ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

এভিয়াট্যুর

আঁতকে দেওয়া কাতার এয়ারওয়েজ!

ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৭ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৪
আঁতকে দেওয়া কাতার এয়ারওয়েজ!

ঢাকা: ফুরফুরে মেজাজেই ২২ ফেব্রুয়ারি রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অপেক্ষা করছি। গন্তব্য স্পেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর লিওনেল মেসির বার্সেলোনা।

মাঝে কাতারের রাজধানী দোহায় দুই ঘণ্টার যাত্রাবিরতি হল। কিছুক্ষণ পরই বোর্ডিং করে বিশ্বের নামী কাতার এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে চড়ে বসব। কিন্তু শুরুতেই হোঁচট খেলাম।

রাত ৩টার ফ্লাইট এক ঘণ্টা বিলম্বে ছাড়বে। এরপর অপেক্ষার পালা। বোর্ডিং পার করে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা শেষে আসনে বসলাম। ‘বিশ্বের পাঁচতারকা এয়ারলাইন’- এটাই তাদের শ্লোগান। তাই ধরেই নিয়েছিলাম ফ্লাইটে উঠলেই পাঁচতারকা হোটেলের মতো ঝকঝকে কোনো উড়োজাহাজের দেখা পাবো।

কিন্তু আশায় গুড়েবালি। এয়ারবাস এ ৩৩০ মডেলের উড়োজাহাজ হলেও গড়নে মলিনতার ছাপ। সিট কিংবা পুরো উড়োজাহাজের কন্ডিশন কোনোটিই ভালো মনে হল না।

চারদিকে ভালো করে দেখে আসনে বসলাম। নিজের আসনে বসে টেলিভিশন অন করতেই ভড়কে গেলাম। একি! কিছুই দেখতে পাচ্ছি না! রিমোটও ঠিকমতো কাজ করে না। বাটনগুলো এক দুইবার নয়, বহুবার টিপে টিপে কাজ করতে হচ্ছে। কোনোটি একেবারেই কাজ করছে না।

পুরো স্ক্রিনজুড়ে কয়েকবার মানুষের মাথার মতো কী একটা দেখতে পেলাম। এরপর আর স্পষ্ট করে কিছুই দেখতে পেলাম না। কেবিন ক্রুকে ডেকে বিষয়টি জিজ্ঞেস করতে জবাব দিলেন ‘ঠিক আছে’। তাকে ভালো করে দেখতে বলার পরও একই উত্তর দিলেন। ঢাকা ছেড়ে যাওয়া যাত্রীদের ৯৫ শতাংশই বাংলাভাষী। অথচ টেলিভিশনে ইংরেজি, হিন্দি, চাইনিজ, স্প্যানিশসহ নানা ভাষার চলচ্চিত্রের তালিকা দেখতে পেলাম টিভিতে। গানের তালিকায়ও একই অবস্থা। বাংলা ভাষার গান কিংবা ছবি নেই। মাত্র একটি বাংলা ছবি ‘অশনি সংকেত’র নাম খুঁজে পেলাম।  

গান, চলচ্চিত্রের তালিকা স্ক্রিনে তা পড়া গেলেও ভিডিওটি অন করার পর তা আর দেখা যাচ্ছে না। এভাবেই পুরো পথ অস্পষ্ট টেলিভিশন স্ক্রিনে চোখ রেখে দোহায় অবতরণ করল কাতার এয়ারওয়েজের উড়োজাহাজটি।

ঢাকা টু দোহার পথের যাত্রীদের অধিকাংশকেই প্রবাসে শ্রম দিয়ে দেশে অর্থ পাঠানো সেই সোনার মানুষ মনে হলো। এই যাত্রীদের সবাই বিদেশে শ্রম দেন। তারা তুলনামূলক কম অর্থ উপার্জন করেন। তাই বলে এদের কেউই কম ভাড়া দিয়ে টিকেট কাটেননি। তবে যাত্রীদের সেবায় যারা নিয়োজিত সেইসব কেবিন ক্রুদের ব্যবহারে কষ্টই পেতে হলো। কেউ যদি বাংলায় কথা বলে তার প্রতি ভালো আচরণ চোখে পড়েনি। বাংলাদেশি যাত্রীদের যারা ইংরেজিতে কথা বলছেন তাদেরকে একটু হলেও সমীহ করে কথা বলতে দেখা যায় কেবিন ক্রুদের। যত রূঢ় আচরণ তা বাংলায় কথা বলা মানুষের প্রতি।

ঢাকা থেকে ফ্লাইট ছাড়তে এক ঘণ্টা দেরি হওয়ায় দোহার বিশাল বিমানবন্দরে নেমে দম ফেলার ফুসরত নেই। উড়োজাহাজ থেকে নেমে প্রায় আধাঘণ্টার মতো বাসযাত্রা। এরপর টার্মিনালে পৌঁছলাম। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা চৌকি পারাপারে চরম হয়রানির শিকার হতে হল। দীর্ঘ লাইন শেষে আর্চওয়ের আগে গায়ের জ্যাকেট ছাড়াও মানিব্যাগ, মোবাইল বেল্ট, হাত ঘড়ি খুলতে হল। আর্চওয়ে পার হতেই এতগুলো জিনিস হাতে তুলতে না তুলতে নিরাপত্তাকর্মীরা দ্রুত সরে যেতে বললেন।

যদিও যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া হয়নি। কিন্তু মনে হলো ওই ধরনের কোনো দেশের নিরাপত্তা চৌকি পার হলাম। আরেক দফা নিরাপত্তা চৌকি পার হয়ে উঠতে হবে বার্সেলোনাগামী ফ্লাইটে। এবার বোর্ডিং পার হতে গিয়ে নিরাপত্তাকর্মী পাসপোর্টে ভিসার ওপর এমনভাবে আঙুল ঘষতে লাগলেন, দেখে মনে হল পাসপোর্টই বুঝি ছিঁড়ে যাবে। ভারতীয় এই নিরাপত্তাকর্মী সব পাসপোর্টের ভিসাতেই এভাবে আঙুল ঘষলেন।

আঙুল ঘষা পর্ব শেষ হওয়ার পর আবারও বাসে আধাঘণ্টার যাত্রা শেষে উঠলাম বার্সেলোনাগামী এয়ারবাস এ ৩৩০ উড়োজাহাজে।

একই মডেলের উড়োজাহাজেই ঢাকা থেকে দোহায় পৌঁছেছিলাম। তবে ঢাকা টু দোহা আর দোহা টু বার্সেলোনার উড়োজাহাজের চেহারায় অনেক পার্থক্য। ভেতরের আসন, কুশন সবকিছুই ঝকঝকে। টেলিভিশন স্ক্রিনের ছবিও স্পষ্ট। ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া উড়োজাহাজের রিমোটটি আসনে হাতলের ভেতরে ঢোকানো ছিল। এবারেরটি সম্পূর্ণ আলাদা। এর ফলে হাতে নিয়ে ইচ্ছেমতো চ্যানেল পাল্টে ফেলা গেল!

বাংলাদেশ সময়: ০২২০ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।