ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

শুরু হলো চার দিনব্যাপী জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত উৎসব

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৭
 শুরু হলো চার দিনব্যাপী জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত উৎসব বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে চার দিনব্যাপী জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত উৎসবের উদ্বোধন। ছবি: হোসাইন মোহাম্মদ সাগর

ঢাকা: ‘তোমার গানের পদ্মবনে আবার ডাকো নিমন্ত্রণে/ তারই গোপন সুধাকণা আবার করাও পান,/ তারই রেণুর তিলকলেখা আমায় করো দান’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এভাবেই গভীর গহন গানে গানে, সুরে ও ছন্দে  বাঙালির প্রাণে-মনে-মননে সর্বোপরি একান্ত অস্তিত্বজুড়ে জড়িয়ে আছেন। ব্যাপ্ত হয়ে আছেন অলক্ষ্যে। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তার অজস্র সৃষ্টি দিয়ে বাঙালি জীবনে মিশে আছেন স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো। আর এই গুণী মানুষটিকে স্মরণ করে শুরু হলো চার দিনব্যাপী জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত উৎসব।

বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থার আয়োজনে বুধবার (২০ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে ২৯তম এ উৎসবের উদ্বোধন করেন শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার।

সমবেত কণ্ঠে ‘জাতীয় সঙ্গীত’ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।

এরপর সংস্থার শিল্পীরা সমবেত কণ্ঠে পরিবেশন করেন ‘ও আমার দেশের মাটি’ ও ‘সবারে করি আহ্বান’ শীর্ষক আরও দুটি গান। এ-দুটি গান পরিবেশন শেষে অতিথিদের নিয়ে মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুস্তফা মনোয়ার বলেন, গণতন্ত্র সঠিক পথে চালিত হচ্ছে কি না তা বোঝার একমাত্র পথ হলো সংস্কৃতি। তাই সংস্কৃতির যদি বিকাশ না ঘটে, তবে বুঝতে হবে গণতন্ত্র সঠিকভাবে চলছে না। শিল্প মানেই কষ্ট। আর ২৯ বছর ধরে কষ্টের এ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশ রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সংস্থা আজ এক বৃহৎ পরিসরে পা রেখেছে।

তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘অশান্তি যে আঘাত করে, তাই তো বীণা বাজে’। বীণা তো আদর করলে বাজবে না, তাকে আঘাত করতে হবে, তবেই না তা বাজবে। শিল্পও ঠিক তেমনই। এই আঘাত অশান্তি সহ্য করে এই সংস্থা রবীন্দ্রসঙ্গীত উৎসব করেছে। দেশের সকলকে জাগ্রত করেছে। সবাই বলে শিল্প এক প্রকার অস্ত্র। তবে শিল্পীর হাতে অস্ত্র থাকে না। থাকে একটা দুটো কাঠি। সোনার কাঠি, রুপোর কাঠি। সে কাঠি দিয়েই শিল্পী সুন্দরের ছবি আঁকেন।

পৌষের সন্ধ্যায় রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি বিভিন্ন আঙ্গিকের গান, নৃত্যনাট্য, নাটক ও কবিতা দিয়ে সাজানো আয়োজনে এরপরেই সংস্থা থেকে জানানো হয় গুণীজন সম্মাননা। এবারের উৎসবে সম্মাননা পাচ্ছেন শিল্পী হাশেম খান, বংশীবাদক গাজী আবদুল হাকিম ও সঙ্গীত পরিচালক দৌলতুর রহমান।

শিল্পী হাশেম খান স্মৃতিচারণ করে বলেন, ১৯৫৬ সাল থেকে বিভিন্নভাবে আমি সংস্কৃতিচর্চার সঙ্গে সংযুক্ত। আমার সঙ্গীতচর্চা করা না হলেও আমি সঙ্গীতপ্রিয় মানুষ। পিসি গোমেজ আমায় একটা হারমোনিয়াম দিয়েছিলেন, আমি সেটা নিয়ে মাঝে কিছুদিন চর্চাও করেছিলাম। তবে চারুকলায় শিক্ষকতা শুরু করার পর সেই চর্চা আর ধরে রাখা সম্ভব হয়নি।

রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে এ শিল্পী বলেন, রবীন্দ্রনাথের গান আমাদের মনের কথা। তিনি সরল ও সুন্দর করে আমাদের মনের ভাবটিই ফুটিয়ে তুলেছেন তার গানের মধ্য দিয়ে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সাজেদ আকবর। সভাপতিত্ব করেন সংস্থার সভাপতি তপন মাহমুদ।

উৎসবের দ্বিতীয় পর্যায়ে কবিরগুরুর গান ও কবিতা নিয়ে শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। সবশেষে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাটক ‘রথযাত্রা’ মঞ্চস্থ করে লোকনাট্য দল। নাটকটির নিদের্শনায় ছিলেন লিয়াকত আলী লাকী।

উৎসবে একক গান গেয়ে শোনান শিল্পী খন্দকার খাইরুজ্জামান কাইয়ুম, আজিজুর রহমান তুহিন, রানা সিংহ, টিপু চৌধুরী, প্রতীক এন্দ, উত্তম কুমার শর্মা, সুরাইয়া ফারাহ খান, ইয়াসমীন শফিক, প্রান্তিকা সরকার, রাবেয়া আখতার, সেলিনা হুদা, সীমা হুদা, নুসরাত জাহান সাথী, আঁখি হালদার, মিতা দে, সুমা রানী রায় প্রমুখ। আবৃত্তি করেন ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।

চারদিনের এ উৎসব চলবে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এবারের উৎসব উৎসর্গ করা হয়েছে সদ্যপ্রয়াত মেয়র আনিসুল হক, নায়করাজ রাজ্জাক, সঙ্গীতজ্ঞ সুধীন দাশ, অধ্যাপক-গবেষক করুণাময় গোস্বামী, শিল্পী আবদুল জব্বার, আবৃত্তিশিল্পী কাজী আরিফ, কণ্ঠশিল্পী বারী সিদ্দিকী, শিল্পী লাকী আখন্দ, অভিনেতা নাজমুল হুদা বাচ্চু ও নৃত্যজন রাহিজা খানম ঝুনুকে।

বাংলাদেশ সময়: ২১২৮, ডিসেম্বর ২০, ২০১৭

এইচএমএস/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।