রোববার (২৫ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চায়ন হয় নাটকটি। রবীন্দ্রনাথের রচনা অবলম্বনে ভিন্ন ধারার এ নাটকটি মঞ্চায়ন করেছে সংস্কার নাট্যদল।
শহুরে জীবনে মানুষকে বশে আনার জন্য ধর্মীয় নানা কৌশল বা কূটকৌশল প্রয়োগের ব্যবস্থা না থাকলেও এ প্রথা গ্রামীণ মানুষের জীবনে এখনো ওঁৎপ্রোতভাবে জড়িত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট নাটক বা নাটিকা ‘বশীকরণ’ সেরকম এক ইঙ্গিত প্রদায়ক। সেখানে হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের তৎকালীন সময়কার কন্যা দায়গ্রস্ততার কথা বর্ণিত হয়েছে স্পষ্টভাবে। আবার কিছু পুরুষের বহুবিবাহের প্রতি যে আসক্তি এবং কিছু পুরুষ ব্রাহ্ম ধর্ম গ্রহণ করায় তাদের যে বিয়ে বিদ্বেষ থাকে; সে বিষয়টাও হয়েছে স্পষ্ট।
নাটকে দেখা যায়, দুই বিপরীতমূখী দর্শনে দীক্ষিত বন্ধু অন্নদা ও আশু। অন্নদা ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করায় খানিকটা আধুনিক, পাশ্চাত্য যুক্তিবাদ ও তথাকথিত বিজ্ঞান মনস্ক। আশু ফিজিক্যাল সাইন্সে স্নাতকোত্তর করেও সনাতন ধর্মের সংস্কার ও ভক্তিবাদে বিশ্বাসী। অন্নদার স্ত্রী তার শ্বশুরের গোঁড়ামিতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও স্বামী ছেড়ে গয়া কাশী ঘুরে বশীকরণ মন্ত্রে দীক্ষাদাত্রী মাতাজি সেজে এ শহরে এসেছেন। আরেক বিধবা মা তার কন্যাকে পাত্রস্থ করার পরিকল্পনা নিয়ে হাজির একই শহরে।
ঘটনাক্রমে দু’জন যে দু’টি বাড়ি ভাড়া নিয়েছে তা একই মালিকের। মাতাজির আবদারে বাড়িওয়ালা তার জন্য বরাদ্দকৃত ২২ নম্বর বাড়ি পরিবর্তে তাকে ৪৯ নম্বরে পাঠিয়ে দেন। আর বিধবা মা ওঠেন ২২ নম্বরে।
এদিকে কন্যা দেখতে যাওয়ার জন্য ৪৯ নম্বর বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল অন্নদার। আর আশুর যাওয়ার কথা ২২ নম্বরে মন্ত্র দীক্ষা নিতে। তবে বন্ধু যুগলের জানা হলো না যে, ভাড়াটে বদল হয়েছে। তাই ভাড়াটে বদল হয়ে যাওয়ার বিভ্রাটে পড়ে দু’জনই। নানা ঝামেলার পর দেখা যায় অন্নদার স্ত্রীই আসলে মাতাজি আর দীক্ষা নিতে গিয়ে দেখা গেল পাত্রীও আশু’র পছন্দ হয়। শেষ পর্যন্ত বিপরীত দার্শনিকতার দুই বন্ধুরই বশীকরণ ঘটে। এভাবেই এগিয়ে যায় নাটকটির কাহিনী।
নাটক শেষে দর্শকদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, অতিরঞ্জনমূলক অভিনয়ের প্রতি বাংলাদেশের সামাজিকগণের যে অবাধ প্রশ্রয় ও বিশ্বাস, তাকে বিশ্বাস করেই এ প্রযোজনার শরীর নির্মাণ। নাট্য নির্মাণে গানের প্রয়োগ ও ব্যবহার বিশেষভাবে লক্ষ্যণীয়, যা আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির পরিচায়ক। তবে পাশ্চাত্যের সঙ্গে প্রাচ্যের এ মিলন দর্শক হৃদয়ে যে রেশ ও রসময়তা যোগ করেছে, তা বেশ উপলব্ধি করা যায়। এছাড়া নাটকটি বর্ণনামূলক না হলেও মঞ্চায়নশৈলী ও অভিনেতাদের চরিত্রায়নে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী নাট্য যাত্রাপালার কাছে তা ঋণী।
নাটক সম্পর্কে নাটকের নির্দেশক জানান, নাটকের দুই বন্ধু অন্নদা ও আশুকে বশে আনতে চমত্কারভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে নাটকের অন্য চরিত্রগুলোকেও। অভিনয় কিছুটা অতিরঞ্জিত মনে হলেও তা নাট্যপ্রয়োগের ক্ষেত্রে কোনো ব্যঘাত ঘটায় না। এছাড়া নবনাট্যলিপির ক্ষেত্রে যে বিষয়টা সামনে আসে, সেটি হলো নাটকে একজন ভাঁড়ের নব আবির্ভাব এবং কিছু সংলাপের সমসাময়িকতা বা অনুপ্রবেশ। সঙ-এর আঙ্গিক উপস্থাপনের জন্য নাটকে যুক্ত করা হয়েছে ভাঁড় চরিত্রের।
এছাড়া নাট্যপ্রয়োগের দিক থেকেও ‘বশীকরণ’ বেশ লক্ষ্যণীয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বশীকরণ’নাটকটি পাশ্চাত্য নাট্যরীতিতেই লেখা অথবা নাটকের কোথাও বর্ণনার সংশ্লেষ ঘটেনি। সেক্ষেত্রে নাটকটির প্রয়োগের ক্ষেত্রে বাংলা লোকজ নাট্যরীতি সঙ ও যাত্রা ঢঙ ব্যবহারের মাধ্যমে নাটকের একটি নতুন রূপ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান নির্দেশক।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৮
এইচএমএস/এসএইচ