অভিযোগ করে তিনি বলেছেন, ‘একের পর এক ১৩টি গ্রেনেড মারা হয়েছিল আমাদের জনসভায়। এরপর কারাগারেও একটি গ্রেনেড পাওয়া যায়।
‘ঘটনার রাতেই খালেদার ওই প্রতিমন্ত্রী ও এসব কাজে জড়িত একজন কারারক্ষীকে বিশেষ ব্যবস্থায় বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়’।
সোমবার (২১ আগস্ট) রাজধানীর ফার্মগেটের খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বক্তৃতা করছিলেন প্রধানমন্ত্রী। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবস উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ।
** ‘বিএনপি নেতারা বলেছিল, আরেকটা ১৫ আগস্ট হবে’
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতার শুরুতেই ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণ করেন। উল্লেখ করেন তাকে বাঁচাতে সেদিন আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ হানিফসহ নেতাকর্মীদের মানববর্ম তৈরির ত্যাগ-তিতীক্ষার কথা।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যুদ্ধের ময়দানে আর সেনাবাহিনীর ব্যবহৃত গ্রেনেড দিয়ে হামলা চালানো হয়েছিল ২১ আগস্ট। তখন বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় ছিল। এর আগেও আমার ওপর অনেক হামলা হয়েছে। যতোবার হামলা চালানো হয়, তার ঠিক আগে বিএনপির নেতারা আমাদের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তারা বলেছিলেন, দেশে আরেকটা ১৫ আগস্ট হবে। আমাকে বঙ্গবন্ধুর পরিণতি বরণ করতে হবে।
‘আর ২১ আগস্টের হামলার আগে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া সংসদে আমার নাম ধরেই বলেছিলেন, আগামী ১০০ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবো না। ১০০ বছর লাগেনি। তার অনেক আগেই ক্ষমতায় এসেছি, উন্নয়নও করছি। ’
তিনি ২১ আগস্ট হামলা প্রসঙ্গে বলেন, ‘সে হামলার আলামত ধ্বংস করেছিল বিএনপি সরকার। প্রকৃত বিচার যেন না হয়, সেজন্য জজ মিয়া নাটকও তৈরি করেছিল। জনমতের চাপে পরে জয়নাল আবেদিন নামে একজন বিচারপতিকে দিয়ে তদন্ত কমিশন গড়েছিল। ওই বিচারপতি খালেদার সরকারের ফরমায়েশি তদন্ত প্রতিবেদনে বলে দিলেন যে, এ হামলা নাকি বিদেশি শক্তি করেছে! পাশের দেশের পরিকল্পনায় হয়েছে!’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘হামলার পর সংসদে এর প্রতিবাদে নিন্দা প্রস্তাব আনতে চেয়েছিলাম আমরা। তারা করতে দেয়নি। খালেদা জিয়া ব্যঙ্গ করে বলেছিলেন, ‘আপনাকে আবার কে মারবে?’ বিএনপির নেতারা অপবাদ দিয়েছিলেন, আমি নাকি ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিলাম!’
মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ও চেতনাকে পুরোপুরি নির্মূল করে পাকিস্তানি ভাবধারায় দেশকে নিয়ে যাওয়াও ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মূল লক্ষ্য ছিল বলেও অভিযোগ তোলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ২১ বছর পর্যন্ত যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা পাকিস্তানের দালালি করে ক্ষমতায় এসেছিল।
প্রধানমন্ত্রী ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর্যবেক্ষণ ঘিরে তৈরি হওয়া আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন, সংসদ হলো জনগণের প্রতিনিধি। জনগণ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।
পাকিস্তানে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও কোনো প্রতিক্রিয়া না হওয়া নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে তুলনা করে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার মন্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, যাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা লাভ করলাম, সেই পাকিস্তানের সঙ্গে তুলনা সহ্য করা হবে না। জনগণের কাছে এর বিচার চাই।
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, স্বাধীনতা ভালো, তবে বালকসুলভ আচরণ ভালো নয়। এদেশ পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তিই থাকবে। কোনো রাজাকার, আল বদর, শান্তি কমিটির মেম্বার নয়।
‘আর পাকিস্তানে কী হলো না হলো, সেই হুমকি আমাকে দিয়ে লাভ নেই। আইয়ুব খান, জিয়া, এরশাদ দেখেছি। জনগণের ভোটে ক্ষমতায় এসে দেশের উন্নয়ন করছি। জনগণের কাছেই আমরা দায়বদ্ধ। ’
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, জ্যেষ্ঠ প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) নেতা হাসানুল ইক ইনু, সাম্যবাদী দলের নেতা দিলীপ বড়ুয়া প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৭
এএসআর/এইচএ/