ঢাকা: সময়ের গর্ভে অনেক সৃষ্টিশীল মানুষ ও তার সৃষ্টিকর্ম হারিয়ে যায়। কিন্তু তিনি এবং তার সৃষ্টিকর্ম হারিয়ে যায়নি।
যার কথা বলা হচ্ছে, তিনি হলেন জগদ্বিখ্যাত নাট্যকার, কবি ও সাহিত্যিক উইলিয়াম শেকসপিয়র। ১৫৬৪ সালে ইংল্যান্ডে জন্ম নেওয়া এই মানুষটি ৫২ বছরের জীবনে ইংরেজি সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন।
শেকসপিয়রের বাবা ছিলেন ধনী ব্যবসায়ী। ছোটবেলা থেকে বাবার সঙ্গে অনেক মঞ্চ নাটক দেখার সুযোগ হয়েছে তার। কখনও ভালো লাগা, আবার কখনও নাটকের স্ক্রিপ্ট ও চিত্রায়নে দুর্বলতা দেখে খারাপও লেগেছে তার। সব মিলিয়ে সেই সময়ের প্রথা ভেঙে নিজের মতো নাটক বানানোর প্রত্যয় নিয়ে ছেলেবেলা থেকেই শুরু করেন নাটক লেখা ও পাশাপাশি অভিনয়।
গোটা জীবনে তার রচিত ৩৭টি নাটক, ১৫৪টি সনেট কবিতা অনবদ্য সৃষ্টি। তার বিখ্যাত হ্যামলেট, ওথেলো, অ্যাজ ইউ লাইক ইট, মার্সেন্ট অব ভেনিস, রোমিও অ্যান্ড জুলিয়ট, জুলিয়াস সিজার ও ম্যাকবেথ নাটকগুলো তাকে অমর করে রেখেছে। তবে তার নাটকে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রাজা-রানি, সেনাপতি, উজির-নাজিরসহ সমাজের উঁচু তলার মানুষের কথা চিত্রিত হয়েছে।
দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত মানুষের জীবনের গল্প, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, প্রেম-বিরহ-বিচ্ছেদ ঠাঁই পায়নি। এটাই তার সাহিত্যকর্মের বড় দুর্বলতা বলে মনে করা হয়। যাই হোক, মহাকালের তরীতে যে তিনি আজও দাপটের সঙ্গে টিকে আছেন, এটাই একজন সৃষ্টিশীল মানুষের বড় অর্জন।
শেকসপিয়ের দুর্বলতা চিহ্নিত করে পরবর্তীতে ক্রিস্টোফার মারলো তার নাটকে সাধারণ মানুষের গল্প তুলে আনেন। ফলে তিনিও ওই সময়ে জনপ্রিয় নাট্যকার বনে যান।
সম্প্রতি ব্রিটিশ কাউন্সিল পরিচালিত ‘অল দ্য ওয়ার্ল্ড’স’ নামে ১৫টি দেশের ১৮ হাজার মানুষের মধ্যে নতুন একটি জরিপ করা হয়েছে। জরিপের প্রতিবেদনে বলা হয়, শেকসপিয়র তার জন্মভূমির চেয়ে বেশি জনপ্রিয় বর্হিবিশ্বে। ইংল্যান্ডে তার জনপ্রিয়তা ৫৯ শতাংশ এবং অন্যান্য দেশে জনপ্রিয়তা ৬৫ শতাংশ। এর মধ্যে ভারতে ৮৯, মেক্সিকোতে ৮৮, ব্রাজিলে ৭৭, তুরস্কে ৭৯, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৭৩ শতাংশ জনপ্রিয়। এছাড়া ফ্রান্স ও জার্মানে যথাক্রমে ৫১ ও ৪৪ শতাংশ। তবে বাংলাদেশ এই জরিপ আওতার বাইরে ছিল।
আজ ২৩ এপ্রিল। বিখ্যাত নাট্যকারের মৃত্যুর ৪০০ বছর পূর্ণ হলো। এই দিনে ১৬১৬ সালে শেকসপিয়র না ফেরার দেশে চলে যান। আর পৃথিবীর তরীতে রেখে যান সোনালী ফসল। দিনটি উপলক্ষে তার সমাধিস্থলে ইংল্যান্ডের বিখ্যাত তারকারা ফুলেল শুভেচ্ছা জানাবেন, শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। তার রচিত নাটকও মঞ্চায়ন করা হবে বিভিন্ন স্থানে। এমন মহানাট্যকারের মহাপ্রয়াণ দিবসে নিঃসন্দেহে বিশ্ববাসী গভীর দরদ দিয়েই তাকে স্মরণ করবে।
বাংলাদেশ সময়: ০০০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৬
টিআই/আইএ