ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

চলে গেলেন ‘হাজার চুরাশির মা’ মহাশ্বেতা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৬
চলে গেলেন ‘হাজার চুরাশির মা’ মহাশ্বেতা মহাশ্বেতা দেবী

কলকাতা: শক্তিমান বাঙালি সাহিত্যিক ও মানবাধিকার আন্দোলন কর্মী মহাশ্বেতা দেবী আর নেই।  

বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯০ বছর।

শক্তিশালী এ লেখিকা বেশ কিছুদিন ধরেই শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতার সঙ্গে কিডনিতে সমস্যা দেখা দিয়েছিল তার।  
মহাশ্বেতা দেবীর মৃত্যুতে পশ্চিমবঙ্গের লেখক, শিল্পী মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই হাসপাতালে হাজির হতে থাকেন বিভিন্ন মহলের মানুষ।

১৯২৬ সালের ১৪ জানুয়ারি ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন মহাশ্বেতা দেবী। বাবা মনিষ ঘটকও ছিলেন ঔপন্যাসিক ও কবি। বিখ্যাত চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটক ছিলেন মহাশ্বেতা দেবীর কাকা। মা ধরিত্রী দেবীও ছিলেন একজন কবি ও সুলেখিকা।

ঢাকায় বিদ্যালয় স্তরের পড়াশোনা করেন মহাশ্বেতা। দেশ ভাগের পর ঘটক পরিবার পশ্চিমবঙ্গে চলে যান। সেখানে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি স্নাতক ডিগ্রি নেন। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
 
মহাশ্বেতা দেবী বিখ্যাত নাট্য ব্যক্তিত্ব বিজন ভট্টাচার্যের সঙ্গে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন। তবে ১৯৫৯ সালে বিজন ভট্টাচার্যের সঙ্গে তার বৈবাহিক বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এর মধ্যেই জন্ম হয় তাদের সন্তান নবারুণ ভট্টাচার্যের। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে নবারুণ ভট্টাচার্য একটি বিশেষ জায়গা দখল করে আছেন। ২০১৪ সালে নবারুণ ভট্টাচার্যের মৃত্যু হয়।

প্রথম জীবনে মহাশ্বেতা দেবী কলকাতার বিজয়গর কলেজে শিক্ষকতা করেন। এ সময় বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য লেখা লিখেছিলেন। লেখাগুলির মাধ্যমে ফুটে ওঠে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের আদিবাসীদের জীবন। সাঁওতাল, লোধ, শবর, দলিতদের জীবনের নানা দিক উঠে আসে মহাশ্বেতার লেখনীতে।

একাধিকবার মহাশ্বেতা দেবীর উপন্যাস নিয়ে তৈরি হয়েছে বিখ্যাত অনেক চলচ্চিত্র। এর মধ্যে হাজার চুরাশির মা, রুদালি, মাট্টি মায় অন্যতম।

ভারত সরকার তাকে পদ্মশ্রী ও পদ্মভূষণ সম্মানে সম্মানিত করেছে। এছাড়াও তিনি সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার, জ্ঞানপীঠ পুরস্কার এবং সাহিত্য ব্রহ্ম সম্মানে সম্মানিত হন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে বঙ্গবিভূষণ সম্মানেও সম্মানিত করে। মহাশ্বেতা দেবী অর্জন করেন আন্তর্জাতিক ‘র‌্যামন ম্যাগসেসে পুরস্কার’ও।
 
তিনি ১৯৬৪ সালে বিজয়গড় কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন। এই সময়েই মহাশ্বেতা দেবী একজন সাংবাদিক ও লেখিকা হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তীতে তিনি বিখ্যাত হন মূলত পশ্চিমবাংলার আদিবাসী ও নারীদের ওপর তার কাজের জন্য। তিনি বিভিন্ন লেখার মাধ্যমে বিভিন্ন আদিবাসী ও মেয়েদের উপর শোষণ- বঞ্চনার কথা তুলে ধরেছেন।  

তার উল্লেযোগ্য গ্রন্থগুলো হলো- অরণ্যের অধিকার, নৈঋতে মেঘ, অগ্নিগর্ভ, গণেশ মহিমা, চোট্টি মুণ্ডা, তীর, শালগিরার ডাকে, নীল ছবি, বন্দোবস্তী, আই সি পি ৩৭৫, সাম্প্রতিক, প্রতি চুয়ান্ন মিনিটে, মুখ, কৃষ্ণা দ্বাদশী, ৬ ডিসেম্বরের পর, বেনে বৌ, মিলুর জন্য, ঘোরানো সিঁড়ি, স্তনদায়িনী, লায়লী আশমানের আয়না, আঁধার মানিক, যাবজ্জীবন, শিকার পর্ব, অগ্নিগর্ভ, ব্রেস্ট গিভার, ডাস্ট অন দ্য রোড, আওয়ার ননভেজ কাউ, বাসাই টুডু, তিতু মীর, রুদালী, ঊনত্রিশ নম্বর ধারার আসামী, প্রস্থানপর্ব, ব্যাধখণ্ড।

মহাশ্বেতা দেবীর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ অন্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি জগতে আরও একটি নক্ষত্রের পতন হলো মহাশ্বেতা দেবীর মৃত্যুর মধ্যদিয়ে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৬
ভিএস/এমএমকে/এএ

** মহাশ্বেতার মৃত্যুতে শিল্পী-সাহিত্যিকদের শোক
**অভিভাবক হারালাম, মহাশ্বেতার মৃত্যুতে শোক মমতার

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।