ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

মেসির শহরে কয়েকদিন

ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৩ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৪
মেসির শহরে কয়েকদিন ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বার্সেলোনা, স্পেন থেকে ফিরে: ফুটবল স্টার লিওনেল মেসির জন্ম ল্যাটিন আমেরিকার আর্জেন্টিনায় নাকি স্পেনের বার্সেলোনায়। এই প্রশ্ন উঠতেই পারে।

কারণ মাত্র ১৩ বছর বয়সে ফুটবলের এই ছোট জাদুকর বার্সেলোনার উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়েছিলেন।  

দিয়াগো ম্যারাডোনার পর আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় তারকা নি:সন্দেহে লিওনেল মেসি। তবে জন্মটুকু পর্যন্ত। এরপর মেসি নাম, যশ, খ্যাতি, অর্থ যা কিছুই অর্জন করেছেন তার সবটাই বার্সেলোনায়। স্পেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বার্সেলোনার সঙ্গে মেসির নামটা তাই জড়িয়ে আছে অঙ্গাঙ্গীভাবে।

হরমোনের মত গুরুত্বপূর্ণ একটি সমস্যা নিয়ে মেসি ভূমধ্যসাগরের তীর ঘেঁষা বার্সেলোনা শহরে পা রেখেছিলেন। সঙ্গে ছিলেন তার বাবা। ছেলের এই শারীরিক অবস্থা এবং মাত্র ১৩ বছরের অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলের ভবিষ্যত কি। শুধু এই ছেলের ওপর ভর করে পুরো পরিবার নিয়ে বার্সেলোনা চলে আসবেন। এতসব চিন্তা নিয়েই ছেলেকে নিয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন বার্সেলোনায়। যার জীবন জড়িত বার্সেলোনার সঙ্গে, সেই মেসি কিভাবে এখানে এসে বাবাকে হতাশ করেন!

না হতাশা নয়, বার্সেলোনায় পা দিয়ে প্র্যাকটিস ম্যাচে ৫ গোল দিয়ে চমকে দিয়েছিলেন বার্সার ক্লাবের কর্মকর্তাদের। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি এই ক্ষুদে ফুটবলারকে।

মেসিকে নিয়ে আর্জেন্টিনায় কতটা উম্মাদনা জানি না, তবে বাংলাদেশে যে তাকে ঘিরে উম্মাদনা তার চেয়ে কম নয় তা বুঝতে পারি। আমি নিজে আর্জেন্টিনার সমর্থক নই। তবে মেসির খেলার ভক্ত। সেই ভক্তের শহরে পা রাখতে গিয়ে বেশ উত্তেজনা বোধ করছিলাম।  

ওয়ার্ল্ড মোবাইল কংগ্রেসে যোগ দিতে গত ২২ ফেব্রুয়ারি রওনা হই বার্সেলোনার উদ্দেশ্যে। বিমানবন্দরে নেমে সরাসরি চলে যাই হোটেলে। আধাঘন্টার রাস্তা পার করে গন্তব্যে পৌছাই। পরদিনই মোবাইল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতির জন্য সকাল সকাল ঘুমিয়ে পড়ি।

হোটেল আর কনফারেন্স হলের মধ্যে কেটে যায় প্রথম দু’দিন। তৃতীয় দিন কনফারেন্স শেষে আমরা বার্সেলোনা শহরে ঘোরার সুযোগ পেলাম। সঙ্গে ছিলেন ঢাকা থেকে যাওয়া ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের হেড অব আউটপুট গোলাম কিবরিয়া, ডেইলি স্টারের আবদুল্লাহ মামুন, চ্যানেলটোয়েন্টিফোরের নিউজ এডিটর হাসান ইমাম রুবেল, ঢাকা ট্রিবিউনের সজল জাহিদ, প্রথম আলোর মোছাব্বের, নিউএইজের আহমেদ শাওকী ও গ্রামীণফোনের ডিজিএম মোহাম্মদ হাসান।       

ভেবেছিলাম এ দলে আমিই বোধ হয় মেসির একমাত্র ভক্ত। কিন্তু আমাদের দলের কারো মধ্যেই মেসিকে নিয়ে উত্তেজনার কমতি নেই। সেটি টের পেলাম শহরের শপিং মলগুলোতে ঘুরতে ঘুরতে। সবাই মেসির জার্সি খুঁজছে। শুধু জার্সি হলে চলবে না। অর্জিনাল জার্সি চাই। দেখা গেল অর্জিনাল জার্সির দাম বাংলাদেশি টাকায় ৩০ হাজার টাকারও বেশি। টাকা যত লাগুক জার্সি কেনা থেকে কেউই পিছু হটতে রাজি নয়।

পরের দিনও যথারীতি কনফারেন্স শেষে সবাই আবার ছুটল শপিং মলে। এবার মেসির স্যুভেনির কিনতে ব্যস্ত সবাই। আমাদের টিমের সিনিয়র কিবরিয়া ভাই থেকে শুরু করে একদম জুনিয়র মোছাব্বের সবারই স্যুভেনির চাই। এদিন শপিং মল ও রাস্তার ফুটপাথ ধরে ঘুরতে ঘুরতে টের পেলাম, মেসি এই শহরে কতটা জনপ্রিয়।

বিমানবন্দরের খুব কাছেই ভূমধ্যসাগরের তীর ঘেঁষা আবাসিক এলাকায় আমাদের হোটেল। ট্যাক্সিক্যাবে করে কনফারেন্স সেন্টারে যেতে যেতে ট্যাক্সিচালকের কথায়ও টের পেলাম মেসির জনপ্রিয়তা।

তিনি বলছেন, তোমরা যে এলাকায় রয়েছো মেসিতো এখানেই থাকেন। একথা শুনে মনটা খুশিতে ভরে উঠলো। কিন্তু নির্দিষ্ট করে সড়ক নাম্বার ও বাড়ি নাম্বার বলতে পারলেন না। তাই মেসির বাড়ি দেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলাম।  

স্পেনের অধিকাংশ জনতা স্প্যানিশ হলেও বার্সেলোনার অধিবাসীরা ভিন্ন জাতি। এদের সবাই কাতালান। এখানকার মানুষ মেসিকে এতটাই আপন করে নিয়েছে যেন মনে হয়, মেসি আর্জেন্টাইন নয়, পুরোদস্তুর কাতালান।

আর মেসিকেও কিভাবে বিক্রি করতে হয় তাও জানে বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাব। বার্সেলোনা শহরের শপিংমলগুলোতে মেসির জার্সি ছাড়াও রয়েছে হরেক রকমের স্যুভেনির। এসবই বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। কারণ ওরা জানে দাম যতই বেশি চাওয়া হোক না কেন মানুষ মেসিকে ভালোবাসে। তাই ওর নামে যা পাবে তা-ই কিনবে। আসলেই তাই। প্রতিটি শপিং মলেই মেসির জার্সি ও স্যুভেনির বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। স্প্যানিশরা না হয় ওকে ভালোবেসে এসব কিনছে। কিন্তু ভিন্ন দেশি পর্যটকেরাও তো পিছিয়ে নেই।

এতসব কেনাকাটাতে সবার মন ভরল না। মেসির খেলা দেখতে হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের। ১ মার্চ আমরা বার্সেলোনা ছেড়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবো। এই সময়ের মধ্যে বার্সেলোনা ক্লাবের আর কোনো খেলা নেই। তাই বলে মেসি যে মাঠে খেলে এত নাম যশ খ্যাতি পেয়েছে সেই মাঠে না গেলে কি হয়! চলে আসার আগেরদিন আমরা গেলাম বার্সেলোনা ক্লাব মাঠে। এক লাখ লোকের ধারণ ক্ষমতার মাঠটিতে ঢুকতেই যেন মনটা ভরে গেল। বিশাল মাঠ। এতো গেল মাঠের কথা। এই মাঠেই রয়েছে বার্সেলোনা ফুটবল ক্লাবের জাদুঘর। এখানে বার্সেলোনা যতগুলো ট্রফি জিতেছে সব শোভা পাচ্ছে। ক্লাবের প্রথম দলের জার্সি, বুট থেকে শুরু করে শোভা পাচ্ছে নানা স্যুভেনির। সব শেষে এলাম ক্লাবের এসব স্যুভেনির ও জার্সি বিক্রির দোকানটিতে। এখানেও একই দৃশ্য। দেখলাম কিভাবে তারা মেসির জার্সি ও নানারকম স্যুভেনির বিক্রি করছে।



‘শেষ হইয়াও হইল না শেষ’। আরো চমক রয়েছে। মেসিকে পেলাম না সত্যি, তবে মেসির সঙ্গে ছবি তোলার সুযোগ এলো। দলের সবাই হুড়মুড় করে ছবি তোলার জন্য ব্যস্ত হয়ে গেল। ছবি তোলার পর মনে হলো- ঢাকায় গিয়ে যদি দেখাই কেউই বুঝতে পারবে না সত্যিই মেসির সঙ্গে ছবি তুলেছি, নাকি তুলিনি।

এখানে আসার আগেই জানতাম বার্সেলোনাকে বলা হয়, বাইসাইকেলের শহর। কথাটি অমূলক নয়। শহরের প্রত্যেকটি মোড়ে রয়েছে শতশত সাইকেল স্ট্যান্ড। মাসিক ভাড়া হিসেবে এই শহরের লাখ লাখ মানুষ এসব বাইসাইকেল ব্যবহার করে। তবে গত কয়েকদিনের ঘোরাঘুরিতে মনে হলো বাইসাইকেল নয়, বার্সেলোনা আসলে মেসির শহর।       

বাংলাদেশ সময়: ১১৩১ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।