ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২১ মে ২০২৪, ১২ জিলকদ ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

শিল্পী-সাহিত্যিকদের উপর আস্থা ছিল প্রণব মুখার্জির

দীপন নন্দী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১, ২০২০
শিল্পী-সাহিত্যিকদের উপর আস্থা ছিল প্রণব মুখার্জির

ঢাকা: প্রণব মুখার্জি বিশ্বাস করতেন, শিল্পী-সাহিত্যিকরাই নতুন পৃথিবী গড়বেন৷ তিনি বলেছিলেন, বর্তমান পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় দূষণ মানুষের চিন্তা-ভাবনা, মনে ও কাজে। আর এ দূষণ দূর করে নতুন পৃথিবী গড়ে তুলতে পারবেন শুধুমাত্র শিল্পী-সাহিত্যিকরা।

২০১৮ সালের ১৪ জানুয়ারি দুই দিনের আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মেলনের সমাপনী আয়োজনে যোগ দিয়ে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি এ কথা বলেছিলেন৷

২০১২ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতির দায়িত্বের শুরুতেই বিদেশ সফর হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন বাংলাদেশকে। দায়িত্ব শেষের প্রথম সফরটিও তার স্ত্রীর জন্মভূমিতে।

সে সফরে বাংলা একাডেমিতে মাত্র ১৯ মিনিটের বক্তব্য রাখেন তিনি৷ যাতে জয় করে নেন প্রাঙ্গণজুড়ে ছড়িয়ে থাকা হাজারো মানুষের মন।  

সেদিন নিজের বক্তব্যের শুরুতেই রসিকতার ঢঙে নিজেকে ‘যোগাই’ বলেছিলেন প্রণব মুখার্জি৷ 

তিনি বলেছিলেন, আমি তো পাঠক, একজন দর্শক। আমি স্রষ্টা নই; সৃষ্টিকর্ম তো আমার নেই। এই আন্তর্জাতিক সাহিত্যের মহামেলায় আমার কাজটা কী হবে? বীরভূমের গ্রামের ভাষায় রাজমিস্ত্রিদের সিমেন্ট, বালু, মসলা ইত্যাদি এনে দেওয়া লোকদের ‘যোগাই’ বলা হয়। এই সম্মেলনে আমার কাজটা এখানে অনেকটা যোগাইয়ের মতো।

মাঠের রাজনীতি করেই কাটিয়েছেন জীবনের ৩৩ বছর৷ মানুষের পাশে থাকলেও বই থেকে ছিলেন অনেক দূরে৷ এ নিয়ে অাক্ষেপ ছিল ঢের৷

তিনি বলেছিলেন, সরকারি কাজ, সংসদীয় কাজের ঠেলায় বই পড়ার সময় পাইনি। ৩৩০ কক্ষের রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রথমে এসে ভাবলাম- এখানে আমার কাজ কী? প্রধানমন্ত্রী ফাইল পাঠাবেন, আইন প্রণয়ন করবেন সাংসদরা; আমি তাদের পরামর্শ দেব। ভারতের সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতির এখানে ভূমিকা কম। বছরে একদিন সাংসদদের ডেকে বক্তৃতা দেব। সেখানে দাঁড়ি, কমা, ফুল স্টপ- সবটাই মন্ত্রিসভার তৈরি। রাষ্ট্রপতিকে বলতে হবে- মাই গভর্নমেন্ট। রাষ্ট্রপতির কাজ 'নৈবেদ্যর মণ্ডা'র মত বসে থাকা।

রাষ্ট্রপতি ভবনেই গড়ে উঠে নিজের পাঠাভ্যাস৷ এ বিষয়ে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে দেখলাম প্রাসাদসম বিশাল ভবন। পরিসংখ্যানবিদদের মতে, ৩৩০ টি কক্ষ বিশিষ্ট এমন ভবন বিশ্বে আর কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের নেই। প্রচুর বই রয়েছে রাষ্ট্রপতি ভবনে। প্রচুর কাগজ, দলিল দস্তাবেজ সেখানে। ইতিহাসের প্রচুর উপাদান। যেসব পড়তে তিনটি প্রেসিডেন্সিয়াল টার্ম লাগবে। তো, অতদিন তো সময় পাওয়া যাবে না। তার আগেই ঈশ্বর আমাকে ডেকে নেবে। বলবেন, এসো আমার কাছে। তাই আমি দেরি না করে পড়তে শুরু করলাম।

শিল্পী-সাহিত্যিকদের নিয়ে তিনি বলেছিলেন, পরীক্ষায় পাসের জন্য দিগ্বিজয়ী বীরদের নিয়ে পড়াশোনা করা যায়৷ কিন্তু পাসের পর তাদের বেমালুম ভুলে যাই। কিন্তু শিল্পীর ছবি, কবির কবিতা বা প্রিয় উপন্যাস কখনও ভোলা যায় নাকি? যে গান, সানাই বা সরোদের সুর আমাদের প্রিয় তা কখনও ভুলতে পারি আমরা?

বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে তিনি বলেছিলেন, বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক মর্যাদা পেয়েছে। ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল প্রাপ্তিতে বাংলাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিল৷

বাংলা ভাষার জন্য বাংলাদেশের প্রতি ঋণ স্বীকার করে বাংলার ‘জামাইবাবু’ বলেছিলেন, ভাষা আন্দোলনে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষায় ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা পায়। তাদের কাছে আমরা ঋণী। আমাদের হাজার বছরের ইতিহাসকে তারা রক্ষা করেছেন। যারা আগ্রাসন করে তাদের হাতে সেই ইতিহাসকে লুট হয়ে যেতে দেননি।

লেখক-সাহিত্যিকদের উদ্দেশ্যে তিনি আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, আসুন এই সংকল্প করি, ভবিষ্যত প্রজন্মকে আমরা হিংস্রতার সব বিষবাস্প থেকে বাঁচাব।  

বাংলাদেশ সময়: ০৩৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০২০
ডিএন/এমকেআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।