ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

আয়া দিয়ে চলছে মাগুরা সরকারি গণগ্রন্থাগার!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৭ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০১৯
আয়া দিয়ে চলছে মাগুরা সরকারি গণগ্রন্থাগার!

মাগুরায়: মাগুরা জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারে এক সময় বইপ্রেমীদের ভিড় লেগেই থাকতো। কিন্তু বর্তমানে জনবল সংকটসহ নানা সমস্যা নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। আয়া ও পিয়ন দিয়ে লাইব্রেরিটি চলছে দিনের পর দিন। নারী ও শিশু পাঠকদের জন্য নেই কোনো আলাদা ব্যবস্থা। পাশে ডাস্টবিন থাকায় গণগ্রন্থাগারের পাঠকরা বিড়ম্বনার শিকার হন।

জানা যায়, ৩৭ শতাংশ জায়গার উপর গড়ে ওঠা গণগ্রন্থাগারটিতে সাড়ে ৩৬ হাজার বই রয়েছে। গণগন্থাগারটি প্রতি রোববার থেকে বুধবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়।

রয়েছে বিনামূল্যে ইন্টারনেট সুবিধা।

মাগুরা পৌরসভার কলেজপাড়া হাজীরোড এলাকায় লাইব্রেরিটিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আট পদের বিপরীতে তিনজন দিয়ে কোনোরকমে জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে এর কার্যক্রম। নাইটগার্ড পদে কর্মরত এনায়েত হোসেনকে একইসঙ্গে লাইব্রেরি সহায়কের দায়িত্বও পালন করতে হচ্ছে। লাইব্রেরিয়ান থাকলেও দুই সহকারী লাইব্রেরিয়ান পদ শূন্য রয়েছে। কর্মরত অন্যজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী।

অফিস সহকারী রশিদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, লাইব্রেরিতে দু’টি কম্পিউটারের একটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেও অধিকাংশ পাঠক জানেন না। তবে কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের সুবিধার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় জনবল থাকলে পাঠকদের আগ্রহ বাড়বে।

বেশ কয়েকজন পাঠকের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, লাইব্রেরিটির পরিবেশ পাঠের উপযোগী নয়। লাইব্রেরির বইগুলো এলোমেলোভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হয়েছে। জায়গার সংকটের কারণে চেয়ার-টেবিলগুলো একটা স্থানে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। লাইব্রেরিতে পুরাতন বইয়ের পাশাপাশি নতুন সংস্করণের আপডেট বইগুলো রাখলে পাঠক সংখ্যা বৃদ্ধি পেতো।  
মাগুরা জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারে বই ও চেয়ার-টেবিলের স্তূপ।  ছবি: বাংলানিউজ
মহম্মদ সোহেল মুন্সি গত চার বছর ধরে পত্রিকা ও বই পড়তে এ লাইব্রেরিতে আসছেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, কর্মকর্তারা ঠিক মতো ডিউটি করেন না। আয়া ও পিয়ন দিয়ে লাইব্রেরি চালায়। এখানে ছেলে মেয়েরা উচ্চৈঃস্বরে কথা বলে। বই রাখার আলমারিগুলো ঠিক করে রাখা নেই। বইয়ের গায়ে ধুলাবালি পড়ে রয়েছে, দেখলে মনে হয় বহু বছর ধরে বইগুলোতে কেউই হাত দেয় না। নতুন কোনো বই না থাকায় পুরোনো দিয়ে চলছে লাইব্রেরির কার্যক্রম।

তিনি বলেন, বাথরুমের অবস্থা খুবই খারাপ। পানির টেপ দীর্ঘদিন ভাঙা রয়েছে। একাডেমি কোনো বই না থাকার কারণে পাঠক আসতে চায় না। লাইব্রেরিতে নারী পাঠকদের জন্য আলাদা বসার ব্যবস্থা না থাকায় তাদের উপস্থিতি একেবারে নেই। শিশু-কিশোর পাঠকও সামান্য দু’একজন।

জেলা গ্রন্থাগারের প্রশাসন কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, লাইব্রেরিতে উপযুক্ত জায়গা না থাকার কারণে চেয়ার-টেবিল এক জায়গায় স্তূপ করে রেখেছি। রয়েছে জনবল সংকট। মাত্র তিনজন কর্মকর্তা দিয়ে চলছে বছরের পর বছর লাইব্রেরির কার্যক্রম।

তিনি বলেন, এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একাধিকবার বলেও কোনো সমাধান হয়নি। পাঠকদের লাইব্রেরিমুখী করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাদের নিয়ে বিতর্ক ও রচনা প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ ছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এছাড়া প্রতিদিন ১২টি জাতীয় দৈনিক (বাংলা), একটি ইংরেজি ও দু’টি চাকরির পত্রিকা রাখা হয়। বিনামূল্যে ইন্টারনেট সুবিধাও রয়েছে গণগন্থাগারটিতে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৭ ঘণ্টা, জুলাই ০৬, ২০১৯
জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।