ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

সৎ ও শুদ্ধ কবিতার সন্ধানে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৯, ২০১৮
সৎ ও শুদ্ধ কবিতার সন্ধানে লাইব্রেরি ঘুরে ঘুরে কবিতার বই খুঁজছে তরুণী পাঠিকারা।

উনিশ-কুড়ি বছরের মেয়েটি পুরো লাইব্রেরি ঘুরে ঘুরে কবিতার বই খুঁজছে। হঠাৎ একটি বই হাতে নিয়ে ওর মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বইটির নাম ‘দূরের হাওয়া: বাংলা অনুবাদে ২০০ বিশ্বকবিতা’, ভূমিকা ও অনুবাদ জুয়েল মাজহার।

আমি অবাক হয়ে উচ্ছল মেয়েটিকে দেখছি আর ভাবছি, ‘কবিতার পাঠক নেই’ বলে যে কথাটি প্রায়শই বলা হয়, তা ভুল।  সৎ ও শুদ্ধ কবিতার জন্য পাঠক এখনও তৃষ্ণার্ত।

 গভীর ও কষ্টকর অনুসন্ধানের ভেতর দিয়ে হলেও নিবিষ্ট পাঠক সন্ধান করতে চায় কবিতার মায়াময় রূপ-লাবণ্য।  খুঁজে খুঁজে বের করতে চায় হৃদয়স্পর্শী আবেগ ও অনুভূতির কথামালা।  কবিতার জন্য পাঠক এখনও উন্মুখ।

চট্টগ্রামের এক বইঘরে দেখা পাওয়া আমার অচেনা এই তরুণী পাঠিকাটির নাম অনিন্দিতা দত্ত।  হাজি মুহাম্মদ মুহসীন কলেজের ইংরেজি বিভাগের স্মাতকোত্তর শ্রেণীর ছাত্রীটির কাছে সাহিত্য ও নন্দনতত্ত্ব অনুধাবণের অন্যতম মাধ্যম কবিতা এবং সেটি শুধু বাংলা ভাষার কবিতাই নয়, বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা নানা দেশের নানা ভাষার কবিতা।

বিশ্বের নানা ভাষায় ও শৈলীতে কবিতার যে অপূর্ব চিত্রকল্প অঙ্কিত হয়েছে এবং হচ্ছে, এগুলোর মর্মার্থ বোঝা গেলে বৈশ্বিক কবিতার সাথে বাংলা কবিতার একটি তুলনা সম্ভব।  পরিশ্রমী পাঠক নানা দেশের বিভিন্ন ভাষার হাত ধরে কবিতার সেই আনন্দধ্বনিটিই শুনতে চায়।  

বইয়ের দোকানেই দেখা হলো বাংলার অধ্যাপক মহি মুহাম্মদের সঙ্গে।  ‘কফিনের উইলি’ নামে সদ্যই তাঁর একটি উপন্যাস বের করেছে অবসর প্রকাশনী।  চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা উপন্যাসে নানা উপজীবিকার জীবন ও বৃত্তি নিয়ে পিএইচডি পর্যায়ে গবেষণা করছেন তিনি।  কাজটি সাহিত্য ও সমাজতত্ত্বের সমন্বয়।  মূলত কথাশিল্পের লোক হলেও তাঁর পক্ষপাত কবিতার দিকেই।  কারণ, কবিতা শাশ্বত ও অনিবার।  কবিতার আবেদন আবহমান ও চিরায়ত। বাংলার অধ্যাপক মহি মুহাম্মদের সঙ্গে অনিন্দিতা দত্ত। পৌষ বিকেলের শীতার্ত প্রতিবেশ মুছে পুঞ্জীভূত গ্রন্থের উষ্ণতায় চারপাশ সজীব ও আলোকময় হয়ে উঠলে টের পাই পাঠের সীমানা অতলান্তিক। অসীমান্তিক তাঁর পরিসীমা।  বিশ্বের কত বই, কত লেখক এখনও অপঠিত ও অনাস্বাদিত রয়ে গেল।  অথচ ভুবনময় ছড়িয়ে রয়েছে সাহিত্যের কতো মণি ও মুক্তা।  বহমান নদীর মতোই প্রবহমান রয়েছে কবিতার কলস্বর।  

যদি কখনো পৃথিবীর মানুষ ভাষাহীন, মূক ও বধির না হয় এবং স্বর ও ব্যঞ্জনধ্বনিগুলো জাগর থাকে, তাহলে সৎ ও শুদ্ধ কবিতার অনুসন্ধান অব্যাহত থাকবেই।  কবিতার তৃষ্ণা মানুষের সমান্তরালে জীবন্ত থাকবে কাল থেকে কালান্তরে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০১৮
এমপি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।