ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রকৃতির রং-রূপ সমৃদ্ধ করার প্রয়াস ‘অস্তিত্বের আখ্যান’

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৭
প্রকৃতির রং-রূপ সমৃদ্ধ করার প্রয়াস ‘অস্তিত্বের আখ্যান’ প্রদর্শনী ঘুরে দেখছেন দর্শনার্থী। ছবি-হোসাইন মোহাম্মদ সাগর

ঢাকা: গোসলের পর গ্রামের নারীরা তাদের শাড়ি মেলে দেন বাঁশের কঞ্চি দিয়ে তৈরি ঘরের বেড়ার সঙ্গে। আর সেই শাড়ির রংটাই শিল্পীর তুলির আঁচড়ে হয়ে গেলো এক দারুণ পেইন্টিং, নাম পড়লো বড্ড আদরের নামে!

শুধু কি শাড়ি? গ্রামের সবুজ ধানক্ষেত, হলুদ সরিষাক্ষেত, রাস্তার পাশের প্রশস্ত নদীটিরও রয়েছে এক জীবন্ত রঙিন রূপ। আর সেই রূপগুলোই রং-তুলিতে ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পী রেজা আসাদ আল হুদা অনুপম।

সেগুলো নিয়েই রাজধানীর ফ্রান্স কালচারাল সেন্টারে চলছে শিল্পীর প্রথম একক চিত্রকর্ম প্রদর্শনী অস্তিত্বের আখ্যান।

প্রদর্শনীর নামের প্রমাণ দিলো শিল্পীর ‘দেয়াল’ নামের চিত্রকর্মটি। কেমন যেন একটা বিমূর্ত ভাব ধরে আছে সে। চিত্রকর্মটি নিয়ে শিল্পীর সঙ্গে কথা হলে বলেন, একবার সোনারগাঁওয়ের পানাম সিটিতে গিয়ে আমি ওখানকার পুরনো দেয়ালগুলো আঙুলে ছুঁয়ে দেখেছিলাম। দেয়ালগুলো যেন অনেক ঘটনাপ্রবাহ আর যুগ-যুগান্তের কাহিনীর সাক্ষী। আর সব দেয়ালেই মিশে থাকে অনেক রং, অনেক গল্প। আমি মূলত সেটাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি এখানে, যেটা আমি আমার অনুভূতিতে পেয়েছি।

গ্যালারিতে প্রদর্শিত শিল্পকর্মঅনুভূতি এক ভনায়ক জিনিস, যেখানে থাকে বাস্তব আর পরাবাস্তবের মিশেল। ঠিক তেমনি এই শিল্পীর কাজেও দেখা যায় বিভিন্ন অবয়ব। তবে তা যেন নিরেট অবয়বসর্বস্ব নয়। বরং শিল্পী তার অবয়বগুলিকে নানাভাবে ভেঙেছেন। সঙ্গে যুক্ত করেছেন নানা অনুষঙ্গ। বৃক্ষ, পত্রপল্লব ও প্রকৃতির নানা ধরনের উপাদান। আর সেগুলির সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রকৃতিকে নানাভাবে অনুকরণের মাধ্যমে এক নতুন রঙে উপস্থাপন।

গ্যালারিতে প্রদর্শিত শিল্পকর্মশিল্পীও বললেন একই কথা। ‘মানুষ তো নতুন কিছু সৃষ্টি করতে পারে না, বরং অনুকরণ করে। ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ আর বৃত্তের বাইরে আদৌ কি যাওয়া সম্ভব কখনো! আমি ঠিক তাই। প্রকৃতিতে যেটা দেখি, সেটাই রঙের অনুকরণে ফুটিয়ে তুলি আমার ক্যানভাসে। আরও সহজ করে বললে, জীবন থেকে দেখা ও জানার অভিজ্ঞতার সঙ্গে প্রকৃতি থেকে নেওয়া বিষাদ, প্রেম আর ভালোলাগা আমার ছবির মূল বিষয়। আর এ বিষয়গুলোই ছবিতে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি মূর্ত ও বিমূর্তভাবে। ’ যোগ করেন শিল্পী।

একই সুরে যেন ঠোঁট মেলালেন প্রদর্শনী দেখতে আসা দর্শনার্থী আব্দুল বারী। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, অনেক গানের সুর কোনো শব্দ ছাড়াই যেন কিছু বলতে চাই, বোঝাতে চাই। এই শিল্পীর ছবিগুলোও যেন ঠিক তেমনই। যেন কত কথা বলার আছে, শুধু তা বুঝে নিতে হবে। তাছাড়া শিল্পীর শিল্পে তার অনুভূতিরও যেন বিশাল এক অংশ রয়েছে।

 নিজের শিল্পকর্মের সঙ্গে শিল্পীজীবনের ছোট্ট পরিসরে হাজারটা অনুভূতির ভিড়েও বিভিন্ন ভাবনা আমাদের ভাবায়। তার মধ্যদিয়ে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতরভাবে বৃহৎকে দেখা খুব সহজ কিছু নয়। অথচ ভালোলাগা আর ভালোবাসার মায়ায় শিল্পী রেজা আসাদ আল হুদা অনুপম সেই কঠিন কাজটিই খুব সহজ করে উপস্থাপন করেছেন তার চিত্রকর্মে। আর তা যেন প্রকৃতির রং-রূপকে আরো সুন্দর করে সমৃদ্ধ করার প্রয়াস।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত এই শিল্পীর চিত্রকর্মের প্রদর্শনী চলবে আগামী ৬ অক্টোবর পর্যন্ত। যেখানে স্থান পেয়েছে ২০১৫ থেকে ২০১৭ অবধি তিন বছরে আঁকা তার ২৪টি ছবি। ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেসের গ্যালারিতে দর্শকদের জন্য এ প্রদর্শনী উন্মুক্ত প্রতিদিন দুপুর ৩টা থেকে রাত ৯টা অবধি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৭
এইচএমএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।