খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ওই কার্ডে ইফতার ও বস্ত্র বিতরণের স্থান হিসেবে যে স্কুলের নাম দেওয়া হয়েছে, সে প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষও জানে না এরকম একটি আয়োজনের কথা। স্কুল অধ্যক্ষের তরফ থেকে বরং বলা হয়, এখানে কোনো ইফতার বা ঈদ সামগ্রী বিতরণের অনুষ্ঠান হয় না।
ঠিক এভাবেই রাজধানীর গুলশান এলাকায় ছাত্রলীগের পরিচয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। অবশ্য ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতৃত্ব জানিয়েছেন, ওই চাঁদাবাজরা তাদের সংগঠনের কেউ নন।
এই কায়দায় চাঁদাবাজি বাংলানিউজের নজরে আসে শনিবার (১৭ জুন) দুপুরের দিকে। চাঁদার জন্য গুলশান-১ নম্বরের নাভানা টাওয়ারের ‘হানিমুন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসে’ ঢুকে পড়েন ‘আমরা তরুণ’র চারজন। পুরো ঘটনা প্রতিষ্ঠানটির পর্যবেক্ষণ ক্যামেরায় (আইপি) রেকর্ড হয়।
ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে হানিমুন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসে ঢুকে তারা বলেন, ‘আমরা ওইদিন যে এসে কার্ড দিয়ে গেলাম...। ’ এ পর্যায়ে তেমন সাড়া না পেয়ে একজন বলেন, ‘আমি গুলশান থানা ছাত্রলীগের পাঁচবারের সাংগঠনিক সম্পাদক। ’ তিনি পরিচয় করিয়ে দেন তার সঙ্গীদের, ‘ও হচ্ছে গুলশান থানার দপ্তর সম্পাদক, আর সে মহানগর ছাত্রলীগের সম্পাদক। আরও আছে আমাদের সঙ্গে। ওরা নিচে দাঁড়িয়ে আছে। কারণ ওপরে এতো লোক দরকার নেই। ’
হানিমুন ট্রাভেলসের কর্মীরা বাংলানিউজকে বলেন, ‘হুমকির মুখে চাঁদা দ্রুত দিয়ে দিতে চাপ দিচ্ছিলেন চারজন। বাধ্য হয়ে একটি খাম তুলে দেওয়া হয়। খাম পাওয়ার পর একজন সেটি খুলে দেখেন ৫০০ টাকা। এসময় আরেকজন বলতে লাগলেন, ‘এটা দিয়ে কি ছাত্রলীগকে অপমান করলেন?’
এক পর্যায়ে সাংগঠনিক সম্পাদক পরিচয়ধারী ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান মালিকের সঙ্গে কথা বলতে চান। মালিক দেশের বাইরে জানানোর পরও তার সঙ্গে মোবাইলে কথা বলতে চাপ দেন তারা। পরে খামে আরও ৫০০ টাকা যোগ করে দেওয়ার পর সেটা নিয়ে রুঢ় মেজাজ দেখিয়ে বের হয়ে যান চারজন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একইভাবে এই চারজন নাভানা টাওয়ারের বড় বড় সবগুলো প্রতিষ্ঠানে ঢোকেন। আর দাওয়াত কার্ডের কথা মনে করিয়ে চাঁদা দাবি করেন।
হানিমুন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাজু আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘এটা নতুন নয়। এই পরিচয়ে চাঁদাবাজির কারণে দোকানের শাটার বহুবার বন্ধ করে দিতে চেয়েছি। একবার একটি সংস্থার লোক পরিচয়ে ৬ ডিজিটের চাঁদা দাবি করা হয়েছিল। তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের নামে এভাবে আরও বহুবার চাঁদাবাজির শিকার হতে হয়েছে আমাদের। ’
বিষয়টি ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমানকে জানানো হলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ছাত্রলীগের গুলশান থানার সভাপতি নুরসহ কয়েকজনকে পাঠান। মিজানুর রহমান বাংলানিউজের কাছে দাবি করেন, ‘ছাত্রলীগ কোথাও চাঁদা দাবি করে না। গুলশানে ছাত্রলীগের কোনো সাংগঠনিক সম্পাদক নেই। তিন মাস আগে শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দিয়ে কমিটি দেওয়া হয়েছে। ’
এদিকে গুলশান থানা ছাত্রলীগ সভাপতি নুর হানিমুন ট্রাভেলসে এসে জানতে পারেন, যারা চাঁদা নিয়ে গেছেন তারা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা। নাভানা টাওয়ারের পেছনে এরা আড্ডা দেন। বর্তমানে ছাত্রলীগের কেউ নন।
আয়োজনের কার্ডটিতে দেখা গেছে, ‘আমরা তরুণ’ সংগঠনের ব্যানারে ছিন্নমূল পথশিশু ও গরিব-দুঃখীদের মধ্যে বস্ত্র বিতরণ ও ইফতার মাহফিল ১৯ জুন বাদ আসর পূর্ব বাড্ডার সেকান্দারবাগের আলাতুন্নেছা স্কুলের ২য় শাখায় হবে।
কিন্তু ওই স্কুলের অধ্যক্ষ শামসুল আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘এটা প্রতারণা। তার স্কুলে এ রকম কোনো আয়োজন নেই। তাছাড়া, এখন স্কুল ঈদের ছুটিতে। ’
এ ব্যাপারে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘এখনও কোনো ব্যবসায়ীর পক্ষ থেকে চাঁদা দাবির অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ লাগবেও না। আমরা খবর পাওয়া মাত্রই ছুটে যাবো। গুলশানে কোনো চাঁদাবাজি চলবে না। ’
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১৭
এসএ/এইচএ/