ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

কথা-কবিতা-গানে রিজিয়া রহমান স্মরণ

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৯
কথা-কবিতা-গানে রিজিয়া রহমান স্মরণ রিজিয়া রহমান, ফাইল ফটো

ঢাকা: স্বাধীনতা উত্তর কালের বাংলাদেশের অন্যতম একজন নারী ঔপন্যাসিক রিজিয়া রহমান। ষাটের দশক থেকে গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, রম্যরচনা ও শিশুসাহিত্যে তার অবাধ বিচরণ। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও একুশে পদক।

শনিবার (২৪ আগস্ট) গৌরবোজ্জ্বল এই নক্ষত্রকে স্মরণ করেই অনুষ্ঠিত হলো তার স্মরণানুষ্ঠান। গত ১৬ আগস্ট এই নারী কথাশিল্পী রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে অবস্থিত গণগ্রন্থাগারের সেমিনার কক্ষে রিজিয়া রহমান স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সংস্কৃতি সংগঠন শিল্পিত। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও লেখক ড. হায়াৎ মামুদ। তিনি রিজিয়া রহমানকে নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি শিশু ও তরুণদের কীভাবে বইয়ের প্রতি আগ্রহী করে তোলা যায়, সে প্রসঙ্গে বলেন।

তিনি বলেন, আমাদের মাঝে অনেকেই রিজিয়া রহমান পড়েছেন, অনেকেই পড়েননি। সবাই আমরা সব বই পড়ি না; পড়তে বাধ্য নয়। রিজিয়া রহমানের উপন্যাসগুলো বাংলা সাহিত্যে বেশ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অবস্থান করে আছে।

তিনি বলেন, যে কোনো শিক্ষিত বাবা-মায়ের উচিত বাড়িতে একটি পাঠাগার গড়ে তোলা। এতে করে সন্তানদের বারবার পড়তে বলতে হবে না। বরং বইয়ের মধ্যে ঘোরাঘুরি করতে করতে আপনা আপনিই তাদের বইয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মে যাবে। কেননা বাচ্চাদের বারবার পড়ো পড়ো বললে তাদের মনের ভেতর অভিমানের ক্ষোভ জমে এবং তারা পড়া থেকে দূরে সরে আসে।

আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলাম লেখক সৈয়দ বদরুল আহসান, কবি ও সাংবাদিক নাসির আহমেদ, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জুনায়েদ হালিম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. একেএম শাহনাওয়াজ। অনুষ্ঠান সঞ্চলনা করেন শিল্পিত’র সাধারণ সম্পাদক কবি ওসমান গণি। রিজিয়া রহমান স্মরণ অনুষ্ঠানে অতিথিরা, ছবি: বাংলানিউজ

অতিথিরা বক্তব্যে তুলে ধরেন কথাসাহিত্যিক রিজিয়া রহমানের জীবনের নানা অধ্যায় এবং লেখালেখির বিভিন্ন দিক। তারা বলেন, মাতৃত্বপ্রবণ মন নিয়ে সমস্ত সীমাবদ্ধতাকে উপেক্ষা করে পথ এগিয়েছেন রিজিয়া রহমান। ইতিহাসকে কীভাবে শিল্পে রূপ দিতে হয়, তা তিনি দেখিয়ে গেছেন তার ‘বং থেকে বাংলা’ উপন্যাসের মধ্য দিয়ে।

তারা বলেন, জীবনঘনিষ্ঠ এই মানুষটির লেখার মূল উপজীব্য বিষয় ছিল মানুষ। তিনি নিজেও ছিলেন সাদামাটা ধরনের। কোনো অহমিকা ছিল না। এখনকার মতো সেলিব্রেটি কালচার ছিল না তার মধ্যে। প্রচারবিমুখ এই মানুষটির লেখার হাত এবং চিন্তার জগৎ যেমন সুন্দর, তেমনি সুন্দর ছিল তার প্রতিটি বইয়ের গুণগত মানও। বাংলা সাহিত্যে অবদান রাখা এই মানুষটিকে আমরা স্মরণ করছি শ্রদ্ধা ভরে।

ঘরোয়া পরিবেশের এই আয়োজনে আলোচনা ছাড়াও গান, কবিতা, কথায় মুখর হয়ে উঠে আসেন রিজিয়া রহমান। প্রায় অর্ধশতক ধরে এ দেশের কথাসাহিত্য সমৃদ্ধ করা মানুষটি যেনো নিজ কর্মগুণে এসে স্থিত হন সকলের হৃদয়ে।

রিজিয়া রহমান ১৯৩৯ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পরিবারের সঙ্গে বাংলাদেশে চলে আসেন। লেখালেখির শুরু ষাটের দশকে। গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, রম্যরচনা ও শিশুসাহিত্যে তার রয়েছে উল্লেখযোগ্য অবদান। তবে মূল পরিচিতি ঔপন্যাসিক হিসেবেই। তার লেখা উপন্যাসগুলোর মধ্যে ‘ঘর ভাঙা ঘর’, ‘উত্তর পুরুষ’, ‘রক্তের অক্ষর’, ‘বং থেকে বাংলা, ‘ধবল জ্যোৎস্না’, ‘সীতা পাহাড়’, ‘উৎসে ফেরা’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তিনি উপন্যাসে অবদানের জন্য ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অবদানের জন্য পরে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২২১০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৯
এইচএমএস/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।