অপপ্রচার মোকাবেলার পাশাপাশি সরকারের সাফল্য তুলে ধরতে জোরদার করা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায় আওয়ামী লীগের প্রচার-প্রচারণা। অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর চেয়ে অনেকটা এগিয়ে থাকা দলটি আগামী নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ অনলাইন প্রচারণার সব কয়টি মাধ্যমের শতভাগ সুবিধা ঘরে তুলতে এরই মধ্যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে বলে জানা গেছে।
জনপ্রতিনিধিসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবসহ অনলাইন প্রচারণায় সক্রিয় করার উদ্যোগ নিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিদ্যমান অনলাইন মাধ্যমে সক্রিয়দের কাতারে প্রতিদিনই যুক্ত হচ্ছেন অনেকে।
অনলাইন-নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি পরিকল্পিত ও কার্যকর প্রচার-প্রচারণা নিশ্চিত করতে প্রশিক্ষণ কর্মশালারও আয়োজন করছে দলটি।
সম্প্রতি ধানমণ্ডিতে আওয়ামী সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংসদ সদস্যদের নিয়ে তিনদিনের প্রশিক্ষণ কর্মশালা করে দলটি। কর্মশালায় রিসোর্স পার্সন হিসেবে ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের এলআইসিটি প্রকল্পের সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষজ্ঞ বেনাউল ইসলাম, আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিআরআই এর সহকারী সমন্বয়ক প্রকৌশলী তন্ময় আহমেদ এবং পলিসি অ্যানালিস্ট ব্যারিস্টার শাহ আলী ফরহাদ।
কর্মশালায় অনলাইন প্রচারণায় করণীয় ও কার্যকর কৌশল, প্রয়োজনীয়তার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয় বলে সূত্র জানায়।
বারাক ওবামা, জাস্টিন ট্রুডো, নরেন্দ্র মোদিসহ অনলাইনে বিশ্বনেতাদের উপস্থিতির চিত্র তুলে ধরা বলা হয়, গবেষণায় দেখা যায় তাদের নির্বাচনে জয়লাভে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছে অনলাইন প্রচারণা।
সরকার ও দলের বিভিন্ন সাফল্য তুলে ধরা, নিজের রাজনৈতিক প্রচার ও প্রসারের জন্য রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে অনলাইনে আসার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয় কর্মশালায়।
আওয়ামী লীগের প্রচার উপ-কমিটির এক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, বিপুল সংখ্যক মানুষ ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছেন। বড় একটা সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যস্ত থাকছেন। অনলাইনে পত্রিকা পড়ছেন, টিভি দেখছেন। এই সুযোগটাকে কাজে লাগানো হবে।
তিনি বলেন, অনলাইন কনটেন্ট টেকসই। এটি হারিয়ে যায় না। অনলাইন কনটেন্ট শক্তিশালী, এটি মানুষের মাঝে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। এটি ছড়িয়ে দেয়া যায় সহজে। কাগজের পত্রিকা বা টেলিভিশনের ক্ষেত্রে যেটা ভাবা যায় না। অবশ্য পত্রিকা বা টেলিভিশনগুলোও অনলাইন ভার্সনে মনোযোগী হচ্ছে।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে জাতীয় ও স্থানীয় উন্নয়ন, বঙ্গবন্ধুর জীবনী, আত্মত্যাগ ও শিক্ষা, দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে কার্যক্রম, সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গীবাদের কুফল, দলীয় ভিশন, বিএনপি আমলের নেতিবাচক কর্মকান্ড –ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা স্থান পায় কর্মশালায়।
মোদ্দাকথা, সরকারবিরোধী অপপ্রচারের জবাব দিয়ে অনলাইনে প্রচারণা চালানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের।
দলীয় ওয়েবসাইট, ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব চ্যানেল, গুগল প্লাস, ইমেইলসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণায় রসদ যোগাবে আওয়ামী লীগ। এছাড়া অনলাইন পত্রিকা, টেলিভিশন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেতাদের পেইজ, আইডি, নিজের বিবেক-বুদ্ধি, দলীয় গঠনতন্ত্র, ইশতেহারকে তথ্যের উৎস হিসেবে ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে তাদের। উইকিপিডিয়াসহ অনলাইনে নতুন কনটেন্ট তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে কর্মশালায়।
ফেইক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কেউ যাতে বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে সেজন্য অ্যাকাউন্ট ভেরিফিকেশন করিয়ে নেয়ারও পরামর্শ দেয়া হয়। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের প্রচার সেল ও সিআরআই থেকে সহযোগিতা করা হবে।
নেতা-কর্মীদের অনলাইন প্রচারণার ওপর গুরুত্বারোপ করে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যদের নিয়ে এ বিষয়ক এক কর্মশালায় দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর সুযোগকে কাজে লাগতে হবে। ’
দেশের প্রায় ৬ কোটি মানুষ এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, ‘শুধু মানুষের কাছে শুনে না, আমরা জরিপ করে যেটা দেখি যে আমাদের তরুণরা কিন্তু আর খবরের কাগজ পড়েই না। ... তরুণরা ওগুলো পাত্তা দেয় না। ’
তিনি বলেন, ‘তরুণরা সবচেয়ে বেশি খবর পায় সোশ্যাল মিডিয়া থেকে। সোশ্যাল মিডিয়াতেই তারা বেশি অংশগ্রহণ করে। সেজন্যই সোশ্যাল মিডিয়াটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ’
‘সোশ্যাল মিডিয়াতে যদি আমরা প্রচারের কাজটা চলমান রাখি তাহলে শুধু আজকের তরুণ ভোটাররাই শুধু না, ভবিষ্যতের ভোটাররাও আওয়ামী লীগের ভোটার হয়ে থাকবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ০১৩৭ 0ঘণ্টা, মে ১৪, ২০১৭
এমইউএম/জেএম