ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

বাংলানিউজকে জয় গোস্বামী

সৃষ্টিকে আইনে বেঁধে ফেলেননি নজরুল

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৬
সৃষ্টিকে আইনে বেঁধে ফেলেননি নজরুল ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কলকাতা: বাংলাদেশের জাতীয় কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও তার সাহিত্যকর্ম নিয়ে একান্ত সাক্ষাতকারে নিজের ভাবনার কথা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন কবি জয় গোস্বামী।

বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) কলকাতার শিশির মঞ্চের ভিআইপি রুমে বসে তার নজরুল ভাবনা তুলে ধরেন তিনি।

শারীরিক সমস্যায় কিছুটা ক্লান্ত ছিলেন কবি। জানালেন, আজকাল বাড়ি থেকে বিশেষ একটা বের হন না। শরীরের ওজন কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৪৪ কেজিতে। তার মধ্যেও তিনি বেশ কিছুটা সময় দিলেন কাজী নজরুলকে নিয়ে তার ভাবনা প্রকাশ করার অনুরোধে।

শুধু নজরুলের সাহিত্যকর্ম ও জীবনই নয়, সমসাময়িক সমাজে তার সৃষ্টির প্রভাব সম্পর্কেও মতামত জানালেন কবি জয় গোস্বামী।

বাংলানিউজ: কাজী নজরুলের সৃষ্টি সম্পর্কে আপনার ভাবনা কি?
জয় গোস্বামী: কাজী নজরুলের কোনো ‘বিশ্বভারতী’ ছিল না। তিনি তার সৃষ্টিকে কোনো আইনের মাধ্যমে বেঁধে ফেলেননি। আপনি যদি মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের নজরুল গীতি শোনেন, যদি মান্না দের গান শোনেন বা অন্য কোনো শিল্পীর গান শোনেন তাহলে বুঝতে পারবেন, এক একজন শিল্পীর গায়কী এক এক রকম। এক একজন শিল্পী তার নিজের স্বত্ত্বাকে, নিজের ভাবনাকে মিশিয়েছেন তাদের গায়কীতে। এটাই নজরুল গীতির বিশেষত্ব। কাজী নজরুলের বিপুল সম্ভার যাদের হাতে পড়েছে, তারা নিজের মনের মতো করে ব্যবহার করেছেন।

বাংলানিউজ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চেয়ে এ বিষয়ে কাজী নজরুল কতোটা আলাদা?
জয় গোস্বামী: অনেকটাই।

বাংলানিউজ: কাজী নজরুলের কোন দিকটিকে আপনি বিশেষভাবে তুলে ধরতে চাইবেন?
জয় গোস্বামী: প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা! নজরুলের জীবনে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা ছিলো খুবই স্পষ্ট। কারণ, তার একের পর এক বই নিষিদ্ধ হওয়ার পরেও তিনি তার জায়গা থেকে একচুলও সরেননি। মনে রাখতে হবে, সেই সময় ব্রিটিশ শাসন চলছে। সরকার পরিচালিত হচ্ছিলো ইংল্যান্ডের রানির ইচ্ছা অনুসারে। এমনও হয়েছে যে, তার বই ছাপাখানা থেকে তুলে নিয়ে গেছে পুলিশ। আমরা সাধারণত একবার বই নিষিদ্ধ হলেই সতর্ক হই। কিন্তু তিনি কখনোই থেমে থাকেননি।

বাংলানিউজ: পশ্চিমবঙ্গে গড়ে ওঠা নজরুল একাডেমি ঠিক কি কাজ করছে?
জয় গোস্বামী: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চেয়েছিলেন, নজরুল চর্চা আরও বেশি করে ছড়িয়ে পড়ুক। পশ্চিমবঙ্গে নজরুল একাডেমি সেই কাজটাই করছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও চেয়েছিলেন, নজরুল চর্চা যেন শহরকেন্দ্রিক হয়ে না পড়ে। নজরুল একাডেমি সেদিকেও চেষ্টা চালাচ্ছে। ২১টি জেলায় কর্মশালা করেছে এ একাডেমি।

বাংলানিউজ: কাজী নজরুলের জন্মস্থান চুরুলিয়া। সেখানে নজরুলের ব্যবহৃত বেশ কিছু জিনিসপত্র আছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলো বিজ্ঞানসম্মতভাবে সংরক্ষিত নয়। একাডেমি এ বিষয়ে কিছু ভেবেছে?
জয় গোস্বামী: মনে রাখতে হবে, পশ্চিমবঙ্গে নজরুল একাডেমি কাজী নজরুলকে নিয়ে কাজ করা অনেক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এটি একটি। এ ধরনের কাজগুলো সব প্রতিষ্ঠান মিলে একসঙ্গে করলে ভালো হয়। আগামী দিনে নিশ্চয়ই হবে।

বাংলানিউজ: আর কবে বা কতোদিন বাদে জিনিসগুলো ভালোভাবে সংরক্ষণ করা হবে? এর মধ্যে এগুলো নষ্ট হয়ে যাবে না-কি?
জয় গোস্বামী: আপনার বক্তব্য আমি অনুভব করতে পারছি। কিন্তু এটা আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। আপনিও জানেন, এ প্রশ্ন কাকে করা উচিৎ। আপনি তাকে সামনে পাচ্ছেন না, তাই আমাকে প্রশ্নগুলো করছেন। আমাদের সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।

বাংলানিউজ: বাংলাদেশে নজরুলকে নিয়ে যেভাবে কাজ হচ্ছে তা নিয়ে আপনার ভাবনা কি?
জয় গোস্বামী: বাংলাদেশ যেভাবে কাজ করছে সেটা শিক্ষণীয়। অনেক ভালোভাবে কাজ হচ্ছে। অনেক গভীরে গিয়ে কাজ করছেন তারা। এজন্য তাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রাপ্য।

বাংলানিউজ: আমাদের সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
জয় গোস্বামী: আপনাদের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমস্ত মানুষকে আমার শুভেচ্ছা জানাই।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৬
ভিএস/জিপি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।