ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

ঈদ সংখ্যায়ও করোনার থাবা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৬ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২০
ঈদ সংখ্যায়ও করোনার থাবা

ঢাকা: অদ্ভুত এক সময় পার করছি আমরা। চারপাশে যা উৎসবের, তা এবার অনুপস্থিত। সর্বত্র প্রাণঘাতী করোনার হাহাকার। এরইমধ্যে দুয়ারে কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। চাঁদ দেখা সাপেক্ষে চলতি মাসের ২৪ অথবা ২৫ তারিখ ঈদ। প্রতি বছর এ সময় বাজারে রংবেরঙের প্রচ্ছদ আর হরেক রকমের লেখা নিয়ে পাওয়া যায় ঈদ সংখ্যা। কিন্তু এবার ঈদ আনন্দের অন্যতম এ অনুষঙ্গটিও অনুপস্থিত। বেরসিক করোনার প্রাদুর্ভাবে বাজারে নেই ঈদ সংখ্যা। শুধু একটি জাতীয় দৈনিক ঈদ সংখ্যা প্রকাশ করেছে।

চলচ্চিত্র লেখক ও গবেষক চিন্ময় মুৎসুদ্দীর এক লেখা থেকে জানা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে সাপ্তাহিক বিচিত্রা প্রথম ঈদ সংখ্যা প্রকাশ করে। এর পর গত প্রায় আড়াই দশক ধরে প্রায় সব দৈনিক-সাপ্তাহিক-পাক্ষিক-মাসিক পত্রিকা ঈদ সংখ্যা প্রকাশ করে আসছে।

দিন কে দিন কলেবর যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে লেখকের সংখ্যাও। একশ-দুইশ পৃষ্ঠা থেকে ছয়শ পৃষ্ঠার ঈদ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে।

কিন্তু এবার তার কোনটিই হচ্ছে না। এমনকি বিভিন্ন অনলাইন নিউজপোর্টাল ডিজিটাল ঈদ সংখ্যা প্রকাশ করে এলেও, এবার সেটিও প্রকাশ পাচ্ছে না।

২০১০ সালে বাজারে আসার পর থেকেই পাঠকের আকর্ষণের শীর্ষে থাকে দৈনিক কালের কণ্ঠের ঈদ সংখ্যাটি। এবারও পাঠকদের জন্য তাদের রুচির কথা বিবেচনা করে পত্রিকাটি ঈদ সংখ্যা প্রকাশের প্রস্তুতি নিয়েছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে সেটি প্রকাশ পাচ্ছে না।

এ বিষয়ে কালের কণ্ঠের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কথাসাহিত্যিক মোস্তফা কামাল বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের ভালো প্রস্তুতি ছিল। প্রতিবারই আমরা আগের বারের চেয়ে ভালোভাবে করার চেষ্টা করি। এবারও সে লক্ষ্য ছিল। কিন্তু নানা কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। মূল কাগজই যেখানে সংকুচিত হয়েছে। আমরা ১৬ পৃষ্ঠা বের করছি। অন্যরা ১২ পৃষ্ঠা বের করছে। সেখানে আসলে এত খরচের ঈদ সংখ্যা প্রকাশ করা সম্ভব না।

তিনি বলেন, আমাদের কাছে লেখাগুলো আছে। সেগুলো নিয়ে ঈদুল আজহায় যদি পরিস্থিতি অনুকূলে থাকে, তাহলে ঈদ সংখ্যা হিসেবে প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে। এর বাইরে শুক্রবার (২২ মে) মূল পত্রিকার সঙ্গে আমাদের সাপ্তাহিক যে সাহিত্যপত্র ‘শিলালিপি’ প্রকাশ পাবে, সেখানে ঈদের ছোঁয়া থাকবে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে সবসময়ই বিশাল পরিসরে ঈদ সংখ্যা প্রকাশ করে আসছে পাক্ষিক অন্যদিন। এবারও তাদের সেই প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু প্রতিকূল পরিবেশের কারণে সেটি প্রকাশ হচ্ছে না বলে জানালেন অন্যদিন সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম।

ঈদ সংখ্যার ফাইল ফটো, লেখক শাকুর মজিদের ফেসবুক থেকে নেওয়াবাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমাদের ঈদ সংখ্যার প্রায় সব লেখাই হাতে চলে এসেছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে সেটি প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না। যা অন্যদিনের ইতিহাসে প্রথম। তবে পরিস্থিতি যদি অনুকূলে আসে তাহলে ঈদুল আজহায় আমরা ঈদ সংখ্যা প্রকাশ করব। তা না হলে আগামী বছরের ১৬ জানুয়ারি আমাদের ২৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, তাকে সামনে রেখে এ লেখাগুলো নিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করব।

সমকালের ঈদ সংখ্যার সম্পাদক ও ফিচার সম্পাদক মাহবুব আজীজ বাংলানিউজকে বলেন, সমকাল জন্মলগ্ন থেকেই ঈদ সংখ্যা প্রকাশ করে আসছে। যার জন্য আমরা বছরজুড়ে প্রস্তুতি নেই। এবারও সেই প্রস্তুতি ছিল। লেখকদের লেখাও অনেকগুলো আমাদের চলে এসেছিল। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে আমরা ঈদ সংখ্যা প্রকাশ করছি না।

‘তবে একেবারে ঈদ সংখ্যা ব্যতীত থাকছে না সমকাল। শুক্রবার (২২ মে) সমকালের মূল পত্রিকার সঙ্গে আট পৃষ্ঠার একটি ব্রডশিটের মাধ্যমে সীমিত পরিসরে ঈদ সংখ্যা প্রকাশ হবে। যাতে সমকালের ঐতিহ্যের ছোঁয়া থাকবে। মহামারির এই সময়কে ধারণ করে বিভিন্ন লেখা থাকবে। ’

তিনি বলেন, আমরা এখনও ঈদ সংখ্যা প্রকাশের জন্য প্রস্তুত আছি। সময় অনুকূলে এলে আমরা ঈদ সংখ্যা বের করতে চাই। হতে পারে সেটি ঈদুল আজহার সময় কিংবা শীতের শুরুতে। যার মাধ্যমে আমরা জীবনকে নতুনভাবে উদযাপন করতে চাই।

প্রথম আলোর সাহিত্য সম্পাদক আলতাফ শাহনেওয়াজ বাংলানিউজকে বলেন, প্রথম আলো শুরু থেকে ঈদ সংখ্যা নিরচ্ছিন্নভাবে প্রকাশ করে আসছিল। এবারই প্রথম এতে ছেদ পড়েছে।

তিনি বলেন, আমরা আসলে ঈদ সংখ্যা প্রকাশের জন্য সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলাম। লেখকদের অনেক লেখাও আমাদের হাতে চলে এসেছিল। কিন্তু পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকায় আমরা ঈদ সংখ্যা প্রকাশ করতে পারছি না।

তবে করোনার এ সংকটের মধ্যেও ঈদ সংখ্যা প্রকাশ করেছে দৈনিক বণিক বার্তা। চারটি উপন্যাসসহ ইতোমধ্যেই বণিক বার্তার ঈদ সংখ্যাটি পাওয়া যাচ্ছে বাজারে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩১ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২০
ডিএন/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।