ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

যাত্রাপালা ‘বিদ্রোহী বুড়িগঙ্গা’য় ইতিহাসের চিত্রায়ন

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০১৯
যাত্রাপালা ‘বিদ্রোহী বুড়িগঙ্গা’য় ইতিহাসের চিত্রায়ন

ঢাকা: বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে ঢাকা। এই নগরীর ৪০০ বছরের ইতিহাসের সঙ্গে ওতোপ্রতভাবে মিশে আছে বুড়িগঙ্গা। ইতিহাসের সঙ্গে সত্যের কল্পনায় সৃজনশীল মানুষেরা বুড়িগঙ্গাকে চিত্রিত করেছেন নানাভাবে। এই অঞ্চলের রাজনৈতিক ও সামাজিক বহু ঐতিহাসিক ঘটনার নীরব সাক্ষী এই নদী। তার বাঁকে বাঁকে রাজধানী ঢাকার বেড়ে ওঠা। নবাব সিরাজউদ্দৌলার আমলে অনেক বেদনাদায়ক ঘটনাও ঘটেছে এই নদীপথে। আর এমন সব কাহিনী নিয়ে মঞ্চে এলো যাত্রাপালা ‘বিদ্রোহী বুড়িগঙ্গা’।

বুধবার (০৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হলে নতুন আঙ্গিকে এই যাত্রাপালাটি উদ্বোধন করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ও কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী। পালা পরিবেশন করে দেশের শীর্ষস্থানীয় যাত্রা দল ‘দেশ অপেরা’।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট নিয়ে গবেষণালব্ধ ‘বিদ্রোহী বুড়িগঙ্গা’ যাত্রাপালাটির নির্দেশনা দিয়েছেন যাত্রাব্যক্তিত্ব মিলন কান্তি দে।

যাত্রাপালা ‘বিদ্রোহী বুড়িগঙ্গা’ নিয়ে এর রচয়িতা ড. আমিনুর রহমান সুলতান বলেন, রক্তরাঙা পলাশীর বিয়োগান্তক ঘটনার পর ইংরেজদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছিল সন্ন্যাসী, ফকির ও তাঁতী সম্প্রদায়। একসময় তাদের পুঞ্জিভূত ক্ষোভ ও বেদনার বিস্তৃতি ঘটে বিক্ষোভে ও বিদ্রোহে। ইতিহাসের এই বিষয়টি কাহিনীর চম্পা বাঈ, শুভঙ্কর, অঞ্জলী প্রভৃতি চরিত্রের মাধ্যমে প্রতীকী ব্যঞ্জনায় তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এই পালায় দুটি বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে। এর একটি হচ্ছে- গুপ্তচর হিসাবে ঢাকার চম্পা বাঈকে সৃষ্টি করা। আরেকটি হলো জগদ্বিখ্যাত ঢাকার ‘মুসলিম’ উচ্ছেদের জন্য তাঁতীদের ওপর ইংরেজ বেনিয়দের অমানুষিক নির্যাতন।

নির্দেশক মিলন কান্তি দে’ও পালা প্রসঙ্গে বলেন একই কথা। তিনি যোগ করেন, পালাটির প্রথম মঞ্চায়ন হয়েছিল ২০১৬ সালের ২ আগস্ট। কিছু রদবদল ও পরিমার্জনের মধ্য দিয়ে এটিকে এবার নতুনভাবে সাজানো হয়েছে। পালাটি যখন প্রথম মঞ্চস্থ হয় তখন দর্শকের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাওয়া গিয়েছিল। এতে প্রত্যেকেই দারুণ অভিনয়শৈলী প্রদর্শন করেছিলেন।

যাত্রাপালাটিতে পলাশীর বিয়োগান্তক পরিণতির পর ইংরেজদের বিরুদ্ধে সন্ন্যাসী, ফকির ও মসলিন কারিগরদের বিক্ষোভ ও বিদ্রোহের একাধিক চরিত্রকে প্রতীকী ব্যঞ্জনায় তুলে ধরা হয়েছে। একইসঙ্গে উঠে এসেছে তৎকালীন ঢাকার এক আবহ, যেখানে দেখা মিলবে প্রাণের রাজধানী ঢাকার একটু পুরনো রূপ। আর বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম নিদর্শন এ যাত্রাপালায় ঐতিহ্য আর সামাজিক আবহের সংমিশ্রনে মুগ্ধ হয়েছেন মিলনায়তনভর্তি দর্শক। পরিবেশনা শেষে তুলেছেন তৃপ্তির ঢেকুর।

সে প্রসঙ্গেই হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, যাত্রা আমাদের আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্যকে কেন্দ্র করে বাংলার যাত্রাপালা যুগে যুগে আমাদের লোকায়ত জীবনকে আন্দোলিত করে আসছে। আর সেখানে যখন ঢাকার ইতিহাস-ঐতিহ্য, তার বাঁক, নবাব সিরাজউদ্দৌলা বা মসলিনের কথা উঠে আসে, তখন তা এমনিতেই অনন্য রূপ লাভ করে।

‘বিদ্রোহী বুড়িগঙ্গা’ যাত্রাপালায় বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন এম আলীম, মো. রফিক, মঞ্জুরুল আলম, এম সিরাজ, শাহ্ মোহাম্মদ আলী, অলিউল্লাহ অলি, সুদর্শন চক্রবর্তী, রফিকুল ইসলাম, আবুল হাসেম, এম হাসেম, এম আলম, শংকর সরকার, রহিম, মোজাম্মেল হক, ইদ্রিস, লুৎফুন নাহার, রিক্তা সুলতানা, মনিমালা, আরিশা জামান, আলতাফ হোসেন ও মিলন কান্তি দে।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৪, ২০১৯
এইচএমএস/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।