ঢাকা: প্রায় ৪০০ যাত্রী নিয়ে ভারতের নাগপুরে বিমানের একটি ফ্লাইটের জরুরি অবতরণ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রোপাগান্ডার জবাব দিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা জানিয়েছে বিমান।
গত বুধবার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজ প্রায় ৪০০ যাত্রী নিয়ে ভারতের মহারাষ্ট্রের নাগপুরে অবতরণ করে। ফ্লাইটটি ঢাকা থেকে দুবাই যাচ্ছিল।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) বোসরা ইসলাম গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে জানান, বুধবার ঢাকা-দুবাই রুটের নির্ধারিত ফ্লাইট বিজি-৩৪৭ ঢাকা থেকে রাত ৮টা ৪০মিনিটে ৩৯৬ যাত্রী ও ২২ টন কার্গো নিয়ে যাত্রা শুরু করে। বোয়িং-৭৭৭ উড়োজাহাজটিতে দুজন পাইলট, ১০ জন কেবিন ক্রু ও ৩৯৬ জন যাত্রী ছিল।
যাত্রা পথে ভারতের মহারাষ্ট্র প্রদেশের নাগপুর শহর অতিক্রান্ত হওয়ার সময় ক্যাপ্টেন পেছনের কার্গো কমপার্টমেন্ট থেকে ককপিটে ফায়ার সতর্কীকরণ সংকেত পান। এ সময় যাত্রীদের নৈশভোজ পরিবেশন করা হচ্ছিল। ফ্লাইটের পাইলট-ইন-কমান্ড আইকাও/বোয়িং/সিভিল এভিয়েশন অথরিটির নিয়মানুযায়ী পদক্ষেপ নেন এবং উড়োজাহাজ পরিচালনার দিক নির্দেশানুযায়ী নিকটবর্তী ভারতের নাগপুরের ড. বাবা সাহেব আমবেদকা বিমানবন্দরে বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা ২৭ মিনিটে নিরাপদে অবতরণ করেন। বৈমানিক নাগপুরের বিমান অবতরণের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরই সব যাত্রীকে ‘যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে নাগপুরে অবতরণের’ সিদ্ধান্তটি ইন-ফ্লাইট এনাউন্সের মাধ্যমে জানান।
ফ্লাইটটি নাগপুরে অবতরণের পর সব যাত্রীকে উড়োজাহাজ থেকে নামিয়ে নেওয়া হয়। ৩৯৬ যাত্রী ও ১২ ক্রুসহ সর্বমোট ৪০৮ জনকে বিমানবন্দরে যাত্রীদের জন্য ব্যবহৃত বেশ কয়েকটি বাসে করে উড়োজাহাজটি থেকে আনুমানিক আধা কিলোমিটার দূরে নিয়ে যাওয়া হয়। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এক ঘণ্টা ২০ মিনিটের বেশি সময় ৪০৮ জনকে বিমানবন্দর টার্মিনালে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি। এ সময় পানি ও টয়লেট সুবিধার জন্য যাত্রীরা বার বার অনুরোধ করলেও ভারতের নাগপুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা অনুমতির আনুষ্ঠানিকতার প্রসঙ্গ তুলে সেটি দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। এতে করে বিশেষভাবে বৃদ্ধ ও নারী যাত্রীরা সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পতিত হন। পরবর্তীতে রাত ১টায় টার্মিনালে যাত্রীদের লাউঞ্জে নেওয়ার অনুমতি দেয় ড. বাবা সাহেব আমবেদকা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
এরমধ্যেই নাগপুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে ই-মেইলের মাধ্যমে যাত্রীদের সকালের নাশতা ও দুপুরের খাবারের ব্যবস্থার জন্য ঢাকা থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। একইসঙ্গে আশ্বস্ত করা হয়, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স যাত্রীদের সুবিধার্থে সকল বিষয়ের যাবতীয় খরচাদি বহন করবে। নাগপুর কর্তৃপক্ষ জানায়, যাত্রীদের জন্য বিপুল সংখ্যক খাবার প্রস্তুতের জন্য তাদের ৩-৪ ঘণ্টা সময় প্রয়োজন। বোয়িং-৭৭৭ এর মতো এত বৃহদাকার যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ ওই বিমানবন্দরে নিয়মিত চলাচল করে না। বিমানের যাত্রীদের হোটেলে পাঠানের জন্য অনুরোধ করা হলে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের অস্থায়ী ল্যান্ডিং পারমিট দিতে অপরাগতা জানায়। এ কারণে বাধ্য হয়ে যাত্রীদের টার্মিনালেই থাকতে হয়।
যাত্রীদের দেখাশোনা করার জন্য বিমানের দিল্লিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টেশন ম্যানেজারকে বলা হলে তিনি সেখানে ইনডিগো এয়ারে করে ৯টা ১৫ মিনিট নাগাদ নাগপুরে পৌঁছান। অনুমানিক ভোর ৩টার দিকে যাত্রীদেরকে পানি সরবরাহ করা হয়। সকাল ৭টার দিকে পানি ও চা দেওয়া হয় এবং সকাল সাড়ে ১০টায় নাস্তা পরিবেশন করা হয়। নাগপুর ক্যাটারিংয়ের সীমিত সক্ষমতা থাকায় নাস্তা দিতে সময় বেশি লাগে।
বিমানের ইঞ্জিনিয়ারিং টিম উড়োজাহাজের সব কার্গো ফায়ার এক্সটিংগুইসার ব্যবহৃত হওয়ায় উক্ত উড়োজাহাজ দ্বারা যাত্রীদের দুবাইতে পরিবহন সম্ভব নয়- এই মর্মে মতামত দেয়। সেই মোতাবেক বিমান ঢাকা অপারেশন্স কন্ট্রোল উদ্ধারকারী ফ্লাইটের পরিকল্পনা হাতে নেয় যা ঢাকা থেকে বিজি-১২৬ (দোহা-চট্টগ্রাম-ঢাকা) সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে নামার পর সকাল সাড়ে ৯টায় যাত্রার সময় পরিকল্পনা করা হয়।
ভারতের প্রয়োজনীয় অনুমতিপ্রাপ্ত হওয়ার পর বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা ২৮ মিনিটে উদ্ধারকারী ফ্লাইটটি যাত্রা শুরু করে। বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা বেজে ৪৯ মিনিটে নাগপুরে অবতরণ করে।
নাগপুর বিমানবন্দর রানওয়ে রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য দুপুর ১টা ৩০ মিনিট থেকে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত অবগত হয়ে নাগপুরে অবতরণের পরপরই উক্ত যাত্রীদের উদ্ধারের ফ্লাইটটির ক্যাপ্টেন অপেক্ষমাণ যাত্রীদের বিমানে আসন গ্রহণ এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে যাত্রীদের ব্যাগেজবহনকারী কন্টেইনারসমূহ উদ্ধারকারী ফ্লাইটে লোড করার নির্দেশনা দেন। যাত্রীরা উড়োজাহাজে আসন গ্রহণ করলেও নাগপুর একটি আঞ্চলিক বিমানবন্দর হওয়ায় বৃহদাকার উড়োজাহাজের ব্যাগেজ কন্টেইনার লোড করার জন্য শুধুমাত্র একটি যন্ত্র ও অপর্যাপ্ত কন্টেইনার ট্রলির কারণে কল্পনাতীত সময়ক্ষেপণের পর কন্টেইনার লোডিং সমাপ্ত হয়। এরই মধ্যে রানওয়ে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিমানবন্দর বন্ধ হয়ে যায়। পুনরায় সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বিকাল ৫টা ৪২মিনিটে উদ্ধারকারী ফ্লাইটটি নাগপুর থেকে দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে ও নিরাপদে দুবাইতে অবতরণ করে। নাগপুর বিমানবন্দরে অপেক্ষাকালীন যাত্রীদের দুপুরের খাবার উড়োজাহাজের অভ্যন্তরে পরিবেশন করা হয়। উড্ডয়নের পর যাত্রীদের জন্য রাতের খাবারও পরিবেশিত হয়।
যাত্রীদের দুর্ভোগের সম্ভাব্য কারণ:
১. ভারতের নাগপুর একটি আঞ্চলিক বিমানবন্দর। এই বিমানবন্দরের ধারণ ক্ষমতা সীমিত।
২. নাগপুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিরাপত্তা অনুমতির দীর্ঘসূত্রিতার কারণে যাত্রীদের টার্মিনালে না নিয়ে বহু সময় বাসে অবস্থানের কারণে পানি ও টয়লেটের ব্যবস্থা থেকে যাত্রীরা বঞ্চিত হন।
৩. নাগপুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিমানের উক্ত যাত্রীদের অস্থায়ী অবতরণের অনুমতি প্রদানে অস্বীকৃতি। ফলে বাধ্য হয়েই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ যাত্রীদেরকে হোটেলে না পাঠিয়ে টার্মিনালে অপেক্ষমাণ রাখতে বাধ্য হয়।
৪। নাগপুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ৩৯৬ জন যাত্রীর খাদ্য প্রস্তুতে অন্যান্য বিমানবন্দর সমূহের তুলনায় বেশি সময় গ্রহণ করে।
৫. নাগপুর বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড সাপোর্ট ইকুইপমেন্টের স্বল্পতার জন্য যাত্রীদের ব্যাগেজবাহী কন্টেইনার লোডিংয়ে দীর্ঘ সময়ক্ষেপণ করে। ফলে বিমানবন্দর বন্ধের আগে উড্ডয়ন সম্ভব হয়নি।
৬. টার্মিনালের অভ্যন্তরে যাত্রী লাউঞ্জে বিমানের দিল্লির স্টেশন ম্যানেজার প্রবেশের পাশ ইস্যুতে নাগপুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ কালক্ষেপণ করায় যাত্রীবৃন্দের সঙ্গে সর্বক্ষণ যোগাযোগ প্রতিস্থাপন সম্ভব হয়নি।
ভারতের স্থানীয় বিধিনিষেধ ও নাগপুর বিমানবন্দরের সীমাবদ্ধতার কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি হ, যা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রচারিত প্রোপাগান্ডার বিষয়ে প্রতিবাদ প্রসঙ্গে
এয়ারক্রাফটের ভেতরে ভিডিও ধারণ নিষিদ্ধ হলেও নাগপুরের উদ্ভূত পরিস্থিতিকে ব্যবহার করে বর্তমান সরকার ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে বিব্রত করার জন্য একজন নারী ও একজন পুরুষ যাত্রী উক্ত ফ্লাইটের ভেতরে যাত্রী সাধারণের প্রতি উসকানিমূলক বক্তব্য দেয় ও ভিডিও ধারণ করে সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তা প্রচার করে। তারা ফ্লাইটে ক্রমাগত এসব করলেও অন্যান্য যাত্রীরা তাদের কথা শোনেনি ও ধৈর্য নিয়ে ফ্লাইটে অবস্থান করে কর্মরত ক্রুদের সহযোগিতা করে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স যাত্রীদের ধৈর্য ধারণ ও ফ্লাইটে ক্রুদের সহায়তা করার জন্য তাদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে। একই সঙ্গে উল্লেখিত প্রোপাগান্ডার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে।
সর্বোপরি, নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত পরিস্থিতির কারণে সম্মানিত যাত্রীদের সঙ্গে সংঘটিত হওয়া অসুবিধাসমূহের জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫
এমআইএইচ/এমজে