ঢাকা, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

মরণ রে তুঁহু মম শ্যাম সমান | তানিয়া চক্রবর্তী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫১০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৮
মরণ রে তুঁহু মম শ্যাম সমান | তানিয়া চক্রবর্তী মরণ রে তুঁহু মম শ্যাম সমান | তানিয়া চক্রবর্তী

মৃত্যু তো আসবেই, চাইলেও না চাইলেও। চাওয়া আর না চাওয়া দু’জনের মিউচুয়্যাল সমার্থক মৃত্যু। সময় নির্ধারিত নয় ফলে এই জীবন খেলায় ভরপুর সাসপেন্স সে রাখতে জানে।

জন্ম যেমন ক্ষণ জানে, জানান দেয় আসার কথা ফলে সতর্ক থাকা যায়। মৃত্যু কিন্তু খুব চালাক সে এসবে নেই।

আচ্ছা যারা আত্মহত্যা করে তারা কী জীবনের কাছে হেরে যায়? কিন্তু সে যদি জেতা-হারার খেলার কথা নাই ভাবে, কেবল যদি পরিশ্রান্ত হয় জীবনের কাছে, যে প্রাণ সে এনেছে তাকে সে নিজেই আর বহন করতে না পারে। আমরা কাজের ক্ষেত্রেও তো স্বেচ্ছা অবসর নিয়ে থাকি। মৃত্যুর অধিকারে আমরা অধিকারী নই তাই লুকিয়ে জীবনকে বিপর্যস্ত করে মানুষকে পৃথিবী ছাড়তে হয়। ফলস্বরুপই বোধ হয় ইউথেনেশিয়া বা মার্সি কিলিং এর আগমন হতে শুরু করে। যাই হোক, এই প্রসঙ্গে আমরা আবার পরে কখনও আসব। এখানে প্রধানত সেইসব মানুষদের নিয়ে আলোচনা করব যাদের জীবন দেখার পদ্ধতি একটু আলাদা অর্থাৎ জীবনকে যারা সৃষ্টির মাধুর্যে ভরিয়ে রেখেছেন তারাও মৃত্যুকে সময়ের আগে আসতে বাধ্য করেছেন! কেন করেছেন? তারা একটা নিজস্ব পৃথিবীতে আলোকিত এই আধিপত্যে কোনো প্রতিবন্ধকতাই তারা মেনে নিতে পারেননি। তাই বোধ হয় এই পথ বেছে নিয়েছেন তারা। বিশিষ্ট মার্কিন কার্টুনিস্ট জ্যাকসন যিনি জন্মেছিলেন ১৯৪১ সালের ১৫ মে। ৬৫ বছর বয়সে যখন তিনি জানতে পারেন তার প্রস্টেটে ক্যান্সার ধরা পড়েছে তখন তিনি আত্মহত্যা করেন। এরপর আসা যাক র‌্যালফ বার্টনের কথায়, মার্কিন এই কার্টুনিস্ট সেলিব্রিটিদের চিত্র এঁকে বিখ্যাত হয়েছিলেন কিন্তু মাত্র ৩৯ বছর বয়সে তিনি তার পেন্টহাউসে আত্মহত্যা করেন নিজেই নিজেকে গুলিবিদ্ধ করে। তিনি তার সুইসাইড নোটে লিখেছিলেন, “যাকে ভালোবেসেছি তাকে হারিয়েছি”। আরও লিখেছেন, “আমি সামান্য কষ্ট পেয়েছি, প্রচুর বন্ধু ও সাফল্য পেয়েছি, প্রচুর দেশে ঘুরেছি কিন্তু এক স্ত্রী থেকে আরেক স্ত্রীর কাছে, এক ঘর থেকে আরেক ঘরে যেতে আর ২৪ ঘণ্টা নতুন সৃষ্টির অন্বেষণে আমি হতাশাগ্রস্ত”। মরণ রে তুঁহু মম শ্যাম সমান | তানিয়া চক্রবর্তী

হারমান ব্রুড (১৯৪৬-২০০১) যাকে দিয়েই “রক এন রোল স্টার” কথাটার পর্যায় আসে। ১৯৭০/১৯৮০ সালে চূড়ান্ত বাণিজ্যিক সফলতা পেয়েছিল তার সঙ্গীত। যদিও ড্রাগ আর মদের নেশায় তিনি নিমজ্জিত ছিলেন, পরে সেটা সংযমে রাখতে না পেরে ৫৪ বছর বয়সে হিলটন হোটেল থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন এবং তার সুইসাইড নোটে লিখে যান, “পার্টি অন, আমি তোমাদের দেখতে পাবই”।

শাকিব জালালি এই পাকিস্তানি লেখক আলিগড়ের বাসিন্দা। উর্দু এই কবি মাত্র ৩২ বছর বয়সে নিজেকে সরিয়ে নেন পৃথিবীর যাবতীয় আলো থেকে। যখন ১৯৪৭ সাল তখন তার বয়স মাত্র পনেরো, তখন থেকে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন।

জন প্যাট্রিক এই বিশিষ্ট নাট্যকার, তার অনবদ্য সব নাটকের স্ক্রিপ্ট লিখতে লিখতে কখন ফিল্মের স্ক্রিপ্ট রাইটার হয়ে গেলেন। যাই হোক, জীবনের সব সাফল্যমণ্ডিত পর্বের পরও প্যাট্রিককে তার ঘরে প্লাস্টিকে তার মাথা আবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যাবে, ৯০ বছরে বয়সে জীবনের এই মৃত্যুকে তিনি চেয়েছিলেন।

অগাস্টিনা অ্যান্ড্রেড জেনারেশন ১৯৮০ সালের দিকে সবচেয়ে প্রশংসা পান। বিবাহিত জীবনের চূড়ান্ত দ্বিধা, স্বামীর পলিগ্যামি স্বভাব তাকে জীবনবিমুখ করে দেয়। তিনি তার সন্তান রেখেই আত্মহত্যা করেন।

ইউথেনেশিয়া এরপরে মানুষের জীবনের বোধ করি অপরিহার্য বিষয় না হলেও বিষয় হয়ে উঠতে থাকে। তারা কেউ শহীদ হননি কিন্তু মৃত্যু তাদের কাছে অসময়ে এসেছে। তারাই তাকে আহ্বান করেছেন। শুধুই কী মানসিক বিকার, যন্ত্রণা! না তা নয়, আসলে জীবন একটা রূপকের হেলদোল তার মাত্রা বিভিন্ন ধাত্রে ভিন্ন। সেখানে জীবনকে জীবন বলা বা মৃত্যুকে মৃত্যু বলা খুব সহজতর নয়। ইচ্ছামৃত্যু বা মার্সি কিলিং নিয়ে এর পরেরদিন কথা বলব।

ক্রমশ...

বাংলাদেশ সময়: ১১০৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৮
এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।