ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

কসোভোর অন্ধ বাঁশিওয়ালা (পর্ব-২)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৭
কসোভোর অন্ধ বাঁশিওয়ালা (পর্ব-২) কসোভোর অন্ধ বাঁশিওয়ালা

[পূর্ব প্রকাশের পর]
আর ওই যে আলেকজান্ডারের কথা বললাম, তার অবস্থান তো সর্বত্র। বিশেষত এই চত্বরে বিশাল এক স্তম্ভের চূড়োয় ঘোড়ায় চড়ে আসীন তিনি। সবাই তাকে গ্রিকবীর বললেও আদতে এই বীরের জন্ম কিন্তু হয়েছিলো মেসিডোনিয়াতেই।

মেসিডোনিয়াবাসীরা কিন্তু আরও একজনকে নিয়ে বেশ গর্বিত। নিজ দেশ থেকে বহুদূরের বিজনে গিয়ে নীল পাড় সাদা থানের শাড়ি গায়ে জড়িয়ে যিনি সারাটি জীবন ব্যয় করেছেন আর্তজনের সেবায়, যিনি বলে গেছেন "বহু জনের মুখে অন্ন তুলে দিতে না পার, অন্তত একজনের মুখে তো দাও", আমরা এই মহীয়সীকে মাদার তেরেসা হিসেবেই জানি।

গনহা এগ্নেস বহাইয়ু, পরবর্তীতে যিনি মাদার তেরেসা নামে সর্বজনবিদিত হন, জন্মেছিলেন কিন্তু এ চত্বরের খুব কাছেই এক বাড়িতে ১৯১০ সালে। ঠিক সেই বাড়িটিতে নয়, বরং ওপাড়ার এক কাছের বাড়িতে বানানো হয়েছে তার স্মরণে এক জাদুঘর। খুঁজে খুঁজে চলে এলাম সেই জাদুঘরে। ওপরের তলায় স্থান দেওয়া হয়েছে মাদারের জীবনের নানা স্মরণীয় আলোকচিত্র, ব্যবহার্য কিছু সামগ্রী।
কসোভো যুদ্ধে শহিদ এক বীরের ভাস্কর্য, প্রিস্টিনার রাজপথে
মাদারের জীবনের প্রথমার্ধের নানা ছবির মাঝে গত শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে স্কপিয়ের শহরের একখানা রূপকেও খুঁজে পেলাম। মেসিডোনিয়ানরা সিরিলিক হরফ ব্যবহার করলেও কনিষ্ঠ ভগ্নীর কাছে লেখা একটি পত্রে দেখলাম মাদার ইংরেজি বর্ণ ব্যবহার করে লিখেছেন, ঈশ্বরকে ভালোবাসো, নিজ প্রতিবেশীদের ভালোবাসো। ’ ২০১২ সালে মহাপ্রয়াণের আগে তিনি নব্বইয়ের দশকে দু’বার স্কপিয়ে এসেছিলেন প্রিয় মাতৃভূমিকে দর্শন করবার জন্যে, সেসবের বেশ কিছু আলোকচিত্রও সংরক্ষিত আছে এখানে।

আমি আবারও সেই বাঁধানো চত্বরটিতে ফিরে আসি। ডানধারের এক কোণে একটি পুরনো বইয়ের দোকান চোখে পড়ে, কৌতূহলী হয়ে সেদিকে পা বাড়াই। দোকানমালিক রোদের হাত থেকে বাঁচতে একটু দূরে ছাতার তলায় আশ্রয় নিয়েছেন। অ্যাডগার এলান পো, টিটো বা বাইজেনটাইন সাম্রাজ্যের উপর বেশকিছু রংচঙে মলাটের বই চোখে পড়লেও এর সবই লেখা সিরিলিক হরফে, তাই বেশ পছন্দ হলেও বইয়ের ভেতরটা পড়ে দেখবার সাধ্য হলো না।
১. নোবেল পুরস্কার হাতে মাদার তেরেসার মুহূর্ত- ২. মাদার তেরেসা জাদুঘরের সম্মুখ ভাগ- ৩. মাদারের ব্যবহৃত একটি নিরাভরণ খাট
রোদ ততক্ষণে আরও তেতে উঠে, প্রস্তর সেতুর কোণে একটি বালক প্রখর রোদে পুড়ে রক্তিম হয়ে খোল বাজায়, ছেলেটির কোলে দুটো ধাতব মুদ্রা রেখে আমি কিছুটা প্রাণ জুড়োবার জন্যে ভারদার নদীর ধারে পাথরে বাঁধানো ঘাটে গিয়ে বসি। এই নদীটি খরস্রোতা নয়, বেশ শীর্ণ, এমনকি এখান-ওখানে মাটি জেগে উঠে এটিকে দিয়েছে অনেকটা এক খালের রূপ। আমি হঠাৎ বাঁধারে প্রস্তর সেতুর নিচের অংশে ডুবন্ত কার যেন এক জোড়া হাত দেখতে পাই, তবে পরক্ষণেই বুঝে যাই খুবই চতুরতার সঙ্গে এক ভাস্কর্যকে জলের মাঝে ডুবিয়ে দেওয়া হয়েছে কেবল।

শুধু এই ভাস্কর্যটিই নয়, সারা মেসিডোনিয়া চত্বরটিকেই সাজানো হয়েছে নানা ভাস্কর্যে- তাদের মধ্যে রয়েছেন অটোমান শাসন থেকে মুক্তির আন্দোলনের সৈনিক ডামই গ্র’য়েভ, গিওরগি দেলচেভ কিংবা বাইজানটাইন সম্রাট জাস্তিনিয়ান। শুধু এই ভাস্কর্যগুলোই নয়, আশেপাশে অল্প দূরত্বের মাঝেই রয়েছে এদের জাতীয় জাদুঘর, নাট্যশালা, হলোকাস্ট জাদুঘর ইত্যাদি নানা কিছু। তবে স্বল্প পরিধির এ স্থানের মাঝে এতো সবকিছুর সম্মিলন আমার কাছে কেমন যেন একটু বেখাপ্পা লাগে।

চলবে....

বাংলাদেশ সময়: ১২৪৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৭
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।