গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও ঐতিহ্য ধারণকারী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৬৮তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী শুক্রবার (২৩ জুন)। পূর্ব বাংলার জনগণের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার কে এন দাস লেনের রোজ গার্ডেনে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ নামে প্রতিষ্ঠা লাভ করে দলটি।
প্রতিষ্ঠার প্রায় ছয় বছর পর, ১৯৫৫ সালে, আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালির অধিকার আদায়ের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে অসাম্প্রদায়িক এ রাজনৈতিক দল।
প্রথম সম্মেলনে আওয়ামী লীগের মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি ও শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন প্রথম কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
১৯৬৬ সালের সম্মেলনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই আওয়ামী লীগ বাঙালির অধিকার আদায়ের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতাসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী দলে রূপান্তরিত হয়।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আন্দোলন, ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন, শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন এক পর্যায়ে স্বাধীনতার সংগ্রামে রূপ নেয়।
বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন ও চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বিজয়ের পথ ধরে ধারাবাহিক আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রসর হয় দলটি। ছেষট্টির ৬ দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যূত্থান, স্বাধীনতার সংগ্রাম, একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ, পাকিস্তানি শাসন আমলে এবং স্বাধীনতার পর পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাপরবর্তী দীর্ঘ সময় একের পর এক সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিয়েছে প্রাচীনতম রাজনৈতিক দলটি।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা অর্জিত হয়। বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযু্দ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঙালি। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। বিশ্বের বুকে স্বাধীন-সার্বভৌম নতুন দেশের অভ্যূদয় ঘটে। ১৬ই ডিসেম্বর সশস্ত্র যুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়ে সে স্বাধীনতা পূর্ণতা পায়।
সুদীর্ঘ ৬৮ বছরের পথ পরিক্রমায় আওয়ামী লীগকে অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতি, অনেক চড়াই-উৎরাই এবং ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে এগোতে হয়েছে। কখনো নেতৃত্বের শূন্যতা, কখনো ভাঙনের মুখেও পড়তে হয়েছে দলটিকে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এরপর ০৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর নেতৃত্ব-শূন্যতায় পড়ে আওয়ামী লীগ। এই শূন্যতা থেকেই দলের মধ্যে একাধিক ভাঙন-গ্রুপিং ও বহু ধারায় বিভক্তি দেখা দেয়।
দলের চরম ক্রান্তিকালে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামী লীগ আবার ঐক্যবদ্ধ হয়। তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে তার নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে দলটি। এ সময়কালে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন-সংগ্রামে বিজয় অর্জনের পাশাপাশি তিনবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে পেরেছে আওয়ামী লীগ।
তবে ৬৮ বছরের মধ্যে প্রায় ৫০ বছরই থাকতে হয়েছে রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ের পর আওয়ামী লীগ মন্ত্রিসভা গঠন করলেও তা বেশিদিন টেকেনি। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর সাড়ে তিন বছর এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে ৫ বছর ও বর্তমানে সাড়ে ৮ বছর ধরে সরকার পরিচালনা করছে আওয়ামী লীগ।
বাংলাদেশ সময়:০৩২৯ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৭
এসকে/এএসআর/জেএম