ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

৩৫,০০০ ফুট ওপরে পাঁচতারা হোটেল

ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৪
৩৫,০০০ ফুট ওপরে পাঁচতারা হোটেল ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

দুবাই থেকে: ১,৮০০টির অধিক বিনোদন চ্যানেলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৪০০টির অধিক ছায়াছবি, হাজারো টিভি প্রোগ্রাম, শাস্ত্রীয় থেকে শুরু করে আধুনিক মিউজিকের বিশাল সংগ্রহ। কী নেই এখানে?

আকাশে বসেই এসব উপভোগ করতে পারছেন এমিরেটস এয়ারলাইনের একজন যাত্রী।

ছোট কোনো স্ক্রিন নয়, যাত্রীরা বড় স্ক্রিনেই এসব বিনোদন চ্যানেল উপভোগ করছেন।
 
সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে এয়ারবাস এ৩৮০ ফ্লাইট চলাকালীন ইন্টারনেট এবং মোবাইলফোনও ব্যবহার করতে পারেন যাত্রীরা।

প্রথম শ্রেণীর যাত্রীদের জন্য দু’টি অনবোর্ড শাওয়ার স্পা এবং প্রথম ও বিজনেস শ্রেণী যাত্রীদের জন্য বহুলআলোচিত অনবোর্ড লাউঞ্জ সুবিধা প্রদান করছে এমিরেটস।

এমিরেটসে ফ্ল্যাগশিপ ক্যারিয়ার দ্বিতল এয়ারবাস এ৩৮০’র উপরের তলায় প্রথম শ্রেণীতে ১৪টি ব্যক্তিগত স্যুইট, বিজনেস শ্রেণীতে ৭৬টি বিছানায় রূপান্তরযোগ্য আরামদায়ক আসন এবং নিচ তলায় সুপরিসর ইকোনমি শ্রেণীতে পর্যাপ্ত লেগ স্পেসসহ ৪২৯টি আসন রয়েছে।

এমিরেটস বহরে বর্তমানে ৪৯টি এ৩৮০ উড়োজাহাজ রয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী সর্বাধিকসংখ্যক ২৬টি গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে এটির সাহায্যে।

এতো গেল বিনোদন চ্যানেলসহ সর্বাধুনিক প্রযুক্তি বিষয়ক সেবার কিছু কথা। যেকোনো সেবার জন্য মুহূর্তেই ছুটে আসছেন এমিরেটসের কেবিন ক্রুরা। নিয়মিত খাবার ছাড়াও একজন যাত্রী কোনো খাবার চাইলে তাও সরবরাহ করা হচ্ছে।

সোমবার সকালে ঢাকা থেকে এমিরেটসের অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজ ইকে ৫৮৩ ছুটলো দুবাইয়ের উদ্দেশ্যে। ওই ফ্লাইটের একজন যাত্রী হিসেবেই পেলাম দারুণ সব অভিজ্ঞতা।

এমিরেটসে কর্মরত বাংলাদেশের ছেলে কেবিন ক্রু মাজহারুল জানালেন, এমিরেটস এয়ারলাইনের ইন-ফ্লাইট সেবা অনেক আগেই সুনাম কুড়িয়েছে। সম্প্রতি ইন-ফ্লাইট বিনোদন ব্যবস্থায় এমিরেটস আইস (ইনফরমেশন, কমিউনিকেশন, এন্টারটেইনমেন্ট) উপর্যুপরি ১০ম বারের মতো বিশ্বের সেরা এয়ারলাইন ইন-ফ্লাইট বিনোদন পুরস্কার লাভ করেছে।

পানির নিচে পাঁচতারকা হোটেল রয়েছে, রয়েছে ভূমি থেকে কয়েক’শ ফুট উঁচুতেও। তাই বলে ৩৫ হাজার ফুট ওপরে। কেউ বলবে, এটি আর নতুন কী, কেউ হয়তো বলবে-এটি সম্ভব নয়। ৩৫ হাজার ফুট মানে তো মেঘের জলরাশি ছাড়িয়েও বহু উঁচুতে চলে যাওয়া। আসলেই তাই।

ব্যবসায়ী নাসিরুদ্দিন আহমেদ বললেন, বিশ্বের অন্যতম সেরা এয়ারলাইন এমিরেটস এটি করে দেখিয়েছে। আর পাঁচ তারকা মানে পাঁচ তারকা হোটেলই। এতে কোনো কমতি নেই।

এমিরেটসে চড়েই তিনি ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বহু দেশে গিয়েছেন। ব্যবসার কাজে তাকে প্রায়ই ইউরোপ ও আমেরিকা যেতে হয়। সোমবার দুবাই হয়ে তিনি ব্যবসার কাজে যাচ্ছিলেন জার্মানির মিউনিখে।

নাসিরুদ্দিন আহমেদ ফ্লাইটে বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি বিশ্বের বহু এয়ারলাইনে চড়েছি। কিন্তু এমিরেটসে চলে যে আনন্দ ও সেবা পাই তা অন্য কোথাও পাই না। তাই নিয়মিতই এমিরেটসে যাতায়াত করি।
 
শুধু বড়দের কথা নয়, গত বছর ২০ লাখ শিশু যাত্রী এমিরেটসে ভ্রমণ করেছে। গত ২০১৩-১৪ সালে ২৩ লাখ শিশু এমিরেটসে ভ্রমণ করেছে। এমিরেটসে দুই থেকে ১১ বছরের যাত্রীদের শিশু হিসেবে গণ্য করা হয়।

ভ্রমণকালীন ও ভ্রমণের পূর্বে শিশুদের জন্য বিশেষ আয়োজন রয়েছে এমিরেটসে। দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এমিরেটসের জন্য নির্ধারিত তিন নম্বর টার্মিনালে অবস্থিত লাউঞ্জগুলোতে শিশুদের খেলাধুলার জন্য বিভিন্ন খেলার সামগ্রী দ্বারা সুসজ্জিত আলাদা স্থান রয়েছে। শিশুসহ যাত্রীদের বোর্ডিংয়ের ক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়। ছোট শিশুদের জন্য রয়েছে সৌজন্যমূলক বেবি স্ট্রলার, চেঞ্জিং টেবিলসহ অন্যান্য সুবিধা।

ভ্রমণকালীন এমিরেটস ইনফ্লাইট বিনোদন ব্যবস্থায় শিশুদের বিনদোনের জন্য স্বতন্ত্র ২০টির অধিক টিভি চ্যানেল নির্ধারিত করা আছে। চ্যানেলগুলোতে ৬০টির অধিক জনপ্রিয় ছায়াছবি, কার্টুন, ইন্টারঅ্যাকটিভ গেম, পোডকাস্ট ও সিডি উপভোগ করতে পারে শিশুরা। শিশুদের জন্য আলাদা জনপ্রিয় মিউজিকও সংগ্রহ রয়েছে।

ফ্লাইটে শিশুদের খেলাধুলার জন্য রাখা হয়েছে বিভিন্ন জনপ্রিয় মনস্টার, ব্যাকপ্যাক। সৌজন্যমূলকভাবে শিশুদের এগুলো প্রদান করা হয়। শিশুদের জন্য ভেজিটারিয়ানসহ আলাদা খাবার মেন্যুর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

বড়দের মতো শিশু যাত্রীদের জন্য রয়েছে স্বতন্ত্র ফ্রিকুয়েন্ট-ফ্লায়ার প্রোগ্রাম-স্কাইসার্ফার। অর্জিত মাইলের বিনিময়ে তারা সৌজন্যমূলক ফ্লাইট, খেলনা সামগ্রী, বইপত্র, দুবাইয়ের বিভিন্ন আকর্ষণীয় স্থানে প্রবেশ সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা গ্রহণ করতে পারে।

এমিরেটসের ভ্রমণ ব্যবস্থাপনা শাখা এমিরেটস হলিডেজ শিশুসহ পরিবারগুলোর জন্য টেইলর মেড প্যাকেজ অফার করে থাকে। এমিরেটস হলিডেজের তালিকাভুক্ত বিভিন্ন হোটেলে শিশুদের জন্য আলাদা কিডস্ এবং টিনস্ ক্লাবও রয়েছে।

এমিরেটস্ বিশ্বের প্রথম এয়ারলাইন হিসেবে তাদের ইন-ফ্লাইট বিনোদন ব্যবস্থা আইস ডিজিটাল ওয়াইডস্ক্রিনে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী যাত্রীদের চলচ্চিত্র উপভোগের সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে অডিও বর্ণনা প্রবর্তন করেছে।

প্রাথমিকভাবে ১৬টি ওয়াল্টডিজনি স্টুডিওর চলচ্চিত্রে অডিও বর্ণনা সংবলিত সাউন্ডট্র্যাক থাকবে। এ সব চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে, ফ্রোজেন, সেভিং মি. ব্যাংকস, কারস-২, মনস্টার ইউনিভার্সিটি, টয় স্টোরি, পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান ইত্যাদি। নতুন ব্যবস্থায় চলচ্চিত্রের কথোপকথনের মধ্যবর্তী দৃশ্যগুলো বোঝানোর জন্য রেকর্ডকৃত অডিও ব্যাখ্যা সংযোজন করা হয়েছে। চলচ্চিত্রের সাউন্ডট্র্যাক তার নিজস্ব গতিতেই চলতে থাকবে।

এমিরেটস্ ২০০৭ সালে ওয়াল্টডিজনি স্টুডিওস মোশন পিকচার্সের সহযোগিতায় প্রথমবারের মতো শ্রবণ প্রতিবন্ধী বিমানযাত্রীদের জন্য ‘ক্লোজড ক্যাপশন’ প্রযুক্তি চালু করে। একইসঙ্গে অভিনয়কারীদের কথোপকথন সাব-টাইটেলের মাধ্যমে প্রদর্শন করা হয়। ক্লোজড ক্যাপশন ব্যবস্থায় সাউন্ড এফেক্টেরও বর্ণনা অন্তর্ভুক্ত থাকে। চলতি অক্টোবর মাসে এমিরেটসের ফ্লাইটে ৫০টির অধিক ক্লোজড ক্যাপশন ছায়াছবি প্রদর্শিত হচ্ছে।

** ফ্যাশন-ফুটবলের শহরে ইশতিয়াক

বাংলাদেশ সময়: ০৩২৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।