মনে হয় ডুব দিয়ে থাকি, মনে হয় পাক খেয়ে পড়ি;
সকল তটিনী হতে ফিরে যাবে হাওয়া, এরকম চতুরতা পেলে;
মনে হয় গলা কেটে মরি, তোমাদের রাজার ভিটায়!
সুশাসন চলে গেছে একা, পাথার যেদিকে খোলা; সেইদিকে চেয়ে থেকে
বল্গা হরিণ, খেলা করে দীর্ঘশ্বাসে; খেলা করে ম্যানগ্রোভ চরে, ফার্নেস তেল!
তারপর সারারাত শিকার-আতঙ্ক, দিগন্ত ভরেছে কোনো ‘কেচ্ছার দানব' এসে।
মক্তবে রেহাল ভরেছে, আগ্নেয় ট্রমার খবরে! পৃথিবীকে আনট্যাগ করে
নিমপাতা-ঝিরিঝিরি-হাওয়ার ভিতর এসে, একাধিপত্যে হাঁটি-
এইবেলা তুড়ি বাজে বৃদ্ধাঙ্গুলে!
আর, যে সয়েছে একা, দাহ্য-দুপুর-জেল, আততায়ী মৌসুম, শুধু এক পতাকার আয়োজনে;
পথে-ঘাটে তারে ছায়া দেয় মানচিত্র; হাঁটু মুড়ে সম্মুখে তার, চুপ করে বসে থাকি আর
সুশাসনে কামড়-বসানো কোনো বাদুড়ের টক-শো দেখি, সে-ই ভালো!
করোনা সিরিজ: ত্রিপল টাঙানো মেঘ
শুনেছি তোমার দেশে, হাই তোলা স্নো-ফল এখন গীতি!
সেইদিকে সেতার ধরেছি শোনো, সেইদিকে ত্রিপল টাঙানো মেঘ!
সাদা মেঘ, শোকেসে সাজালে ওড়ে;
কিছুদূর হেঁটে ফিরে আসে চোখ, আমাদের অবদমিত প্রেমের!
যারা চলে গেছে একা, তুষার পিছনে ফেলে, বুকে নিয়ে গেছে যারা
ধারালো প্রেমের ক্ষত, মৃত্যুর মর্সিয়া ঢল, কফিন-করাত-কল;
দুপুর কবিতা জানে, জানে নাকি শোক-তাপ?
এই রীতি বনস্পতি, সারাদিন আলোর আবাদে আলো
সেইসব অকাল বিদারী প্রেম, ক্ষুধিত শিশুর হাড়, ব্যর্থ ভেন্টিলেটর!
সারাদিন, ভাইরাস নিয়ে কথা, জীবনের চোখ কান সব খোলা-
মানুষের হৃদয় অ্যাম্বুলেন্স!
কতোদিন, ছিলে তুমি উপাসনা;
মিছিলে, মৃতেরা সংখ্যাগুরু;
কতোদিন, মোনাজাত সাধা হাতে
মানুষের, কান্না করুণা ঢাকে!
তমা সিরিজ: করোনা-সিজনে
(বন্ধু সাবের সাব্বিরকে জন্মযাত্রাদিনের শুভেচ্ছাসহ)
চলো বসি নিরালার ধারে, পড়ে থাক ছাইদানী, রাত;
এভাবে স্মরণে এসে, জুঁই-পাতা, মন থেকে মনে উদ্যান!
সাবধানে পার হবা রোদ, টব থেকে ছড়িয়েছে ডাল
আমাদের নাই কারো আর , তাড়না-ছলনা চোখে, করোনা-সিজনে!
এইভাবে একা বসে কি ভাবো তুমি?
লাল জামা সূর্যাস্তের, ঢালু হয় ফিরবার পথ
দাঁত থেকে ফেলে গেছে দাগ, আধ-খাওয়া ফলে
বাদুড়-বাদুড়ী, তুমি আজ লাল শাড়ি গায়ে দিছো নাকি?
এতসবে মনোযোগ দেই, মনে পড়ে ডানার ক্ষতকে;
তারপর, ভীত ফাল্গুন, কিছুদূর ওভারব্রীজে হাঁটা-
নাও তমা, আমার চাহনী থেকে, ঠান্ডা বাতাস, মেঘ-নকশা, দুপুর-তফাত ঘুম;
মনে হয় সামনে কুশল, দীর্ঘ সওয়াল;
হাতছানি কেউ গুটিয়ে নিয়েছে হাতে;
এর থেকে আজ পিছুটান ভালো-
এরপর নতুন কলি, দূরপাল্লায় প্রেম;
একে চেনো তুমি? যেনো, প্রশ্নের গোকূলে এসে
ত্রিভূজ গড়ন স্মৃতি;
স্বপ্নকে কাছে ডেকে নেয় গ্রীস্মের ছুটি, একবার;
পথ ফেলে রেখে হৃদয়ে আসছে হাঁটা, আমাদের পায়ে পায়ে হাঁটা!
ভাষার সি-বিচে
১.
আমাকে কথার বিষে, কত লোক ধরাশায়ী করে;
কতদিন আগের দেয়াল, মোছে নাম, নরোম রাবারে!
এতো ওড়ে হাওড়-কুয়াশা, এতো ধূলা, স্মৃতির কবজ;
এতো হ্রেষা, থেমে থেমে মেঘ, কাছে ডাকে পানের বরজ!
তোমাকে কোথায় খুঁজি, পেয়ে গেছি কোথাও আবার!
ভীড় থেকে দূরের ভিটায়, গান বাঁধে সোলার প্যানেল;
তুমি এক মিথের চাবুক, আমি এক ধূসর গাধার
ছানি পড়া দু-চোখ আবার, ধরণীতে হয়েছি নাজেল!
২.
এখানে ফুলের আছে পরিচিত নদীর হাওয়া-
ছায়ারা এমন যেনো, মেঘ পেয়ে থেঁতলে-যাওয়া
হলুদ পাপড়িগুলো, ধার নেয়া বইয়ে জমানো
বাবার চোখের নিচে, নাও এসে থাকুক সাজানো!
রেণুকে উড়িয়ে দিয়ে জাড় ডাকে নিওরপ্রতিভা
জিয়ানো মাছের মতো, চোখ খোলে দূরের শহরে
ডেকে আনে রেলগাড়ি, সাইরেন ও অনেক ধাঁধা
এখানে শূন্যতা যায়, ঢেকে যায় শ্যামল চাদরে!
রক্তে লুকানো আছে শোকাহত রঙের আগুন
বাসনাকে চাষ করে দেয় পাঠকের বিরল করোটি
কার্নিশে উঠেছে নাকি, জোড় বেঁধে মোরগমিথুন?
হাড়ের ভিতর ড্রামা, মালা গাঁথে শীতের ভ্রুকুটি!
হাড়ের ভিতর হাড়, একনায়কের হাসি
পোশাকে ধানের চিটা, ভাষার সি-বিচে আছি-
এসব এমন যেনো উদাস কবিতা এসে
এগিয়ে দিতেছে পাতা, রাষ্ট্রকে বধির দেখে;
রাষ্ট্র কি ছাগল নাকি? বাগানে ঢুকেছে কারো?
মগজে আগুন জ্বলে, দৃশ্যটা বদল করো!
৩.
একদিন দুঃস্বপ্নের সাপের সাথে দেখা হয়ে যেতে পারে তোমারও, পৃথিবীর সমস্ত বাগান শীতে জীর্ণ, তুমি জানো কাতরতা কাকে বলে, তুমি জানো হুমড়ি খাওয়া ঘুড়িরা এসে আটকায় তোমাদের ছাদে-
এই যে সংসার ও সংস্কৃতি একে অন্যের ডালে রোদের মতো ঝলসে যাচ্ছে, প্যাচ খাচ্ছে সমানে; আর, আকাশে নীল নীল মেঘ থুতনি উঁচানো ড্রাগনের মতো বেঁকে দেখছে জগত;
এখানে, শিশুদের বুকে নিউমোনিয়া, গাঢ় হয়; তুমি এ’ও জানো, এ চিত্র সদ্য আঁকানো কারো!
যে থাকে অতল অঙ্গারে, বহুদিন তারে নাম ধরে ডাকছি না আমি-
দাঁড়ের নিকট এসে, থমকে রয়েছে ঢেউ; নদীবুক তবু কি ভরাট, শীতপাখিময়!
বাংলাদেশ: ১৭০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৯, ২০২০
এএ