ঢাকা: জোর গতিতে এগিয়ে চলছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি। সারা দেশে রাজনৈতিকভাবে সারা ফেলানোর মতো একটি ঐতিহাসিক সম্মেলন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।
আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে চাঙ্গা এবং দেশের মধ্যে আওয়ামী লীগের অনুকূলে একটি রাজনৈতিক সারা ফেলতে দলটি এ সম্মেলনকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। সে অনুযায়ী এ সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। রাজধানীসহ সারা দেশে বর্ণিল সাজসজ্জার মাধ্যমে উৎসবমুখর পরিবেশের পাশাপাশি সম্মেলনে লাখ নেতাকর্মী সমবেত করারও প্রস্তুতি চলছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের বক্তব্যেও এ ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
শুক্রবার (০৭ অক্টোবর) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের মঞ্চ নির্মাণ ও ভেন্যুর প্রস্তুতি কাজ দেখতে গিয়ে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এ সম্মেলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামী ২০১৯ সালে যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেই নির্বাচনসহ এ সরকারের সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে এবারের সম্মেলন অন্যান্য সম্মেলনের চেয়ে আলাদ।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বাংলানিউজকে বলেন, এ সম্মেলন শুধু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর নয়, এতে সারা দেশের মানুষের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটবে। আওয়ামী লীগ আগামী দিনে রাষ্ট্র পরিচালনায় কি করবে নির্বাচনকে সামনে রেখে এ সম্মেলনে দলের ঘোষণা পত্রে তার প্রতিফলন ঘটবে। সেটা বাস্তবায়নে যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে।
আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ২০ তম ত্রি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের ভেন্যু নির্ধারণ করে সেখানে মঞ্চ, প্যান্ডেল নির্মাণসহ সাজসজ্জার কাজ চলছে।
সম্মেলন মঞ্চ নির্মাণ করা হচ্ছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকা আকৃতির। ইতোমধ্যেই নৌকা আকৃতির মঞ্চের নকশা তৈরি করা হয়েছে। এই নৌকার এক মাথায় রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি আরেক মাথায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি। এই নকশা ধরে সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড মঞ্চ তৈরি হবে। মঞ্চটি দেড়শ’ ফুট লম্বা ও ৪৮ ফুট চওড়া হবে। মঞ্চে প্রায় ১৫০ জনের বসার ব্যবস্থা থাকবে। দু’পাশে থাকবে ৩৫ ইঞ্চি উচ্চতার এলইডি ডিজিটাল মনিটর। এ মনিটরে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরা হবে।
আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, এবারের সম্মেলনে কাউন্সিলর হবেন ৬ হাজার ৫৭০ জন। এর দ্বিগুণেরও বেশি থাকবেন ডেলিগেট। এর বাইরে সারা দেশ থেকে সর্বস্তরের নেতাকর্মী আসবেন সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে।
ইতোমধ্যে সম্মেলনকে সামনে রেখে সারা দেশে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সম্মেলনে লাখ নেতাকর্মীর সমাবেশ ঘটবে।
সম্মেলন উপলক্ষে ১০ দিন আগে রাজধানীকে বর্ণিল সাজে সাজানো হবে। থাকবে বিশাল তোরণ, বিলবোর্ড, আলোকসজ্জা। ইতোমধ্যে সাজসজ্জার কাজ শুরু হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউ, দলের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় এলাকা, জাহাঙ্গীরগেট থেকে ফার্মগেট, বিজয় স্মরণী থেকে সংসদ ভবন সব এলাকায় আলোকসজ্জা করা হয়েছে। আগামী ১২ অক্টোবরের আগেই রাজধানীর সাজসজ্জার কাজ শেষ হবে।
এছাড়া জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও সাজসজ্জা করা হবে। দলের কার্যালয়সহ জেলা-উপজেলার প্রধান প্রধান সড়কে আলোকসজ্জা করা হবে।
সম্মেলনের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য দলীয়ভাবে ব্যাপক প্রস্তুতি রাখা হবে। শৃংখলা রক্ষায় দলের প্রায় ৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক কাজ করবে। ইতোমধ্যেই সম্মেলনের ভেন্যুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিভিন্ন স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের এ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। জামায়াতসহ যুদ্ধাপরাধী কোনো দলকে আমন্ত্রণ জানানো হবে না। এছাড়া ইতোমধ্যে ১৪টি দেশের ২০টি রাজনৈতিক দলের ৪৫ জনকে সম্মেলনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০১৬
এসকে/আরএ