটবেলা বলতে স্কুল থেকেই। কিন্তু লেখা প্রকাশের বা ছাপানোর স্পর্ধা পাই নি। একসময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ওপর একটি কবিতা লিখেছিলাম, সেটিই আমার প্রথম মুদ্রিত কবিতা।

কত সালে?
এটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৮৫ সালে। তারপর দীর্ঘদিন বিরতি। কবিতা লিখতাম, কিন্তু সমস্ত কবিতাই আশ্রয় পেত আমার নিজস্ব শিয়রের নিচে।

এটা কি নিজের অসন্তুষ্টিজনিত কারণে?
ঠিক তা নয়। একধরনের পীড়াবোধ.. সংকোচ।

এই বিরতির পর আবার কবে কিভাবে প্রকাশিত হতে শুরু করলেন।
আমাদের প্রজন্ম যারা, আমরা কিন্তু ফেসবুক প্রজন্ম ছিলাম না। বা আমরা ইন্টারনেট প্রজন্ম না। এবং অতি অবশ্যই ফেসবুকে যখন এলাম, মাঝেমধ্যে মনে হলো যেসব কবিতা আমার শিয়রে থাকে, আমার দেরাজে থাকে, সেগুলো ফেসবুকেও থাকুক না! মন্দ কী? তারপর একসময় অনুরুদ্ধ হলাম বিশেষ একজনের দ্বারা, কবিতার বই প্রকাশের জন্য। এবং তারই ফলশ্রুতিতে গতবার প্রথম কবিতার বই প্রকাশ।

কবিদের একটা দশকওয়ারি পরিচয় থাকে যে অমুক আশির দশকের কবি তো তমুক নব্বইয়ের দশকের। সেই বিবেচনায় আপনাকে কোন দশকের কবি বলা যায়?
আমি দশকওয়ারি কবিবিচার কখনোই সমর্থন করি না। এবং যৌক্তিক মনে করি না। পাঠক যদি এখনো মোহিতলাল মজুমদারের কবিতা পড়ে মোহিত হন, তাহলে আপনি তাকে কোন দশকের কবি বলবেন? পাঠক যদি এখনো জসীম উদ্দীনের কবিতা পড়েন, বাংলা ভাষার পাঠকমাত্রই এখনো বিনয় মজুমদারের কবিতা পড়েন, এটা ২০১৬, বিনয়কে কোন দশকের কবি বলবেন?

আমরা এদের—বিনয় মজুমদারের এই দশকের পাঠক বলতে পারি। কিন্তু কবির উত্থানকাল বিবেচনায়..
কবিতার মূলত কোনো উত্থানকাল থাকে না। কবিতার আবেদন যতদিন থাকে, কবিতাও ততদিন থাকে।

কবি লেখকদের মধ্যে আপনার বন্ধুবান্ধব কারা, একদম যাদের সঙ্গে কবিতা নিয়েই আড্ডা দিতে বসেন, এমন দুয়েকজনের নাম জানতে চাইব।
ব্যস্ততার কারণে এই সৌভাগ্য আমার খুব কম হয়ে থাকে। তারপরও নিজেকে আমি খুব সৌভাগ্যমান মনে করি, বাংলাদেশের কবি লেখকদের মধ্যে অনেকেই আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ। কেউ আমার বয়সে বড়, সমসাময়িক, বা অনেকে ছোট—কিন্তু একটি জায়গায় সবার বয়স এক হয়ে যায়, কবিতায়। সেক্ষেত্রে অবশ্যই যার কথা বলতে হয়, দীর্ঘদিন আমরা একসাথে আড্ডা দিয়েছি, আপাদমস্তক কবি হিসেবে যাকে বোঝায়—কবি রফিক আজাদ, প্রয়াত কবি সিকদার আমিনুল হক, হাবীবুল্লাহ সিরাজী, শিহাব সরকার, জাহিদুল হক। আমাদের সমসাময়িকদের মধ্যে সরকার আমিন, শাহনাজ মুন্নী, মুজিব ইরম, শোয়াইব জিবরান। তার কাছাকাছি সময়ে, আপনি তানিম কবির, ওবায়েদ আকাশ। এবং, আমার রাজনৈতিক চিন্তা বা কাব্যভাষা নির্মাণের চিন্তাতেও ঠিক বিপরীত মেরুতে যার অবস্থান—ব্রাত্য রাইসু।

সবশেষ প্রশ্ন, একবাক্যে আপনার প্রিয় কবি কারা?
বাঙালি মানেই রবীন্দ্রনাথ শিখে বড় হয়। আমার প্রিয় কবি জীবনানন্দ দাশ, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, আর বিনয়, বিনয় এবং বিনয় (মজুমদার)।


 
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৬

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।