ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

একঝাঁক কবিতা (শেষ পর্ব)

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৭
একঝাঁক কবিতা (শেষ পর্ব) একঝাঁক কবিতা

খোঁজ
পিয়াস সরদার


জানিস? এখন আমি মেঘের পানে চাই
তোর আঁচল ধোয়া জল
আর মিষ্টি জলের স্নান

আমায় ছুঁতে আসে ভিজতে গিয়ে
বনের ওপর বন পেরিয়ে
     মাঠের ওপর মাঠ........
 
তারপর সেই নদী—
সেই যে ... ছুটছে নিরবধি
তোর পায়ে ছোঁয়া জল
আর মিষ্টি গায়ের ঘ্রাণ
আমি খুঁজতে আসি, খুঁজতে গিয়ে
নদীর জলে ডুবতে গিয়ে
তোর চাতক চোখে চাই।
 
জানিস? এখন আমি ভাটির টানে ধাই
তোর আজলা ভরা সুখ
তোর সন্ধ্যা রাতের কেউ...
আমার প্রদীপ খানি ভাসিয়ে নিয়ে
জলের উপর জল পেরিয়ে
ঢেউয়ের উপর ঢেউ.....
 
তারপর সেই প্রেম...!
সেই যে দেখে এলাম
তোর গভীর চোখের ছল
আর মিষ্টি গায়ের ঘ্রাণ
আমি ডুবছি আবার ভাসতে গিয়ে
তোরই কাছে আসতে গিয়ে
মরছি অবিরল!
 
 
পাপ অপাপের কাব্য
এস.কে. বিজয়

 
দক্ষিণের জানালা ভরে
নরক রশ্মি নিঃশ্বাস খুলে
তোর ভেতর বাহির পরিপক্ব করে।


নশ্বর দেহে প্রেম দাগ কাটে,
বেওয়ারিশ করে অনুভূতির স্রোত
প্রতিকূলগামী হয় মস্তিষ্ক
ভেতর মানুষ ভিন্ন রূপে—
পুষ্পক স্তবক দেয় জড়দেহে।
পাপ হয় আগাম সূর্য,
স্বপ্ন হয় বিপদগ্রস্ত,
অবজ্ঞা রবে মিছিল হয়—
তোর প্রতিটি স্পন্দনে স্পন্দনে;
কণ্ঠে, সৃষ্টি ও স্রষ্টার ছলনা।
 
অবশেষে পাপ কুড়িয়ে—
অমৃতরস ভেবে; ছাটাই করিস সব স্বপ্ন।
 
 
খারাপ মানুষ চাই
সুখ সাহারা

 
আমি একটা খারাপ মানুষ খুঁজি
হিংস্র, দানব, রক্তচোষা, পাষণ্ড আর পাজি
একটা নষ্ট মানুষ খুঁজি
যার মন ভেঙেছে হাজার কোটিবার
যার হৃদয়খানি পিপাসাতে করছে হাহাকার।
যার চোখে শুধু আগুন করে খেলা
প্রতিশোধের রক্ত প্রদীপ জ্বলা
যার শিরায় শিরায় যুদ্ধ করার
তীব্র অঙ্গীকার!
বেপরোয়া, চঞ্চল আর শক্ত হাতের মুঠি,
একটা খারাপ মানুষ খুঁজি।
 
 
আত্মপীড়ন
অনুপম দাশ বাঁধন

 
হয়তো এমনই কোনো এক রাতে
অথবা দিনে,
জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে,
একাকী দ্বিধান্বিত মনে,
বসে বিবেকের মুখোমুখি—
হিসেবের খাতা খুলে
মৃত স্বপ্নের বিষাদ ভুলে
বিবেকের চোখে চোখ তুলে
বলব—
কিইবা নিয়ে যাচ্ছি যে,
হিসেব দিয়ে যেতে হবে?
 
বিবেক বলবে তবে—
তোমায় বদলে যেতেই হবে,
মায়াপুরীর স্বপ্ন তোমার
ভুলেই যেতে হবে।
 
হয়তো নাওনি কিছুই
পাওনি কিছুই,
চাওনি কিছুই নিজে
এতটুকুই সুখ খুঁজেছ বরিষণে ভিজে।
 
সেদিন হয়তো বলব আমি
স্বপ্ন ছিলো ঊর্ধ্বগামী,
ছিলো পাখির কলরব,
তাইতো আমি ভুলে
ছিলাম
মহৎ কর্ম সব।
 
 
ফিরে যাবো উৎসবে
আশরাফুল রূপক

 
একদিন চিলেকোঠা ছেড়ে খোলা আসমানের নিচে দাঁড়াবো,
যেখানে চলছে হাজার বছরের রং বাহারির উৎসব।
জমানো পাপ ধুয়ে মুছে বিলীন করে দেবো,
পবিত্র জলে ফরজ গোসলে।
পুরাতন বন্দর গুঁড়িয়ে দিয়ে নতুন বন্দর গড়বো,
সেই সব বন্দরে ওড়াবো জীবনের সব রঙিন ফানুস।
একদিন জীবনের জটিল ধাঁধার সমাধান দিয়ে দেবো,
সাহসী নারী-পুরুষের জীবন জয়ের মিছিলে শামিল হবো
 
 
সখী তোর তরে
শিরিন সুলতানা

 
সখি আর কত অভিমান
দিবস রজনী দিনমান
চক্ষু মেলিয়া
যাচিব প্রহর!
 
ভুলে আছি কাছাকাছি?
বন্ধু আমি রাখি মন
তোর সঙ্গ মাঝে আছে মন; মন আঙিনায়
স্মৃতিটুকু ধরি, আলিঙ্গন করি
এলে তবে মন মাঝে এই তবে বুঝি
 
স্বপ্ন বাঁধি
ভাবনা সখি ভাবনায়।
 
বন্ধু নও সখী বন্ধু ওরে
রাখিবো পরানে, পরানের তরে
সেই ভাবনাতে তোর মোর
আপন ভাবনায় কেবল নিজেরে খুঁজি।
 
 
প্রিয় আসমানী
মেহেদী হাসান তানভীর

 
রাতগুলো কি বলে শুনতে পাও?
সময়ের টিক-টক কি অর্থহীন?
কাজল ঘন রাত কি দৃষ্টিহীন?
বাতাসের প্রচ্ছদ কি কুয়াশা করবে বিলীন?
 
অনেকগুলো প্রশ্ন এসে দাঁড়ায় আয়নার সামনে
আমি-তুমি-প্রতিচ্ছবি থমকে আছি সময় বুকে ধরে
পৃথিবীজুড়ে বিশুদ্ধ অক্সিজেনের হাহাকার
অজানাই থাকে, জোয়ার-ভাটার যুদ্ধে কার হয় জয়, কার হার।
 
ঘুমহীন স্রোতের গল্প কানে আসে
কৃষ্ণ বাঁশরি নাবিকের কাছে অচেনা
প্রেমিকার তল পেটের নেশা উবে যায়
ফুলে উঠা ঢেউ লক্ষ্যবিন্দু আড়াল করে
তবু,
নাবিক ভাঙে জল, জলের পরে জল।
 
আজ,
অনেক যুগের পরে পৃথিবীর কাছে আমি এসেছি
অনেক যুগের পরে পৃথিবীর গন্ধ আমি পেয়েছি।
 
আসমানী,
তুমি কি আমার ফেলে আসা জল ছুঁয়েছো?
তুমি কি আমার আঁধারচিত্রে আলো জ্বেলেছো?
তুমি কি আমার ফেরার পথে আঁচল নেড়েছো?
তুমি কি আমার আগমনী সংকেত গেয়েছো?
 
 
কবি হতে পারিনি
আবু বকর তুষি

 
আমি বিরহে কাতর হতে চেয়েছিলাম!
কোন এক লোড শেডিংয়ের সন্ধ্যায়, তাই মগজের মাঝে রোপণ করেছিলাম কিছু নিষিদ্ধ অনুভূতি।
আমি ব্যথায় মুমূর্ষু হতে চেয়েছিলাম!
তোমার ধারালো নখের খামচির আদর তাই আমার শরীরে দাগ ফেলেনি, ফেলেছে মনে।
আমি তেষ্টায় ফেটে যেতে চেয়েছিলাম!
তাই নীল জ্যাকেটের দুই পকেটে আমার দুই হাত খুঁজে পেয়েছিলো আরও একটি মিষ্টি হাতের দুর্লভ উপস্থিতি।
আমি তীব্র বেদনায় নীল হতে চেয়েছিলাম।
তাই মগজের প্রবাহিত রক্তে প্যাথেড্রিনের মতো মিশিয়ে দিয়েছিলাম তোমার উষ্ণ চুম্বন।
আমি দ্রোহের আক্ষেপে ধনুকের মতো বাঁকা হতে চেয়েছিলাম।
তাই হাসি মুখে মেনে নিয়েছি তোমার সব উদ্দেশ্যহীন ছলনা।
আমি নির্মমভাবে হেরে যেতে চেয়েছিলাম!
তাই পার্কে বেঞ্চি আর নোংরা চায়ের কাপে চুমুকের ফাঁকে বার বার বলেছি ভালোবাসি, ভালোবাসি।
আমি অতৃপ্তির ছাঁচে নিজেকে ঢেলে কবি হতে চেয়েছিলাম।
তাই বুক পেতে দিয়েছিলাম, সূক্ষ্ম ও সূচালো অগ্র ছোড়ার অপেক্ষায়।
 
আমি জানতাম না,
কৃত্রিম বিরহে কবি হওয়া যায় না।
কবি হওয়ার লোভে ভালোবাসা যায় না।
ভালোবাসার মোহে অন্ধ কবিরা সেই কবেই লিখতে লিখতে সব কবিতা লিখে শেষ করে ফেলেছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৭
এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।