ঢাকা: কাউন্সিল অধিবেশনেও নতুন নেতৃত্ব আনার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা।
রোববার (২৩ অক্টোবর) আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে কাউন্সিল অধিবেশনের সূচনা বক্তব্যে এ আহ্বান জানান অধিবেশনের সভাপতি শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার বয়স সত্তর হয়ে গেছে। আর কতো, নতুন নেতৃত্ব আনতে হবে’।
তিনি বলেন, ‘আমি চাই যে, আমি জীবিত থাকতে থাকতে নতুন নেতা নির্বাচিত করে এই সংগঠনকে আরো গতিশীল করার চেষ্টা করবেন’।
‘৩৫ বছর এই দলের সভাপতি। এতো লম্বা সময় কেউ কখনো থাকেননি’।
সারা দেশের কাউন্সিলররা এ সময় সমস্বরে ‘না’, ‘না’ বলে তার এ বক্তব্যের বিরোধিতা করেন এবং শেখ হাসিনাকেই মূল নেতৃত্বে থাকতে হবে বলে সাফ জানিয়ে দেন।
কাউন্সিলরদের সবাই দাঁড়িয়ে গিয়ে শেখ হাসিনার নামে স্লোগান দিতে থাকেন। তারা প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের পক্ষেও ‘জয়’, ‘জয়’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী সবাইকে বসতে বলেন এবং বক্তব্য শুরু করেন।
আওয়ামী লীগের ঐক্যের প্রতীক শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখনই নির্বাচন হচ্ছে না। ওটা পরে বলেন। কিন্তু এটা করতে হবে। আমার বয়স ৭০ বছর হয়ে গেছে, এটাও মনে রাখতে হবে’।
১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের ত্রয়োদশ জাতীয় সম্মেলনে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতেই তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এরপর থেকে আওয়ামী লীগের প্রতিটি সম্মেলনেই তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের ইতিহাসে তিনিই সবচেয়ে বেশি সময় দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
বঙ্গবন্ধু বড় মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই আওয়ামী লীগই আমার পরিবার। আওয়ামী লীগই আমার আপনজন। আওয়ামী লীগকে আমি সবচেয়ে বেশি সময় দেই। আমি নিজের ছেলে-মেয়েকেও এতো সময় দেইনি’।
‘আমার সন্তানদের আমি স্নেহ থেকে বঞ্চিত করেছি। আপনাদের বেশি সময় দিয়েছি’।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি যেখানে যেভাবে থাকি, আওয়ামী লীগ থেকে তো বাইরে থাকবো না। আমি আওয়ামী লীগই তো থাকবো। কিন্তু আওয়ামী লীগকে আরো সুসংগঠিত করতে হবে’।
‘আমাদের তো নতুন নেতা নির্বাচিত করে এগিয়ে যেতে হবে। এটা আমাদের করতে হবে। এ কথা সব সময় আমাদের মাথায় রাখতে হবে’।
শেখ হাসিনা নিজের ও বঙ্গবন্ধুর আরেক মেয়ে শেখ রেহানার ছেলে-মেয়েদের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা আমাদের ছেলে-মেয়েদের শিখিয়েছি। আমি, রেহানা, আমাদের ৫টা ছেলে-মেয়ে। আমরা তাদের একটা কথা বলেছি, তোমাদের একটা সম্পদের পিছনে ছুটতে হবে, সেটা হলো শিক্ষা’।
‘তারা কষ্ট করে পড়াশোনা করেছে। চাকরি করেও পড়াশোনা করেছে। অনেকে সহযোগিতাও করেছেন’।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আরেকটা কথা বলেছি, তোমরা বঙ্গবন্ধুর নাতি-নাতনি। তোমাদের নিয়ে কখনো কোনোদিন কেউ যেন কিছু বলতে না পারে’।
‘তাদের নিয়ে কখনো কিছু শুনতে হয়নি। তারা দেশের কাজ করছে’।
তিনি বলেন, ‘ছেলে-মেয়েরা বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি আনতে পেরেছে। একটা বিষয় আমি নিশ্চিত যে, তাদের জন্য ধন-সম্পদ রেখে যেতে হবে না। তাদের যে বিদ্যা আছে, তারা কিছু করে খেতে পারবে’।
‘আমরা কোনো দুর্নীতি করে নিজের ভাগ্য গড়তে যাইনি। আমি বা আমাদের পরিবারের কেউ না’।
‘আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু পরিবারের বিরুদ্ধে কেউ দুর্নীতির অভিযোগ করতে পারেনি। সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক- তারা জাতি গঠনে কাজ করছেন’- যোগ করেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনার সূচনা বক্তব্যের পর কাউন্সিলর বিভিন্ন সাংগঠনিক জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা বক্তব্য রাখতে শুরু করেন।
তৃণমূল নেতারা শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে থাকতে বলেন।
শেখ হাসিনার ছেলে ও তার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে মন্তব্য করে তারা ভবিষ্যৎ নেতা হিসেবে সজীব ওয়াজেদ জয়কে তৈরি করারও আহ্বান জানান।
সকাল ৯টা ৩৮ মিনিটে শুরু হওয়া কাউন্সিল অধিবেশনে অংশ নিচ্ছেন দেশের বিভিন্ন ইউনিটের ৬ হাজার ৫৭০ জন কাউন্সিলর।
জেলার নেতাদের বক্তব্য শেষ হলে দলের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রের সংশোধনী অনুমোদনের পর নেতৃত্ব নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হবে। বর্তমান কমিটি ভেঙে দিয়ে কার্যনির্বাহী সংসদের নতুন কমিটি নির্বাচন করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৬
এসকে/এমইউএম/আরআই/এএসআর