ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অস্ট্রেলিয়া

সিডনি বৈশাখী মেলার বর্ণাঢ্য রজত জয়ন্তী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৩ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১৭
সিডনি বৈশাখী মেলার বর্ণাঢ্য রজত জয়ন্তী   সিডনিতে বৈশাখী মেলার অনুষ্ঠান

১৩ মে ২০১৭ (শনিবার) সিডনি অলিম্পিক পার্কের এএনজেড স্টেডিয়ামে দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার এক বর্ণাঢ্য রজত জয়ন্তী উৎসব পালিত হয়েছে। মেলার স্বপ্নদ্রষ্টা প্রয়াত রুহুল হক উজ্জ্বলকে স্মরণের মধ্য দিয়ে ড আব্দুর রাজ্জাক বৈশাখী মেলার রজত জয়ন্তী উৎসব উদ্বোধন করেন। এ উপলক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল এবং বিরোধী দলীয় নেতা বিল শর্টেন বিশেষ বাণী দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, মেলার শুরুতেই মঙ্গল শোভাযাত্রা করা হয়েছে, যা অস্ট্রেলিয়াতে প্রথমবারের মতো উদযাপন করা হলো।      
 
১৪০০ বঙ্গাব্দ থেকে তথা বিগত ২৫ বছর ধরে বঙ্গবন্ধু কাউন্সিল অস্ট্রেলিয়া, সিডনিতে বাংলাদেশের বাইরে সর্ববৃহৎ এই বৈশাখী মেলা আয়োজন করে আসছে।

মেলায় সিডনি, গসফোর্ড, ক্যানবেরা, নিউক্যাসল, বাথ্রাস্ট, অরেঞ্জ, মেলবোর্ন, ব্রিসবেন এবং এডিলেড থেকে প্রায় পঁচিশ হাজার বাংলাদেশি এবং ভারতীয় বাঙালি অংশ নেন।  

সিডনি অলিম্পিক পার্কের এএনজেড স্টেডিয়াম অন্যান্য ইভেন্টের কারণে বরাদ্দ থাকায়, এ বছর বৈশাখী মেলা আয়োজন করতে বঙ্গবন্ধু কাউন্সিলকে প্রায় এক মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে। সিডনি বৈশাখী মেলায় বাঙালিদের মিলনমেলা

প্রসঙ্গত, এএনজেড স্টেডিয়াম একটি অসম্ভব ব্যয়বহুল ভেন্যু। শুধু এই ভেন্যুটির ভাড়াই ১,৯৩০০০ ডলার (এক কোটি দশ লাখ টাকা মাত্র)। অস্ট্রেলিয়ায় এটাই একমাত্র কমিউনিটি ফেস্টিভ্যাল, যেখানে প্রবেশ মূল্যের বিনিময়ে প্রবেশ করতে হয়। তারপরেও অন্যান্য সব মেলার চেয়ে অনেক বেশি লোক সমাগম হয়। সিডনি অলিম্পিক পার্কের একজন কর্ণধার বলেন, ‘এটা সত্যিই আমাদের কাছে বিস্ময়কর, কারণ অস্ট্রেলিয়াতে প্রায় ২০০টি দেশের মানুষ বাস করে। কিন্তু একমাত্র বাঙালি কমিউনিটিই অলিম্পিক পার্কের সবচাইতে প্রেস্টিজিয়াস ভেন্যু এএনজেড স্টেডিয়ামে নববর্ষ উদযাপন করতে পারে’।    

মেলা প্রাঙ্গণে বিভিন্ন রকমের বাঙালি খাবার-দাবারের দোকান থেকে শুরু করে, শাড়ি-চুড়ি-গহনা, বাংলা বইয়ের দোকান, ট্রাভেল এজেন্সি, এয়ারলাইন্স কোম্পানি, ব্যাংক-বিমা, ফোন কোম্পানির স্টল বসেছিল। ‘পরশ’ নামক একটি শাড়ি-গহনার স্টলের স্বত্ত্বাধিকারিনী আলবীনা হক জানান, তার স্টলটি একটু অফ জোনে থাকায় জায়গাটি অপেক্ষাকৃত অন্ধকার; তারপরেও ভালো বিক্রি হয়েছে। খাবারের দোকানগুলো বরাবরের মতোই দারুণ ব্যবসা সফল। তবে বিএসপিসি’র লুচি-লাবড়া ছিল সুপারহিট। এছাড়াও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য আরো কয়েকটি দিক আছে-

(১) আমরা জানি, বিদেশে বড় হওয়া কিংবা জন্মগ্রহণকারী ছেলে-মেয়েরা বাংলায় কথা বলতে পছন্দ করে না। কিন্তু ঘটনা ঘটলো অন্য রকম। ডাঃ জোবায়দা রত্না তার তিন বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেছেন। পরদিন সকালে ঘুম থেকে তার মেয়ে বলে, ‘মা আমি বাংলা ভালোবাসি, আমি আজও শোভাযাত্রায় যাব’।     
(২) মেলায় আগত ২০/২৫ হাজার বাঙালির মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ বঙ্গবন্ধুকে কিংবা আওয়ামী লীগকে পছন্দ করেন না। তারপরেও তারা স্বত:স্ফুর্ত ভাবে বঙ্গবন্ধুর নামের একটি সংগঠন- ‘বঙ্গবন্ধু কাউন্সিল, অস্ট্রেলিয়া’র আয়োজনে এই মেলায় প্রতি বছর অংশগ্রহণ করেন। সিডনি বৈশাখী মেলায় বঙ্গবন্ধু বিষয়ক পরিবেশনা
(৩) দিনব্যাপী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে সবচাইতে আকর্ষণীয় ছিল পথ প্রোডাকশন্সের প্রযোজনায় বঙ্গবন্ধু’র রাজনৈতিক জীবনের গুরত্বপূর্ণ দিকগুলিকে উপজীব্য করে রচিত ‘আই এম দাই ফাদার’ নাটকটি। মেলায় আগত ২০/২৫ হাজার দর্শক নাটকটি উপভোগ করেছেন কিংবা দেখেছেন। আওয়ামী লীগের লোকজন ছাড়া বঙ্গবন্ধু’র উপর রচিত একটি নাটক বিএনপি কিংবা জামায়াতের লোকজনকে ইতিপূর্বে কেউ দেখাতে পেরেছে কি না, আমার জানা নেই। এরকম ঘটনা বিরল। আমার মতে, এবারের মেলার এটাই সবচাইতে বড় অর্জন। যদিও কাউকে কাউকে নাটকটি মঞ্চায়নের সময় কানে আঙ্গুল দিয়ে এবং চোখ বুজে থাকতে দেখা গেছে। পাশাপাশি আবার বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের (১০ জানুয়ারি ১৯৭২) ভাষণের মুহূর্তে অনেককেই চোখের পানি মুছতেও দেখা গেছে। প্রবাসে নতুন প্রজন্মের বাঙালি শিশু-কিশোরদের জন্য ছিল দারুণ ‘আগ্রহোদ্দীপক’।       
 (৪) বাংলাদেশের পাঠ্য-পুস্তক থেকে যেসব গান-কবিতা বাতিল করে দেয়া হয়েছে, সেসব গান-কবিতা নিয়ে সংকলিত কবিতা আলেখ্য ‘নিষিদ্ধ কাব্য’ এর  পরিবেশনা ছিলো চমকপ্রদ। বাংলাদেশের বাইরে থেকে এটি একটি ব্যতিক্রমী সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ। কবিতা আলেখ্যর শুরুতেই নিষিদ্ধ রবীন্দ্র সঙ্গীত ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি’ দিয়ে শুরু করে, লালনের নিষিদ্ধ গান ‘সময় গেলে সাধন হবে না’ দিয়ে শেষ করা হয়। প্রথা বিরোধী কবি হুমায়ুন আজাদের কবিতা ‘বই’, জসীম উদ্দিনের কবিতা ‘দেশ’, ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরের কবিতা ‘আমার সন্তান’, রুদ্র মুহম্মাদ শহীদুল্লাহ এর ‘খতিয়ান’, সুনীলের ‘সাঁকোটা দুলছে’, এবং সানাউল হকের ‘সভা’ কবিতাটি ছিল উল্লেখযোগ্য।  
(৫) সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শেষ অংশে লেজার শো শুরু হলে দর্শকদের উঠে যেতে দেখা যায়। অনেক শিশুকেই বলতে শুনেছি, ‘বাসায় যাব না, ফায়ার ওয়ার্ক্স দেখবো’।  
(৬) বাঙালিদের নববর্ষ উদযাপন এবং বৈশাখী মেলা, অস্ট্রেলিয়ার মূলধারার মিডিয়াগুলোতে গুরত্বের সাথে কাভারেজ পেয়েছে, আমাদের জন্য এটা রীতিমত গৌরবের।      
 
যদিও অনেকেই ভেবেছিল, যথাসময়ে মেলা আয়োজন করতে না পারা, বৃষ্টির সম্ভাবনা, শীতের প্রকোপের কারণে হয়তো কাংখিত সংখ্যক লোক সমাগম হবে না। কিন্তু বাস্তবে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে যথাসময়ে মানুষের ঢল নামে। প্রকৃতিও দারুণ বান্ধবের আচরণ করে। মে মাসের এই সময়ে এমন রোদেলা দিনে নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা কে কবে দেখেছে? ফলশ্রুতিতে মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে সিডনি বৈশাখী মেলা পৌঁছে গেছে নতুন উচ্চতায়। তাই বঙ্গবন্ধু কাউন্সিল অস্ট্রেলিয়া’র সভাপতি শেখ শামীমুল হক তাঁর বক্তৃতায় অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাঙালিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে কার্পন্য করেননি।       

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৮ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১৭
জেডএম/       

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

অস্ট্রেলিয়া এর সর্বশেষ