বুধবার (১২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভার সূচনা বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে বিকেলে গুলশানের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সফলতা নিয়ে সমালোচনা করেন খালেদা।
গণভবনে দীর্ঘ বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরার পাশাপাশি খালেদা জিয়ার বিভিন্ন মন্তব্যেরও জবাব দেন।
বিএনপির দেশের স্বার্থ মূল্যায়নের সক্ষমতা আছে কি না প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, দিল্লি সফর নিয়ে বিএনপি নেত্রীর সমালোচনা জনগণকে বিভ্রান্ত করার প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভারত থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ইউএস ডলার লাইন অব ক্রেডিট এনেছি মাত্র ১ শতাংশ সুদে, আমরা ধার এনেছি টাকা। সেটা দিয়ে আমাদের প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ, এলএনজি, এলপিজি, ডিজেল ক্রয় করবো।
তিনি বলেন, এখন এটাকেও যদি বলা হয় যে, কিছুই পায় নাই তাহলে ভাবখানা এমন যে, আমরা ভিক্ষা চাইতে গিয়েছিলাম।
ভারতের সাথে বায়বীয় বন্ধুত্ব বলে খালেদা জিয়া কি বোঝাতে চেয়েছেন তার ব্যাখ্যা জানতে চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার ভারত সফর, এর আগে নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর, তারও আগে মনমোহন সিং সফর করে গেলেন, ভারতীয় সংসদে ল্যান্ড বাউন্ডারি চুক্তি অনুমোদিত হলো, কার্যকর হলো-এসব কি তাহলে বায়বীয়?
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যেই আমরা ভারতের কাছ থেকে ৬শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ক্রয় করেছি। এই ধারায় মোট ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বিভিন্ন কিস্তিতে ভারত থেকে সংস্থান করছি। ভুটান এবং নেপালে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করে সেখান থেকেও বিদ্যুৎ আনছি। যা দেশবাসীর কল্যাণেই লাগবে। এগুলো দেশবাসীরই অর্জন।
বিএনপি আমলে ক্ষমতায় থেকে ভারতের কাছ থেকে কোনো কিছু আদায় করতে না পারলেও আদায়কারীর ভূমিকা নিয়ে বিএনপি মিথ্যাচার করছে বলেও অভিযোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া কেউই ছিটমহল, সমুদ্রসীমা বা তিস্তার পানি, কোনো কিছু নিয়েই ভারতের কাছে দাবি তোলার সাহস দেখায়নি।
প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে জিয়াউর রহমানের অবদান বিষয়ে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার প্রধান হবার পর প্রতিরক্ষার অবস্থা কী? দেখেছি ’৭৫ এর পর থেকে ’৯৬ এর আগ পর্যন্ত দেখি প্রতিরক্ষার অবস্থা ছিল-জিয়াউর রহমান প্রতিরক্ষায় উন্নতি আর কিছুই করেননি। তিনি লাশ দিয়ে গিয়েছেন। বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীকে শুধু লাশ উপহার দিয়েছেন। সশস্ত্র বাহিনীতে যত মুক্তিযোদ্ধ অফিসার তাদের হত্যা করেছেন। ক্ষমতায় খাকার জন্য ১৯টি ক্যু করেছেন। এগুলোই দিয়ে গেছেন আর কিছুই নয়।
শেখ হাসিনা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছেন খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধর্ম আমি পালন করি এবং ধর্ম আমি মেনে চলি। কিন্তু ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করি না। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি বিএনপি এবং খালেদা জিয়াই করে। মুখে বিসমিল্লাহ বলে দুনিয়ার মিথ্যা কথা বলে বেড়ায় এবং মানুষের ক্ষতি করে।
তিনি বলেন, তারাই বায়তুল মোকাররম মসজিদে আগুন দিয়েছে। শত শত কোরআন শরিফ পুড়িয়েছে। মসজিদে কোরআন শরিফ পড়া অবস্থায় আমার কৃষক লীগের নেতাকে হত্যা করেছে। মানুষ হত্যা করা, পুড়িয়ে মারা, গাছ কেটে ফেলা, জাতির সম্পদ বিনষ্ট করা এগুলো কোন ধর্ম পালন। আসলে ধর্মকে তারাই ব্যবহার করছে।
কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি ঘোষণা দিয়েছি বলেই ওনার গায়ে জ্বালা ধরে গেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর কওমি মাদ্রাসা, ৭৫ হাজার কওমি মাদ্রাসা আমাদের দেশে। তাদের কারিকুলামের কোনো ঠিক নেই। সবাই নিজে নিজের মতো কারিকুলাম তারা ব্যবহার করেন। এখানে কোনো সরকারি স্বীকৃতি ছিল না। যে কারণে এই সার্টিফিকেট নিয়ে তারা উচ্চশিক্ষাসহ দেশ বিদেশে লেখাপড়ায় বঞ্চিত ছিল, কাজ পেত না, চাকরি পেত না। এখন সে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
সভার শুরুতে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সফল ভারত সফরের জন্য সংগঠনের কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যদের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৭
এমইউএম/এমজেএফ