ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

ক্যানভাসে তুলি ঘুরিয়ে মাতলো শিশুরা

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৯
ক্যানভাসে তুলি ঘুরিয়ে মাতলো শিশুরা শিশু দিবস উপলক্ষে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় শিশুরা/ছবি- ডি এইচ বাদল

ঢাকা: লাল-নিল, হলুদ-সবুজ রং নিয়ে ক্যানভাসে তুলি ঘোরানোর যে আনন্দ, সে আনন্দ তাদের চোখে মুখে। কিন্তু সব রংগুলোর মধ্যে একটু বেশি আনন্দ আছে লাল আর সবুজে। কেননা তা আমাদের জাতীয় পতাকার রং। অনেকে আবার এসেছেও লাল সবুজ জামা পড়ে।

রোববার (১৭ মার্চ) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে ‘গৌরব ৭১’র আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে জাতীয় শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। তাতে অংশ নিতে সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুল তলায় মা-বাবার হাত ধরে ভিড় জমাতে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের শিশু-কিশোররা।

প্রতিযোগিতায় বঙ্গবন্ধুর পাশে স্মৃতিসৌধের ছবি আঁকছিলো রাজধানীর উদয়ন স্কুলের শিক্ষার্থী ফাহমিদ। কথা হলে ফাহমিদ বলে, আমি বঙ্গবন্ধু ও স্মৃতিসৌধের ছবি এঁকেছি। বঙ্গবন্ধু হচ্ছে আমাদের জাতির জনক, আজ তার জন্মদিন। আর স্মৃতিসৌধ হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতা ও শহীদদেরকে সম্মান জানানোর প্রতীক।

শুধু ফাহমিদ নয়, বঙ্গবন্ধু আর তার স্বপ্নের দেশ নিয়ে প্রতিযোগিতায় ছবি এঁকেছে অসংখ্য প্রতিযোগী। কেউতো আবার একটু দেরি করে আসায় এবং নির্দিষ্ট সময়ের কিছু পরে ছবি শেষ করায় কান্নাও করেছে চোখ ফুলিয়ে। তেমনি একজন নূর ফেরদৌসি। ছোট্ট এই সোনামণি বাবার বুকের মধ্যে কাঁদতে কাঁদতেই বাবার টি-শার্টে কাজলের রঙে যেন এঁকে দিলো বঙ্গবন্ধুর ছবি।

কথা হলে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলতে বলতেই পুরোটা কেঁদে দিল মিষ্টি সুরের আদুরে মেয়েটা। বললো- ‘আমি পুরো ছবিটা শেষ করতে পারিনি, এইজন্য আমার খারাপ লাগছে...!’ তবে ম্যাম তার ছবি শেষ করা পর্যন্ত বসে থেকেই তার ছবিটা জমা নিয়েছে। আর সে পুরস্কারও পেয়েছে।

শিশু দিবস উপলক্ষে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় শিশুরা/ছবি- ডি এইচ বাদলনূর ফেরদৌসি’র বাবা তৌহিদ ইসলাম বলেন, বাচ্চাদের নিয়ে যেকোনো প্রতিযোগিতায় আমি ওকে অংশগ্রহণ করানোর চেষ্টা করি। বাচ্চারা এখান থেকে অনেক বেশি ফ্রি-মিক্সিং শিখে। অন্যদের ছবি দেখে, পরিবেশটা তার ভালো লাগে। এর সঙ্গে বাসায় গিয়ে যখন রিভিউ করে- ওই বাচ্চাটা যে ছবি এঁকেছিল, ওটা আমার খুব ভালো লেগেছে। তারপর এটা এমন হচ্ছিল, ওই রংটা একটু বেশি দিচ্ছিলাম, ওই ছেলেটা অনেক বেশি রং দিয়েছিলো, ওটা দেখতে খুব মজা লেগেছে। এমন করে যে ভাবনাগুলো ও ভাবে, ওই বিষয়টা আমার কাছে বেশি ভালো লাগে। আর এর থেকে ও নিজেও আরো ভালো করে শিখতে পারে।

প্রতিযোগিতা শেষে ৩টি বিভাগে ৩০ জন প্রতিযোগীকে বিজয়ী হিসেবে এবং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী সবাইকে বই ও সনদপত্র দেওয়া হয়। ‘গৌরব ৭১’র সভাপতি মনিরুল ইসলাম মণির সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণী পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিথ ছিলেন সাবেক আইজিপি একেএম শহিদুল হক। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, সাবেক সাংসদ ও ‘গৌরব ৭১’র উপদেষ্টা অ্যাড. সানজিদা খানম, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, কেন্দ্রীয় কর জরিপ অঞ্চলের (ঢাকা) কর কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান প্রমুখ।

প্রধান অতিথি বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ সমার্থক শব্দ। বঙ্গবন্ধুর যে মহত্ব, তার যে ত্যাগ, বাঙালির প্রতি ও মানুষের প্রতি তার যে ভালোবাসা, এই বিষয়গুলো আমাদের সন্তানদের আমাদেরই বলতে হবে, জানাতে হবে। তাদের মনে করিয়ে দিতে হবে এই দেশ স্বাধীন হওয়ার পেছনে তার অবদান কতটুকু। শিশু দিবস উপলক্ষে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় শিশুরা/ছবি- ডি এইচ বাদলগোলাম কুদ্দুস বলেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি শিশুদের নানাবিধ সংস্কৃতি চর্চা ও খেলাধুলার সঙ্গে আমাদের যুক্ত করতে হবে। এতে করে তাদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ, মানুষে মানুষে সম্পর্ক, মৈত্রীর বন্ধন গড়ে উঠবে, পরস্পরকে একে অপরে জানাতে ও বুঝতে শিখবে ও সামাজিক মানুষ হিসেবে গড়ে উঠবে।

ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, আমাদের বাবা-মায়েরা বাচ্চাদের অনেক গল্প শেখায়। রাত জেগে তাদের স্বপ্নের রাজ্যে ঘুরিয়ে নিয়ে বেড়ায়। ঠিক তেমনি করেই আমাদের শিশুদের বঙ্গবন্ধুর কথা জানাতে হবে।

আর আয়োজন সম্পর্কে আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মনিরুল ইসলাম মণি বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুকে কখনো দেখেননি, শুধু গল্প শুনেছেন, অর্থাৎ আমাদের নতুন প্রজন্ম যারা, তাদের কাছে বঙ্গবন্ধুকে পৌঁছে দিতে, বঙ্গবন্ধুকে জানাতেই এই আয়োজন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১০ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৯
এইচএমএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।