ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

সমৃদ্ধি ও প্রগতির পক্ষে লেখক সংঘের আহ্বান

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৯
সমৃদ্ধি ও প্রগতির পক্ষে লেখক সংঘের আহ্বান

ঢাকা: ‘আমরা যখন লেখকদের সংঘ করি, তখন এ প্রশ্নটা আমাদের মনের মধ্যে থাকে যে, লেখা কী সংঘবদ্ধভাবে সৃষ্টি করা যায়? প্রত্যেকটি লেখক তো একজন মানুষ, বিশিষ্ট মানুষ এবং তিনিই লেখেন। কিন্তু সংঘ ছাড়া, সম্মিলিত হওয়া ছাড়া লেখা সম্ভব নয়, এটাও সত্য।’ বলছিলেন এমিরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

তিনি বলেন, এ যে সংঘবদ্ধ হওয়া, এর প্রয়োজন অনেক দিক থেকে। একটা দিক হচ্ছে, লেখকদের যে অধিকার, লেখকদের যে স্বাধীনতা, মত প্রকাশের ভাবনাগুলো, সেগুলো সংঘবদ্ধ না হলে অর্জন করা এবং রক্ষা করা সম্ভব না।

আরেকটা দিক হচ্ছে, আমরা পরস্পরে সংঘবদ্ধ হয়ে যাবো, সম্মিলিত হয়ে যাবো, তবেই আমরা নিজেদের সমৃদ্ধ করতে পারবো, লেখকদের সমৃদ্ধ করতে পারবো।

শুক্রবার (১৫ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র মিলনায়তনে বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘের তৃতীয় জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।  

এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত চত্বরে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন কবি মোহাম্মদ রফিক। উদ্বোধনের পর একটি র‌্যালি চারুকলা প্রাঙ্গণ থেকে ঘুরে গবেষণা কেন্দ্র মিলনায়তনে এসে শেষ হয়।

বক্তব্যে এমিরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, লেখা ও লেখক এক জিনিস নয়। অনেক সময় লেখা লেখককে অতিক্রম করে যায়। কেননা লেখক মেনে নেন। কিন্তু লেখা মেনে নেয় না। বিভিন্ন লেখার মধ্য দিয়ে সাহিত্য আমাদের জীবনে সংবেদনশীলতাকে নিয়ে আসে, মানুষের মধ্যকার বিচ্ছিন্নভাব দূর করে। আর এটি নাটক, কবিতা, গল্প, উপন্যাস সবগুলোতেই পাওয়া যায়। সাহিত্যে চিরকালের লড়াই হচ্ছে, মানুষকে সংঘবদ্ধ করা। অপরদিকে বর্তমান সময়ে পুঁজিবাদ আমাদের একে অন্যের থেকে আলাদা করে দিচ্ছে, কেননা তা বাস্তবতা। সাহিত্যের কাজ বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়া। আর বাস্তবতা কেবল দৃশ্যমান নয়, মানুষের স্বপ্ন আর আকাঙ্খাও। সেগুলোও দৃশ্যমান বাস্তবতার থেকে কম বাস্তবতা নয়।

উদ্বোধনী অধিবেশনে সম্মেলনের উদ্বোধক কবি মোহাম্মদ রফিক বলেন, লেখক তার নিজের লেখা লেখে। এখানে আমি অন্য লেখকদের কথা বলবো না, আমার নিজের কথা বলি। গৌতম বুদ্ধ বলেছিলেন, শোন, জীবন দুঃখময়। তোমাকে নির্বাণ পেতে হবে। আমি এক পথ অনুসরণ করে নির্বাণ পেয়েছি। কিন্তু আমি তো তোমাকে বলতে পারবো না যে, আমার পথ অনুসরণ করে তুমি নির্বাণ পাবে। তোমাকে তোমার পথ অনুসরণ করতে হবে। সুতরাং প্রত্যেক লেখকের পথ তার পথ। তাকে তার লেখার ভেতর দিয়ে নির্বাণ পেতে হবে। তাকে তার জীবন, তার পরিবেশ, তার মানুষ, তার প্রকৃতি, তার প্রাণী, সবকিছু নিয়ে তার লেখা প্রতিফলিত হতে হবে। তার লেখা প্রাকাশিত হতে হবে।

তিনি বলেন, যা লিখছো, তাই লিখে যাও। লেখা লিখতে হবে। যদি সত্যিই জীবনযাপন লেখেন, সত্যিই জীবনের কথা লেখেন তাহলে ওটা কিছু হবে বলেই আমার বিশ্বাস। সত্যি লিখলে তা মানুষের পক্ষে, প্রগতির পক্ষে, উত্তরায়নের পথে যেতেই হবে।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন তৃতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান হীরা। এসময় তিনি চল্লিশের দশকে রমেশ দাস গুপ্ত ও সৌমেন চন্দ্রের হাত ধরে প্রগতি লেখক সংঘের যাত্রার কথা তুলে ধরেন। একইসঙ্গে দীর্ঘ সময় স্মিত থাকলেও এখন এবং আগামীতে এ সংঘ আরো উজ্জীবিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠানে প্রগতি লেখক সংঘের সভাপতি ও কবি গোলাম কিবরিয়া পিনুর সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন- ভারতীয় লেখক ও কবি সঙ্গীতা দেওয়ানজি দাস এবং নাথামাস শর্মা। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সংঘের সাধারণ সম্পাদক ও কবি সাখাওয়াত টিপু। সঞ্চালনা করেন অভিনূ কিবরিয়া ইসলাম।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৯
এইচএমএস/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।