বন্যার্ত মানুষকে খাওয়াচ্ছেন রান্না করা খাবার। কেউ যেনো অভুক্ত না থাকে সে নজরদারিতেও কমতি নেই সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী’র।
মানুষের সংস্পর্শে যান না বলে অসন্তোষ ভালোই ছিলো এলাকায়। কিন্তু বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়ে নিন্দুকদের জবাব ভালই দিয়ে যাচ্ছেন জাতীয় সংসদের এই প্যানেল স্পিকার।
কখনো ফেঞ্চুগঞ্জ, কখনো বালাগঞ্জ, কখনোবা দক্ষিণ সুরমার প্রত্যন্ত অঞ্চলে মিলছে তার দেখা। নিজে ও আত্মীয়-পরিজনদের রান্না করা খাবার নিয়ে তুলে দিচ্ছেন আশ্রিতদের মুখে।
বন্যার পানিতে ঘেরা হাসপাতালে পানি মাড়িয়ে পায়ে হেঁটে পৌছে চিকিৎসার খোঁজ খবর নিচ্ছেন। রোগাক্রান্তদের চিকিৎসা হচ্ছে কিনা- চিকিৎসকদের পাশে বসেই বুঝে নিচ্ছেন তিনি।
ইতোমধ্যে পানি কমতে শুরু করায় রোগের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসককে দায়িত্বশীল হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
তার সঙ্গে নির্ঘুম রাত কাটছে নেতাকর্মী’র। এভাবে পরম মমতায় মানুষের পাশে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে ভোররাত থেকে ছুটে যাচ্ছেন এই সংসদ সদস্য।
যেখানে সপ্তাহে একদিন (শুক্রবার) তার সংস্পর্শ পেতেন এলাকার মানুষ, সেখানে সপ্তাহে সাতদিনই বন্যা আক্রান্ত মানুষের পাশে রয়েছেন। ভালবাসার মাধ্যমে মানুষের মন জয় করে নিতে তার এই প্রচেষ্টা বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা।
বাংলানিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ বলেন, আমার সংসদীয় আসনের মধ্যে ফেঞ্চুগঞ্জের তিনটি ইউনিয়নেই বন্যা কবলিত ৪০ হাজার মানুষ। বালাগঞ্জের পূর্ব ও পশ্চিম গৌরিপুর ও দেওয়ানবাজার ইউনিয়নে ১০ হাজার এবং দক্ষিণ সুরমা উপজেলার দাউদপুর, জালালপুর, মোগলাবাজার, কুচাই এ আরো ৬ হাজার মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, নেতা-কর্মীদের নিয়ে কোনো তালিকা ছাড়াই নিজে ডোর টু ডোর নৌকা নিয়ে গিয়ে মানুষের মধ্যে ত্রাণ দেওয়া অব্যাহত রেখেছি। সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি বেসরকারিভাবে আমার কুশিয়ারা পাওয়ার কোম্পানি থেকে ১০ লাখ টাকার খাদ্য সামগ্রী শনিবার থেকে বিতরণ শুরু করেছি।
আশ্রয় কেন্দ্রগুলোর মানুষকে রান্না করা খাবার দিতে নিকটস্থ নেতাকর্মী ও স্বজনদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে চন্ডিপ্রসাদ, ফরিদপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রিতদের তার পরিবার ও স্বজনদের মাধ্যমে রান্না করা খাবার দেওয়া হচ্ছে, জানিয়েছেন আশ্রয় কেন্দ্রের লোকজন।
সব মানুষ ত্রাণ পাচ্ছে কি-এ প্রশ্নের উত্তরে এই সংসদ সদস্য বলেন, আশ্রয় কেন্দ্রের লোকজন যথেষ্ট সাহায্য পাচ্ছেন। সরকারি সাহায্যের পাশাপাশি ব্যক্তি ও সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগেও সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু যে মানুষটি হাওরের মধ্যে পড়ে আছে, উপজেলায় ত্রাণ নিতে আসতে পারছে না, সেসব এলাকায় ত্রাণ নিয়ে যেতে হবে।
বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বাংলানিউজের মাধ্যমে প্রবাসীদের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কারো কাছে টাকা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। অন্তত নিজের স্বজনদের মাধ্যমে নিজেদের এলাকার দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ সাহায্য-সহযোগিতার হাত প্রসারিত করুন।
অনেকে নিজ এলাকা রেখে শুধু পত্র-পত্রিকায় ফটো আসার জন্য উপজেলা সদরের কাছাকাছি এসে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করছেন। ফলে বাতির নীচ অন্ধকারই থেকে যাচ্ছে। এই ট্র্যাডিশন থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
ত্রাণ বিতরণে যে সব ইউপি সদস্য মুখ দেখে টোকেন বণ্টন করছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান এই সংসদ সদস্য।
তিনি বলেন, আমাকে যদি একটি প্রশ্ন করেন সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ, বালাগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে বন্যার কারণ কি? বলরো কুশিয়ারা খনন না করা। সরকার যতো দ্রুত সম্ভব কুশিয়ারা নদী খননের উদ্যোগ নেবে ততোই মঙ্গল।
তাই অনতিবিলম্বে কালনী প্রকল্প খননের দাবি তুলে তিনি বলেন, সরকার তো আর সারা বছর ত্রাণ দেবে না। কিন্তু রিলিফ ওয়ার্ক বন্ধ করতে হলে আগে নদী খনন জরুরি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮২১ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০১৭
এনইউ/জেডএম