ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

সরোদ-বেহালার যুগলবন্দি সুরের ব্যঞ্জনায় ব্যাকুল মনে ঝড়

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৭
সরোদ-বেহালার যুগলবন্দি সুরের ব্যঞ্জনায় ব্যাকুল মনে ঝড় সরোদ আর বেহালার যুগলবন্দির পরিবেশনে ঝড় তোলে ব্যাকুল মনে। ছবি: রাজীন চৌধুরী/ বাংলানিউজ

ঢাকা: ‘সরোদ বাজাতে জানলে বড় ভালো হতো/পুরুষ কিভাবে বাঁচে সেই শুধু জানে।.../সরোদ বাজাতে জানলে বড় ভালো হতো/ পুরুষ কিভাবে কাঁদে সেই শুধু জানে।’ সরোদ সুরের ব্যঞ্জনা বোঝাতে কবি পূর্ণেন্দু পত্রী রচিত এ ক’টি লাইনের মতোই ব্যাকুল মনে ঝড় তুলেছে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উৎসবের রাত। এ ঝড়ে দরদের উষ্ণতা ছড়িয়েছে বেহালার সুরও।

একাকিত্বের ব্যাকুলতা আর উঠে দাঁড়ানোর শক্তি যোগাতে শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) রাতে উচাঙ্গ সঙ্গীতের মঞ্চে সরোদ-বেহালা যেন একসঙ্গে উঠে এলো।

পাঁচ দিনব্যাপী বেঙ্গল উচ্চাঙ্গ সংগীত উৎসবের এই চতুর্থ রাতে সরোদ পরিবেশন করেন পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার।

তার সঙ্গে বেহালায় সুর মেলান ড. মাইশুর মঞ্জুনাথ।

পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার ও ড. মাইশুর মঞ্জুনাথ একসঙ্গে নিবেদন করেন রাগ সিমেন্দ্রমধ্যম। তাদের সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেন পণ্ডিত যোগেশ শামসি ও মৃদঙ্গমে ছিলেন অর্জুন কুমার।   পরিবেশনা শেষে শিল্পীদের হাতে উৎসব স্মারক তুলে দেওয়া হয়।

সরোদপ্রেমীরা মনে করেন, পৃথিবীর যাবতীয় প্রেমের সপ্তডিঙ্গা ডুবে গেলে প্রেমিকের যে যন্ত্রণা, জলতার চুড়িপরা হাতে তাকে একমাত্র সরোদের সুরই প্রকাশ করতে পারে। এ কথায়ই যেন কণ্ঠ মেলালেন উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত উৎসবে আসা সংগীতপ্রেমী রাফিউল ইসলাম।

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘সরোদ ভালো লাগে। গভীর রাতে আলো নিভিয়ে একাকি গান শোনার যে ব্যাকুলতা, তাতে সরোদের বিকল্প আর কিছু হতে পারে না। ’

আরেক সংগীতপ্রেমী সুহা সেনের কণ্ঠে ঝরে বেহালার প্রেম। তিনি বলেন, বেহালার সুর দরদের উষ্ণতা দেয়। নিজের ভেতরের মায়া, সচেতনতা আর সাহস ধারণ করার প্রধান উৎস বেহালার সুরেই খুঁজে পাওয়া যায়।

তার মতে, মানুষকে ধৈর্য্যশীল ও মস্তিষ্ককে সক্রিয় করা, স্মৃতিশক্তি ভালো রাখা, গভীরভাবে চিন্তা করার শক্তি দান, বিষণ্নতায় ভেঙে পড়া মানুষকে নতুন করে উঠে দাঁড়াতেও যেন বলে দেয় বেহালার সুর।

রাগ সংগীতে জনপ্রিয়তায় সেতারের পরই সরোদের স্থান। এর সুর সেতারের তুলনায় গভীর, মিষ্টি, অনুনাদী এবং কিছুটা অন্তর্ঘাতী। অন্যদিকে বেহালার সুর তীক্ষ্ম। তবে সে তীক্ষ্ম সুরই রেশ রেখে যায় মনের গভীরে। আর সরোদের সুরের রেশ থাকে একটু কম সময় ধরে। তবে সরোদের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো এ যন্ত্রটিতে ‘মীড়’ ফুটিয়ে তোলা যায় খুব ভালোভাবে। ‘মীড়’ ভারতবর্ষের রাগ সংগীতের এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। এক সুর থেকে দূরবর্তী আরেক সুরে গড়িয়ে যাওয়াকে উপমহাদেশীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের পরিভাষায় ‘মীড়’ বলে।

সংগীতপ্রেমী মেহরাজ হক বলছিলেন, বাদ্যযন্ত্রের ঝংকার তার সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছালে সমস্ত ব্যাকরণ যে নগণ্য হয়ে যায়, তাই যেন প্রমাণ করলো উৎসবের সরোদ আর বেহালা!

পরিবেশও যেন তাই বলছিলো। আঙুল যখনই যন্ত্র স্পর্শ করছে, তখনই অবর্ণনীয় সুরের মূর্ছনায় শ্রোতারা ভাসিয়ে দিয়েছেন অন্তরকে। তাইতো সরোদ আর বেহালার যুগলবন্দির সে পরিবেশনে গ্যালারির ১১ হাজার দর্শক স্তুতি গাইলেন একত্রে উঠে দাড়িয়ে মুহুর্মূহু করতালির সঙ্গে।

শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের রথি-মহারথিদের নিয়ে রাজধানীর আবাহনী মাঠে চলছে উপমহাদেশের অন্যতম বৃহত্তম এই শাস্ত্রীয় সঙ্গীত উৎসব। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এ উৎসব শেষ হবে শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) রাতে।

বাংলাদেশ সময়: ০২২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০১৭
এইচএমএস/এএসআর

** মনিপুরি, ভরতনাট্যম, কত্থক, শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের মহাযজ্ঞ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।