ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

শিল্প-সাহিত্য

‘বাবুই’ আর ‘চড়ুই’ নিয়ে কবিতার কবির জন্মদিন আজ

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫০ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০২১
‘বাবুই’ আর ‘চড়ুই’ নিয়ে কবিতার কবির জন্মদিন আজ দেশি-বাবুই আর পাতি-চড়ুই পাখি। ছবি: বাংলানিউজ

মৌলভীবাজার: মনে আছে কী আমাদের সেই শৈশবের কবিতাটি? সেই যে আমাদের শিশুকালে আমরা পড়েছিলাম, ‘বাবুই পাখিকে ডাকি বলেছে চড়ুই…। ’ এবার হয়তো মনে পড়েছে! সেই বিখ্যাত কবিতাটির শিরোনাম ছিলো ‘স্বাধীনতার সুখ’।

কালের বিবর্তন আর প্রযুক্তির সর্বগ্রাসী ব্যবহার আজ এতোটাই প্রবল যে, আমাদের শৈশবের প্রিয় কবিতা/ছড়াদের আমরা ভুলে যেতে বসেছি! আমরাও তাও কিছুটা মনে রাখছি, কিন্তু আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ‘কবিতা মুখস্ত’ কী এটা তারা আজ জানেই না।  

একরাশ বেদনার দীর্ঘশ্বাস টেনে বলতেই হয়, মুখস্ত করার মাধ্যমে প্রিয় কবিতাগুলোকে মনে রাখার দিন তবে কী শেষ?

কেন না, বর্তমান শিক্ষা পাঠ্যক্রমে সৃজনশীল পদ্ধতি এসে কবিতা মুখস্ত করার বিষয়টিকে গুরুত্বহীন করে তুলেছে। হায়রে কবিতার অবমূল্যায়ন!

বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্যে পাখির অবদান অনস্বীকার্য। বিপন্ন পরিবেশকে সুস্থ ও সুন্দর রাখতে পাখিদের কোনো বিকল্প নেই। তাই তো বাংলা সাহিত্যে নানাভাবে নানান কবি-সাহিত্যদের সৃজনশীল হাত দিয়ে পাখিরা উঠে এসেছে। ‘স্বাধীনতার সুখ’ তেমনি একটি অসাধারণ শ্রেষ্ঠ বাংলা কবিতা। যা আজো লোকের মুখে মুখে ঘুরে বেড়ায়। এই কবিতাটি লিখেছেন রজনীকান্ত সেন। তিনি কবি, গীতিকার ও সুরকার হিসেবে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবিস্মরণীয় স্থান দখল করে আছেন। আজ ২৬ জুলাই তার জন্মবার্ষিকী। ১৮৬৫ সালের এই দিনে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন সিরাজগঞ্জ জেলায়।

এই কবিতার অন্তর্গত তাৎপর্য অতি সুন্দর এবং স্থানকালপাত্র বিবেচনায় দারুণ গুরুত্ববহ। ‘চড়ুই’ (House Sparrow)  আমাদের অনেকের বাসাবাড়িতে বাস করা একটি আবাসিক পাখি। সে মানুষের কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করে এবং তার চরিত্রও তাই। অপরদিকে ‘বাবুই’ (Baya Weaver) সে প্রাকৃতিক পরিবেশের পাখি। মুক্ত পরিবেশের উঁচু তাল গাছ বা উঁচু সুপারি গাছে অতি সুন্দরভাবে ঝুলিয়ে বাসা করে। যা দেখে হৃদয় জুড়ায়।  

ছোট হোক বা ভাঙা হোক নিজগৃহে থাকার পরম শান্তি এবং আপন সন্তুষ্টিটির দিকটি-ই সেই ‘স্বাধীনতার সুখ’ কবিতার মূল ভাবাশ্রিত বিষয়। একটি দারুণ শিক্ষামূলক কবিতা।    

এ বিষয়ে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রখ্যাত পাখি গবেষক ইনাম আল হক বলেন, বৈশিষ্টগত কারণে চড়ুই বা পাতি-চড়ুই (House Sparrow) মানুষের তৈরি বাসাবাড়িতেই থাকতে পছন্দ করে। এদের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ সেন্টিমিটার। পুরুষ পাখিটির দেহ খয়েরি আর স্ত্রী পাখিটির দেহ ধূসর। পুরুষের মাথা ছাই বর্ণের, ঘাড়, পিঠ ও ডানা খয়েরি এবং পেট সাদা। এছাড়াও সহজ করে পুরুষ চড়ুইকে চেনার উপায় হলো, এদের গাল সাদা এবং গলা ও বুক কালো। আর স্ত্রী চড়ুইয়ের মাথা পিঠ, ডানা ও লেজ ধুসর, গলা ও পেট সাদা। চোখ বাদামি। পা লালচে-বাদামি।

আরেকটি বিষয় খেয়ার করলে দেখবেন, পাতি-চড়ুই পাখিটির ইংরেজি নামে সঙ্গে ‘হাউজ’ শব্দটি রয়েছে। তার মানেই হলো আন্তর্জাতিক পাখিবিদরা যখন এর নামকরণ করেছেন তখন তার চারিত্রিক দিকটি খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেই তা করেছেন। ফলে দেখা যাচ্ছে, ওরা কখনোই বন বা প্রাকৃতিক পরিবেশের পাখি নয়, আমাদের ঘরের পাখি।  

‘বাবুই’ সম্পর্কে এ পাখি গবেষক বলেন, দেশি-বাবুই পাখি আকারে পাতি-চড়ুইয়ের মতোই, ১৫ সেন্টিমিটার। দেশি-বাবুই আর পাতি-চড়ুই একই পরিবারের আলাদা আলাদা পাখি। ও থাকে প্রকৃতিতে আর এ থাকে আমাদের গৃহকোণে। দেশি-বাবুইয়ের দেহ বাদামি এবং বাদামি পিঠে অনেক কালচে খাড়া লাইন। পেট লালচে-বাদামি। এদের চোখ বাদামি পুরুষ এবং স্ত্রী পাখি দেখতে প্রায় একই। তবে প্রজননকালে পুরুষ পাখিটির মাথা ও বুক হলুদ, গাল ও গলা কালো হয়। ওরা অত্যন্ত নিঁখুতভাবে অনেক পরিশ্রম করে ঝুলন্ত বাসা তৈরি করে তার পরবর্তী প্রজন্মটিকে রক্ষার জন্যে।

বাংলাদেশ সময়: ১০১৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০২১
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।