তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ শুধু বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়কেই নাড়া দেয়নি, এ ভাষণ সারা বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।
মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল বলেন, ‘একটা ভাষণের মধ্য দিয়ে একটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা, একটা ভাষণের মধ্য দিয়ে একটা নিরস্ত্র বাঙালিকে সশস্ত্র বাঙালি জাতিতে রূপান্তরিত করা- এটিই ছিল ৭ মার্চের ভাষণের মূল চালিকা শক্তি।
তিনি বলেন, আজকে আমার কাছে প্রতীয়মান হয়েছে, এই ভাষণ ছিল পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ ভাষণ। কারণ একটি ভাষণের মধ্য দিয়ে তিনি একটি জাতিকে একটি মোহনায় দাঁড় করিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
“তিনি (বঙ্গবন্ধু) ছিলেন পৃথিবীর মধ্যে একজন বর্ণাঢ্য রাজনীতিবিদ, এই রাষ্ট্রনায়ক যা বিশ্বাস করতেন তাই বলতেন এবং যা একবার বলতেন তার সাথে কখনও তিনি আপোষ করতেন না। এমনকি ফাঁসির মঞ্চে গিয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতেন। কিন্তু তার সিদ্ধান্ত থেকে তিনি সরে যেতেন না। ”
তোফায়েল বলেন, আমি খুব সৌভাগ্যবান, আমি বঙ্গবন্ধুর খুব কাছে থেকে তাকে শুনেছি-জেনেছি। তিনি বলেছিলেন, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেছি যে, পাকিস্তান বাঙালিদের জন্য হয়নি। একদিন বাংলার ভাগ্য নিয়ন্ত্রক বাঙালিদের হতে হবে। তিনি জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের পথে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। ছয় দফা দেওয়ার পরে বিভিন্ন জায়গায় সভা করেছেন, গ্রেপ্তার হয়েছেন। এরপরেও থেমে থাকেননি।
৭ মার্চের বক্তব্য নিয়ে তোফায়েল বলেন, “এটা কোনো লিখিত বক্তব্য ছিল না। এই বক্তব্য ছিল তার হৃদয়ের গভীরে যে বিশ্বাস সেই বিশ্বাস থেকে দেওয়া। ”
স্মৃতিচারণ করে তোফায়েল বলেন, মঞ্চে যখন বঙ্গবন্ধু উঠলেন, আমি স্লোগান দিলাম। তিনি মঞ্চে দাঁড়িয়ে চারিদিকে তাকালেন। বঙ্গবন্ধুর বৈশিষ্ট্য ছিল তিনি যেখানেই জনসভা করতেন, বাংলার মানুষকে হৃদয়ের গভীরতা থেকে, অন্তর থেকে সম্বোধন করতেন, ভাইয়েরা আমার।
“উত্তাল তরঙ্গ, সমুদ্রের মত সেই শব্দ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কানায় কানায় পূর্ণ। লোকে লোকারণ্য, কারো হাতে বৈঠা, কারো হাতে সেই কৃষকের লঙ্গলের ফলা, শ্রমিকের হাতে লাঠি। ”
তোফায়েল বলেন, তিনি যখন ভায়েরা আমার বলে বক্তব্য শুরু করলেন, পিনপতন নিস্তব্ধতা তৈরি হয়ে গেল। তার মধ্যে তিনি তার জীবনের শ্রেষ্ঠ ভাষণটি রাখলেন। কাছে থেকে আমাদের সবার মনে হয়েছিল, এই দিনটির জন্যই বঙ্গবন্ধু অপেক্ষা করছিলেন।
তিনি বলেন, খুব সতর্কতার সাথে তাকে বক্তৃতা দিতে হয়েছে। কারণ একদিকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেবেন, আরেক দিকে যাতে তাকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবে আখ্যায়িত না করা যায়, সে ব্যাপারে তিনি সজাগ ছিলেন।
একটা মুক্তিযুদ্ধ কীভাবে হয়, একটি গেরিলা যুদ্ধ কীভাবে সংগঠিত করা যায় তার সমস্ত নির্দেশনা তিনি দিয়ে গিয়েছিলেন।
পৃথিবীর কোনো ভাষায়, কোনো দেশে কোনো ভাষণ এতোবার উচ্চারিত হয় নাই। অথচ এমনও দিন গেছে, এ ভাষণ বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকীতে আমরা বাজাতে পারি নাই। বিএনপি তখন ক্ষমতায়, আমাদের মাইক কেড়ে নিয়ে গেছে, ৭ মার্চও এই ভাষণ আমরা বাজারে পারি নাই। ”
স্বাধীনতার মহানায়ক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, ইতিহাসের মহামানব, পৃথিবীর নির্যাতিত-নিপিড়ীত মানুষের শ্রেষ্ঠ বন্ধু, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যে শ্রেষ্ঠ নেতা ছিলেন আজকে ইউনেস্কোর এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সেটা আরেকবার প্রমাণিত হয়েছে।
তোফায়েল বলেন, বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নেতা হিসেবে পরিগণিত হয়েছেন। আজকের এই দিনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৭
এমআইএইচ/জেডএম