ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

চারুকলার বকুলতলায় শরৎ আয়োজনের নকশি মাঠ

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৮
চারুকলার বকুলতলায় শরৎ আয়োজনের নকশি মাঠ চারুকলার বকুলতলায় শরৎ বন্দনা-ছবি-বাংলানিউজ

ঢাকা: বর্ষ পরিক্রমায় প্রকৃতির বুকে ঠাঁই নেয় শরতের কাশফুল আর নীল আকাশ। প্রকৃতি শনিবার (১৩ অক্টোবর) সকালে যেন তাই মনে করিয়ে দিলো। শরতের শুভ্র মেঘের আনাগোনার আগে সকালবেলার এক পশলা বৃষ্টি ভিজিয়ে দিয়ে গেল বকুল পাতার নিচে মাথার উপর হাতের ছাউনি দিয়ে রাখা সবাইকে। সে বৃষ্টি শরতের মতোই কম-বেশি মুগ্ধতা ছড়ালো প্রকৃতিপ্রেমীদের মনে। আর সকালের বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া এ ঋতু নিয়ে শরৎ উৎসবের আয়োজন করেছে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী।

শনিবার (১৩ অক্টোবর) সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় চলছে দিনব্যাপী শরৎ উৎসব। সকালের বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে এ উৎসব দারুণ জমে উঠেছে নাচ, গান আর শরৎকথনের মধ্য দিয়ে।

সকালে শিল্পী মো. নুরুল হকের যন্ত্রসঙ্গীত ‘সন্তুর’ পরিবেশনের মধ্যদিয়ে ‘শরৎ উৎসব ১৪২৫’ এর শুভ সূচনা হয়। উৎসবে শরৎকথন পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান।

তিনি বলেন, আমরা যে বলি, আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য; সেটির মধ্যে শরৎ একটি শক্তিশালী অনুষঙ্গ। মানুষের হৃদয়ের যে প্রশস্ততা, শরৎ সেখানে গভীরভাবে প্রভাব বিস্তার করে আছে। মানস কাঠামোতে, জীবনাচারে বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে আসে শরতের দুর্গোৎসব। শরৎ সেখানে অনেক গ্রহণীয়। তাই শুধু আনন্দ-উৎসবে নয়, শরতসহ সব ঋতুবৈচিত্র্যের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে আমাদের উদ্যোগী হতে হবে। বাঙালির মানস কাঠামোতে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ ঘটাতে হবে।

এসময় শরৎ উৎসবের তাৎপর্য নিয়ে আরও কথা বলেন সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সহ-সভাপতি ড. নিগার চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী ‍সুইট।

এর আগে সন্তুর পরিবেশনায় শুরু হয় উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। পরে একক সঙ্গীত পর্বে মহাদেব ঘোষ গেয়ে শোনান রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘অমল ধবল পালে’, শিল্পী অনিমা রায় শোনান রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘আমার রাত পোহালো ও দেখো দেখো সুখতারা’, সুমনা মজুমদার শোনান নজরুলসঙ্গীত ‘ভোরের ঝিলের জলে শালুক পদ্ম তোলে’, সঞ্জয় কবিরাজ শোনান নজরুল সঙ্গীত ‘শিউলি ফুল দোলে’ এবং বিমান চন্দ্র বিশ্বাস শোনান ‘ও আকাশ বল আমারে’।

দলীয় সঙ্গীত পর্বে রবীন্দ্রসংগীত ‘মেঘের কোলে রোদ হেসেছে’, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী শোনায় নজরুল সঙ্গীত ‘আজি শারদ প্রাতে’, ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী শোনায় ‘আজও আছে একতারা আর নকশি কাঁথার মাঠ’, বহ্নিশিখা শোনায় ‘বিশ্ব সাথে জেগে যেথায় বিহারো’।

শরৎ মানে নদীর চরে আর দু'পারের বিস্তীর্ণ বালুকাবেলায় বাতাসে ঢেউ খেলানো শুভ্র কাশফুলের নৃত্য। কবিতার মতো সুন্দর শিশিরসিক্ত ঘাস ও নতুন ধানের মন মাতানো গন্ধ। তাইতো এ উৎসবে বাদ পড়ে না আবৃত্তিও। এ পর্বে একক কণ্ঠে আবৃত্তি করেন নায়লা তারান্নুম চৌধুরী কাকলী। তিনি শোনান কাজী নজরুল ইসলামের ‘বাংলাদেশ– নম নম নম’ কবিতাটি।

এরপর দলীয় নৃত্য পর্বে সালমা মুন্নির পরিচালনায় দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যাক্ষ, অনিক বসুর পরিচালনায় নৃত্য পরিবেশন করে স্পন্দন, নাঈম হাসান সুজার পরিচালনায় নৃত্যজন, ফারহানা চৌধুরী বেবীর পরিচালনায় বাফা দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে। পশ্চিমবঙ্গের হালিশহর থেকে আগত ‘ছন্দে ছন্দে’ নৃত্য দলের বিশেষ পরিবেশনা ছিল শরৎ উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ।

উৎসবে বিকেলের পর্বে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন স্বভূমি লেখক শিল্পী কেন্দ্র, গীত শতদল, সমন্বয়, পঞ্চভাস্বর, উজান। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করবে কণ্ঠশীলন, ঢাকা স্বরকল্পন ও কল্পরেখা। একক আবৃত্তি পরিবেশন করবেন রেজীনা ওয়ালী লীনা, ফয়জুল আলম পাপ্পু, মাসুদুজ্জামান, আহসান উল্লাহ তমাল, আজিজুল বাশার মাসুম ও তামান্না সারোয়ার নীপা। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করবে আঙ্গীকাম, নটরাজ, স্বপ্ন বিকাশ কলা কেন্দ্র,  ঘাসফুল নদী শিল্পী গোষ্ঠী। একক সঙ্গীত পরিবেশন করবেন মীরা মণ্ডল, ফেরদৌসী কাকলী, রত্না সরকার, নবনীতা জাইদ চৌধুরী অনন্যা, আবিদা রহমান সেতু, শিমুল সাহা, সৌরভ, সঞ্জয় কবিরাজ, মাহজাবিন রহমান শাওলী, এস এম মেজবাহ, আঁখি বৈদ্য ও আরিফ রহমান।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১৮
এইচএমএস/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।