ঢাকা, মঙ্গলবার, ৪ ভাদ্র ১৪৩২, ১৯ আগস্ট ২০২৫, ২৪ সফর ১৪৪৭

শিল্প-সাহিত্য

নিরন্তর চাহিদা লোকজ সংস্কৃতির বইয়ে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:২৭, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৮
নিরন্তর চাহিদা লোকজ সংস্কৃতির বইয়ে বইমেলায় লোকসংস্কৃতি ‍বিষয়ক বই দেখছেন পাঠক-ছবি-সুমন শেখ

অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: ‘বারো মাসে তের পার্বণ’ প্রবাদ দিয়ে উৎসবমুখর বাঙালি জাতির মৌলিক পরিচয় ফুটে ওঠে। জমি চাষ থেকে শুরু করে ঘরে ফসল তোলা পর্যন্ত নানা ধরনের লোকাচার আছে বাঙালির। পরতে পরতে জড়িয়ে আছে বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান। তার কথা আমরা সাহিত্যে পায় নানাভাবে।

লোকসংস্কৃতি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় ও সামাজিক বিশ্বাস ও আচার-আচরণ, জীবনযাপন প্রণালী, চিত্তবিনোদনের উপায় ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে এ সংস্কৃতি। এটা সম্পূর্ণই একটি জাতির নিজস্ব সংস্কৃতি।

দীর্ঘকাল ধরে গড়ে ওঠা এই সংস্কৃতি তাদের প্রকৃত পরিচয় বহন করে। প্রাকৃতিক পরিবেশে বসবাসরত অক্ষরজ্ঞানহীন ও ঐতিহ্যানুসারী বৃহত্তর গ্রামীণ জনসমষ্টিকে ‘লোক’ বলে অভিহিত করা হয়।

লোকজ এসব বিষয়কে ধারণ করে চিরন্তন বাংলায় রচিত হয়েছে গল্প, কবিতা, গান, নাটক, ছড়া। রয়েছে লোকজ সংস্কৃতির ইতিহাস। পাশাপাশি সাধক বাউলদের জীবনী, দর্শন, কর্ম নিয়েও লেখালেখি চলছে অবিরাম। মাটির গন্ধমাখা ও শেকড়সন্ধানী এসব সৃষ্টিকর্ম, বই মানুষকে টানেও খুব। তবে অন্য বইয়ের তুলনায় লোকজ ধারার বইয়ের কাটতি মেলায় কম। প্রকাশকরা জানালেন, মেলায় কম হলেও এই ধরনের বইয়ের পাঠক সারা বছর পাওয়া যায়। এমনকি বছরের নানা সময়ে লোকজ ধারার বই প্রকাশও হয়।

লোকজ ধারার বইয়ের পাঠক ও কাটতি নিয়ে জানতে চাইলে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ও লোক সংস্কৃতি ও পল্লিসাহিত্য গবেষক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান  বলেন, লোকজ ধারার বইয়ের পাঠক সব শ্রেণির মানুষ। এ ধারার বইয়ের কাটতিও বেশ ভালো। বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত লোকজ ধারার বইয়ের পাঠক দেশে যেমন, তার চেয়ে বেশি ভারতে। বিশেষ করে আমাদের লোকজ সংস্কৃতির ইতিহাসের বইগুলো দেখে ওরা রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করেছে।

বাংলা একাডেমির জনসংযোগ ও সমন্বয় উপবিভাগ থেকে গ্রন্থমেলায় আসা নতুন বইয়ের যে ক্যাটাগরি করা হয়, তাতে লোকজ সাহিত্য নামে কেনো বিভাগ নেই। তাই মেলায় এ ধারার কী পরিমাণ বই প্রকাশ হয়েছে, তার সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে মেলা ঘুরে জানা গেছে, লোকজ বিষয়ক ১৫টির বেশি নতুন বই প্রকাশ হয়েছে।

এগুলোর মধ্যে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশ হয়েছে সালাউদ্দীন আইয়ুব রচিত দক্ষিণারঞ্জন মিত্রের ‘রূপকথা: আনন্দলোক ও মতাদর্শ’, ইউসুফ হাসান অর্কের ‘বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী নাট্য পালাগান: আদিক বিচার ও বর্ণনাকারীর অবস্থান অনুসন্ধান’। বাংলা একাডেমি থেকে এসেছে এ বিষয়ে ইংরেজি গ্রন্থ ‘সোশ্যাল চেঞ্জ অ্যান্ড ফোকলোর’। বইটির প্রধান সম্পাদক শামসুজ্জামান খান এবং সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ ও শাহিদা খাতুন।

অন্বেষা প্রকাশন থেকে এসেছে মতনোজ বিকাশ দেবরায় রচিত ‘শ্রী নরোত্তম দাস ঠাকুরের পদ ও পদাবলী’ ও মোহাম্মদ শেখ সাদী রচিত ‘লোকসাধক মনোমোহন দত্ত ও মলয়াসঙ্গীত; ঘরোয়া থেকে মুহম্মদ আকবরের সম্পাদনায় ‘উকিল মুন্সি: প্রামাণ্য পাঠের সন্ধানে’ ও শহীদুল্লাহ ফরায়জীর ‘চন্দ্র সূর্য যত বড় দুঃখ তার সমান’; শোভা প্রকাশ থেকে এসেছে আবু ইসহাক হোসেনের ‘বাংলা লোকগান’ ও ড. মন্টু বিশ্বাসের ‘লোক সংস্কৃতি নানা দৃষ্টিতে; চারুলিপি এনেছে আমিনুর রহমান সুলতানের ‘লোকগানের কবিতা’; পাঞ্জেরী এনেছে শাকুর মজিদের নাটকের বই ‘হাছনজানের রাজা’, কাকলী এনেছে সফিয়ার রহমানের ‘গ্রামবাংলার লোকরস’, অনিন্দ্য এনেছে মোহাম্মদ সা’দাত আলীর ‘নরসিংদীর লোকজ ঐতিহ্য ভাষা ও সংস্কৃতি’ ও মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ পাঠানের ‘নরসিংদীর লোককবি’, আবিষ্কার এনেছে সঞ্জয় সরকারের ‘নেত্রকোনার লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতি’।

লোকজ ধারার এ ধরনের কাজগুলো করতে পেরে বেশ আনন্দিত বাংলা একাডেমি।  

অন্বেষা প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী শাহাদাত হোসেন এসব বই সম্পর্কে বলেন, লোকজ ধারার বইয়ের কাটতি মেলায় কিছুটা কম। তবে এ বইগুলো সারা বছরই বিক্রি হয়। পাশাপাশি এ ধরনের বই একটি প্রকাশনার মর্যাদা অনেকখানি বাড়িয়ে দেয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৮
এইচএমএস/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।