রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর স্বাভাবিক ব্যস্ততার কারণেই তিনি কিশোরগঞ্জে আসতে ও লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারেন না। কিন্তু তিনি দূরে অবস্থান করলেও পুরনো সহকর্মী, সহযোদ্ধা, কর্মী, সমর্থক, ভক্তদের ভোলেন না।
পিতার দেখানো পথে মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের ঐতিহ্যকে ধরে রাখার লক্ষ্যে তাঁর পুত্ররা মোটেও পিছিয়ে নেই। বরং তাঁর পুত্ররাই উত্তরাধিকারের দায়িত্বে পিতার জনসংযোগের সামাজিক ও রাজনৈতিক ঐতিহ্যকে বর্তমান ও ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে নিতে উদ্যমশীল দায়িত্ব পালন করছেন। পিতা ও পুত্রের পরম্পরায় দৃঢ়তর হচ্ছে মো. আবদুল হামিদের জনসম্পৃক্ততার ঐতিহ্যবাহী ধারাবাহিকতা।
শুক্রবার (১৬ জুন) রাষ্ট্রপতির উত্তরাধিকারীরা কিশোরগঞ্জবাসীকে ইফতারে আপ্যায়িত করে জনতার সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সম্পর্কের প্রাচীন সেতুবন্ধনটিকেই আরও সজীব ও মজবুত করলেন।
কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাবের শহীদ সৈয়দ নজরুর ইসলাম মিলনায়তনে আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানটি জেলার আওয়ামী রাজনীতির পুরনো ও নতুন প্রজন্মের মিলনমেলায় পরিণত হয়। জেষ্ঠ্যপুত্র পিতার আসনের সংসদ সদস্য প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক নিজে উপস্থিত থেকে অভ্যাগতদের স্বাগত জানান। দ্বিতীয় পুত্র ক্রীড়া সংগঠক রাসেল আহমেদ তুহিন পুরো অনুষ্ঠানকে সূচারুভাবে সম্পন্ন করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। তৃতীয় পুত্র স্থানীয় ঈসা খাঁ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির তরুণ শিক্ষক রিয়াদ আহমেদ তুষারও ইফতার অনুষ্ঠানকে সফল করতে নেপথ্য ভূমিকা রাখেন। রাষ্ট্রপতির তিন পুত্রের দক্ষ তৎপরতায় পিতার শুভেচ্ছা ও হৃদ্যতা মানুষের মধ্যে আবেগঘন অনুভূতির সঞ্চার করে। মানুষের মুখে মুখে বার বার উচ্চারিত হতে থাকে তাদের প্রিয় মহামান্য রাষ্ট্রপতির কথা এবং তাঁর স্মৃতি ও কর্মের নানা প্রসঙ্গ।
কয়েক হাজার মানুষের এই আয়োজনে জেলার প্রতিটি অঞ্চল থেকে আওয়ামী লীগের বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দ যোগদান করেন। পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নতুন প্রজন্মের নেতা-কর্মীরাও অংশ নেন। রাষ্ট্রপতির পুত্রদের ইফতার শুক্রবার টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়। আনন্দঘন ইফতারে রাষ্ট্রপতির উত্তরাধিকারীগণও সরব উপস্থিতিতে বিপুল সংখক মানুষের কাছে পিতার পক্ষ থেকে ভালোবাসা ও শুভেচ্ছার রেশ ছড়িয়ে দেন।
কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন কমিটির একমাত্র জীবিত সদস্য, প্রবীণ চিকিৎসক, ভাষা সংগ্রামী ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ডা. এ.এ. মাজহারুল হক বার্ধ্যকজনিত শারীরিক অসুবিধার জন্য অনুষ্ঠানে অংশ নিতে না পারলেও উদ্যোগটির প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ছিলেন কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রাণপুরুষ। রাষ্ট্রপতির পুত্রদের মাধ্যমে পিতার জনমুখী ঐতিহ্য জাগ্রত থাকবে বলে আমি আশা করি। রাজনীতি যে মানুষের জন্য এবং মানুষকে নিয়েই করতে হয়, রাষ্ট্রপতি তাঁর জীবন ও কর্মের মাধ্যমে প্রতিফলিত এই শিক্ষাটি উত্তরাধিকারীদের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্য একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।
জেষ্ঠ্যপুত্র প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, আমি সংসদ সদস্য বা রাজনীতি করি বলেই যে কিশোরগঞ্জ ও হাওরাঞ্চলে ঘন ঘন আসি, তা নয়। জন্মভূমি ও এলাকায় আসতে আমার আসলেই ভালো লাগে। এখানকার প্রকৃতি ও মানুষের সঙ্গে হৃদয় ও আত্মার অবিচ্ছেদ বন্ধন আমি সব সময় অনুভব করি। পিতার কাছ থেকে এই শিক্ষা পেয়েছি।
তিনি বলেন, ঢাকায় গেলে আমার পিতা বলেন, আব্বা এসেছো, যাবে কবে? আমি ঢাকার চেয়ে কিশোরগঞ্জে বেশি থাকি বলেই তিনি এমন প্রশ্ন করেন।
রাষ্ট্রপতির দ্বিতীয় পুত্র রাসেল আহমেদ তুহিনও সময় সুযোগ পেলেই কিশোরগঞ্জে চলে আসেন। স্থানীয় ক্রিকেট ও যুব সমাজের জন্য তিনি নানা রকমের উদ্ভাবনী উদ্যোগ নিয়েছেন। তৃতীয় পুত্র রিয়াদ আহমেদ তুষার উচ্চশিক্ষা বিষয়ক কার্যক্রম পরিচালনার সুবাদে কিশোরগঞ্জেই স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। ফলে কিশোরগঞ্জে অবস্থান না করলেও উত্তরাধিকারীদের মাধ্যমে কিশোরগঞ্জের সমাজ ও রাজনীতির সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সম্পর্ক এখনো আগের মতোই অটুট। বরং পুত্রদের মাধ্যমে জনসম্পর্কটি প্রতিনিয়ত আরও গতিশীল ও বিস্তৃত হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১৭
জেডএম/