ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

এভিয়াট্যুর

ইউনাইটেডের দোষেই প্রাণ যাচ্ছিল ৪১ জনের

ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৪
ইউনাইটেডের দোষেই প্রাণ যাচ্ছিল ৪১ জনের ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষের দোষেই দুর্ঘটনায় প্রাণ যাচ্ছিল ৪১ যাত্রীর। সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না করে উড়োজাহাজটি আকাশে ওড়ানোর কারণেই কক্সবাজার বিমানবন্দরে দুর্ঘটনার শিকার হয় ফ্লাইটটি।


 
এতে যাত্রীরা কেউ হতাহত না হলেও বড় ধরনের দূর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচেছেন যাত্রীরা।

রোববার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের এটিআর ৭২ (রেজিষ্ট্রেশন নম্বর: এস২ এএফএন) কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণের পর এর সামনের নোজ হুইল ভেঙে উড়োজাহাজের বডির ভেতরে ঢুকে যায়। যদি কোনোভাবে এটি ছিটকে পড়তো তাহলে যাত্রীদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়তো।

বাংলানিউজের অনুসন্ধানে এ তথ্য জানা গেছে। বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের একাধিক সূত্রে এ অনুসন্ধানের সত্যতা মিলেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের রক্ষণাবেক্ষণ ছিল খুবই নিম্নমানের। দুর্ঘটনা কবলিত এটিআর ৭২ উড়োজাহাজটি অনেকদিন ধরেই ত্রুটিপূর্ণ ছিল। সাধারণত উড়োজাহাজের নোজ হুইলের হাইড্রোলিক স্টুর্ট শাইনিং পার্ট থাকে ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি। কিন্তু ইউনাইটেডের এই উড়োজাহাজটির হাইড্রোলিক প্রেসার বারবার কমে যাচ্ছিল বেশ কয়েকদিন ধরেই। এ কারণে এয়ারওয়েজের প্রকৌশল ও রক্ষণাবেক্ষণ শাখা থেকে এর হাইড্রোলিক প্রেসার ৬ ইঞ্চির জায়গায় তা প্রায় ১২ ইঞ্চি রাখা হয়। হাইড্রোলিক প্রেসারের এ মাত্রা বিপদজনক।

হাইড্রোলিক প্রেসার কমে যাওয়ার ত্রুটি না সারিয়ে তা বাড়িয়ে দিয়ে উড্ডয়ন করছিল উড়োজাহাজটি। এটি কোনোভাবেই বিধিসম্মত নয়।

এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একজন বৈমানিক বাংলানিউজকে বলেন, এই বিপদজনক মাত্রার হাইড্রোলিক নিয়ে কখনোই উড়োজাহাজ চালানো উচিত নয়। কারণ, বৈমানিক যখন রানওয়েতে অবতরণ করবেন, তখন ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি প্রেসার মাথায় রেখেই অবতরণ করবেন। কিন্তু এখানে হাইড্রোলিক প্রেসার দ্বিগুণ থাকায় অবতরণের সময় নোজ হুইলের ওপর অতিরিক্ত চাপে তা ভেঙে যায়।      

অবশ্য ইউনাইটেডের রক্ষণাবেক্ষণ সব সময়ই নিম্নমানের। মাসখানেক আগে ঢাকা থেকে ওয়েদার রাডার ছাড়াই সৈয়দপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় ইউনাইটেডের একটি উড়োজাহাজ। যে কারণে ঝড়ের কবলে পড়ে তা দুর্ঘটনায় পড়ার উপক্রম হয়েছিল। একইভাবে নিম্নমানের রক্ষণাবেক্ষণের কারণে উড়োজাহাজের সামনের গ্লাস ভেঙে দুই বৈমানিক আহত হয়েছিলেন।

দূর্ঘটনার পর উড়োজাহাজটি রানওয়ে থেকে সরাতে না পারায় প্রায় ২২ ঘণ্টা বন্ধ থাকে কক্সবাজার বিমানবন্দর।

দুর্ঘটনার পর কক্সবাজার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা দিয়েছিল। পরবর্তীতে বিকেল সাড়ে ৩টায় এটি সরানো সম্ভব হয়। এ দুর্ঘটনার পর বিমানবন্দরে আর কোনো উড়োজাহাজ অবতরণ করতে পারেনি। কারণ, কক্সবাজার বিমানবন্দরে মাত্র একটি রানওয়ে।

ঢাকা থেকে বিকেল ৪টায় উড়োজাহাজটি ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। ফ্লাইটের ক্যাপ্টেন মামুন ও ফার্স্ট অফিসার নাজিম কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণের পর রানওয়ের শেষ মাথায় এসে ১৮০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে বাক নেওয়ার সময়ই সামনের নোজ হুইল ভেঙে উড়োজাহাজের বডির ভেতরে ঢুকে যায়। এরপর ক্যাপ্টেন উড়োজাহাজের ইঞ্জিন বন্ধ করে কন্ট্রোল টাওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।   

সোমবার সারাদিন চেষ্টার পর উড়োজাহাজটিকে বিমানবন্দরের পার্কিংয়ে নিয়ে আসা হয়।

এ বিষয়ে বাংলানিউজের পক্ষ থেকে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার কামরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি অনেক টেকনিক্যাল হওয়ায় এ নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করবো না।

বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৪ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।