ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

শতবর্ষী কার্জন হলে অনুষ্ঠিত হলো নাট্যোৎসব

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৭ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৯
শতবর্ষী কার্জন হলে অনুষ্ঠিত হলো নাট্যোৎসব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: দেশের ২৬টি জেলার ৩৫টি শতবর্ষী নাট্যমঞ্চ খুঁজে বের করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। গৌরবময় শতবর্ষ অতিক্রম করা এসব নাট্যমঞ্চগুলো জনসম্মুখে নতুন করে তুলে ধরার মানসে একাডেমির আয়োজনে শুরু হয়েছে ‘বাংলাদেশের শতবর্ষী নাট্যমঞ্চে নাট্যোৎসব ২০১৯’ শীর্ষক নাটকের উৎসব।

বুধবার (২০ মার্চ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে অবস্থিত শতবর্ষী নাট্যমঞ্চে অনুষ্ঠিত হলো একদিনের আয়োজন। এতে ৬টি নাটকের অংশ বিশেষ পরিবেশন করেন ৬টি নাট্যদল।

নাট্যোৎসবের শুরুতে অনুষ্ঠিত হয় অলোচনা সভা অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসক আবু সালেহ মো. ফেরদৌস খান। অতিথি ছিলেন নাট্যজন আতাউর রহমান।

সভায় বক্তরা বলেন, বাংলাদেশের মঞ্চ নাটক ঢাকা শহরের কয়েকটি অডিটোরিয়ামের গণ্ডি পেরিয়ে তেমন একটা বিস্তার লাভ করতে পারেনি। থিয়েটারের প্রসঙ্গ উঠলেই ঘুরে ফিরে কয়েকটি দলের কথা আসে। মঞ্চ নাটকের পরিবেশনাও ঢাকা শহরের কয়েকটি অডিটোরিয়ামের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এমন বাস্তবতার মধ্যেও বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নাট্যমঞ্চ গৌরবময় শতবর্ষ অতিক্রম করেছে। নাট্যচর্চার পাশাপাশি দেশের সামগ্রিক সংস্কৃতি চর্চার ক্ষেত্রে এসব মঞ্চ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। গৌরবময় শতবর্ষ অতিক্রম এই সব নাট্যমঞ্চগুলো জনসম্মুখে নতুন করে তুলে ধরার মানসেই পুরো মার্চ মাস জুড়ে দেশব্যাপী শুরু এ নাট্যোৎসব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

সভা শেষে সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত এ নাট্যোৎসবে পরিবেশিত হয় লোক নাট্যদলের (সিদ্ধেশ্বরী) ‘মুজিব মানে মুক্তি’, শিল্পকলা একাডেমির ‘হ্যামলেট’, ঢাকা পদাতিকের ‘কথা ৭১’, থিয়েটার আর্ট ইউনিটের ‘জনম দুঃখী মা’, ঢাকা থিয়েটারের ‘রায় কথকতা’ এবং আরণ্যক নাট্যদলের ‘মাটির মহাজন’।

এ নাটকগুলোর মধ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন, সংগ্রাম ও মহাপ্রয়াণ ভিত্তিক রাজনৈতিক আলেখ্য ‘মুজিব মানে মুক্তি’তে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ধারাবাহিক ইতিহাসের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর শৈশব, কৈশোর, যৌবন, মহান সংগ্রামী জীবন ও মহাপ্রয়াণ ক্রমান্বয়ে সন্নিবেশিত হয়েছে। পাক-হানাদারদের সহযোগী যুদ্ধাপরাধীদের হিংস্র চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে অনবদ্য এ নাট্যাখ্যানে। অপরদিকে উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের কালজয়ী নাটক হ্যামলেট। কিংবদন্তি এ ব্রিটিশ কবি ও নাট্যকারের মৃত্যুর চার’শ বছর পরও দর্শককে উদ্দীপ্ত করেছে তার রচিত এ নাট্যকাহিনী।

‘কথা-৭১’ নাটকে দেখা যায় একজন মুক্তিযোদ্ধা এখনো আত্মযন্ত্রণায় ভুগছেন। কারণ যুদ্ধাপরাধীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পাঁয়তারা করছে। ওই মুক্তিযোদ্ধা এ জন্য সাধারণ মানুষকে সংগঠিত করার উদ্যোগ নেন। এ ব্যাপারে তিনি কোনো দলের ব্যানারে কাজটি করেন না। একেবারে ব্যক্তিগত উদ্যোগে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে মাঠে নামেন। তার বিশ্বাস, এ কাজে অনেকেই অতঃপর এগিয়ে আসবে। এছাড়া ‘রায় কথকতা’র নাট্যপরিক্রমায় দেখা যায়, বৃন্দাবনের গহনপথ বেয়ে গোপীদের মথুরায় অভিযাত্রা। আসরে আসরে প্রকাশিত হয়েছে রাধা-কৃষ্ণ-আইন ইত্যাদি পৌরাণিক চরিত্র ও তাদের কার্যকারণ। নানা রূপ শিল্প গড়নের ভেতর দিয়ে মঞ্চে ফুটে উঠে মধ্যযুগ থেকে বর্তমান অবধি।

আর আরণ্যক নাট্যদলের ‘মাটির মহাজন’ এবং ঢাকা পদাতিকের ‘কথা ৭১’ নাটকের ব্যকুলতাও ছিল দর্শকদের কাছে। নাটকের বিভিন্ন কাহিনীতে, বিভিন্ন চরিত্রে দর্শকরা খুজে পেয়েছেন আলাদা আনন্দ। ফিরেছেন তৃপ্তির ঢেকুর তুলে।

এদিকে দেশের শতবর্ষী নাট্যমঞ্চগুলোর ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং অবদানকে দেশবাসীর সামনে উপস্থাপনের লক্ষ্যে শিল্পকলা একাডেমি প্রকাশ করেছে একটি গ্রন্থ। এই বইয়ের মধ্যে দেশের ঐতিহ্যবাহী এবং শতবর্ষ অতিক্রান্ত ৩৫টি মঞ্চের ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রকাশিত বইটি রচনা করেছেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। সংকলন সহযোগী ছিলেন সৌম্য সালেক ও মারুফা মঞ্জুরী খান।

শতবর্ষী নাট্যমঞ্চগুলো হল-কুমিল্লা টাউন হল, কুষ্টিয়া পরিমল থিয়েটার, খুলনা নাট্য নিকেতন, গাইবান্ধা নাট্যসংস্থা, গাজীপুর ভাওয়াল রাজবাড়ি নাট্যমন্ডপ, ঝিনাইদহ করোনেশন ড্রামাটিক ক্লাব, টাঙ্গাইল করোনেশন ড্রামাটিক ক্লাব, ঠাকুরগাঁও অ্যাডওয়ার্ড মেমোরিয়াল হল, দিনাজপুর নাট্য সমিতি, নীলফামারী ডোমার নাট্য সমিতি মঞ্চ, নওগাঁ করোনেশন হল, পাবনা বনমালী ইনস্টিটিউট, বাগেরহাট টাউন হল , ফরিদপুর টাউন থিয়েটার, বগুড়া অ্যাডওয়ার্ড ড্রামাটিক মঞ্চ, অশ্বিনী কুমার টাউন হল, বরিশাল, ময়মনসিংহ অমরাবতী নাট্যমন্দির, ময়মনসিংহ টাউন হল, এল পি মিশ্র ইনস্টিটিউট, ময়মনসিংহ, দূর্গাবাড়ী নাটমন্দির, ময়মনসিংহ, মাগুরা টাউন হল, যশোর বি. সরকার মেমোরিয়াল হল, রংপুর টাউন হল, রাজবাড়ী সফিউর রহমান মিলনায়তন, ললিত মোহন মিত্র নাট্যমঞ্চ, রাজশাহী, রাজা প্রমদানাথ টাউন হল, রাজশাহী, লালমনিরহাট এম টি হোসেন ইনস্টিটিউট, সিলেট ক্ষীরোদ মেমোরিয়াল স্টেজ, নাটমন্দির, ব্রহ্ম মন্দির, বন্দরবাজার, সিলেট, মনিপুরী রাজবাড়ী নাটমন্দির, সিলেট, মালনীছড়া চা বাগান নাটমন্দির, সিলেট, সিরাজগঞ্জ পৌর ভাসানী মিলনায়তন, এবং ঢাকার মাহবুব আলী ইনস্টিটিউট, লালকুটি ও কার্জন হল।

বাংলাদেশ সময়: ০৫২০ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০১৯
এইচএমএস/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।