জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে শুক্রবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণ সভায় দলটির নেতারা এ কথা জানান।
সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু।
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে আমির হোসেন আমু বলেন, সংবিধান অনুযায়ীই নির্বাচন হবে। অন্য কোনো পন্থায় নির্বাচন হবে না।
১৯৯৬ সালে তৎকালীন প্রেক্ষাপটে নির্বাচনী সময়ের জন্য আওয়ামী লীগের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করেছিলো, খালেদা জিয়া তখন বলেছিলেন পাগল আর শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ নয়। এখন তিনি কোন মুখে আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবি করেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন হবে।
আগামী নির্বাচনে জনগণের রায় নিয়ে আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
আদালতের মাধ্যমে তাকে হেনস্থা করা হচ্ছে বলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অভিযোগের জবাবে মতিয়া চৌধুরী বলেন, আপনি তো কোর্টকে হেনস্থা করছেন। ১৪৩ বার সময় নিয়েছেন। আপনার ভাষায় বলতে চাই, আপনিই আদালতকে হেনস্থা করছেন। আদালত আপনাকে হেনস্থা করছে না।
বিএনপির সহায়ক সরকারের দাবি প্রত্যাখ্যান করে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, কোনো সহায়ক সরকার হবে না, কোনো ভাবনার সরকার হবে না। আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে। আপনারা এলে আসবেন, না এলে রাস্তায় গিয়ে চিৎকার করুন। আপনাদের সঙ্গে কোনো কথা হবে না। এরা ৭১ এর, ৭৫ এর খুনি। খুনিদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হবে না।
বিএনপিকে নির্বাচনে আনার দায়িত্ব আওয়ামী লীগের নয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপির আন্দোলনের হুমকির জবাবে আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, জ্বালাও-পোড়াও করলে ছাড় দেওয়া হবে না। মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচার হবে।
বিএনপিকে অপশক্তি হিসেবে উল্লেখ করে তিনি দলের নেতা-কর্মীদের সব অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ও সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, সাংবাদিক ভাইদের বলছি, লিখে রাখুন। আগামী নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে। ২০১৯ সালে বিজয়ের মাসে এ নির্বাচন হবে।
বিএনপির আন্দোলনের হুমকির জবাবে তিনি বলেন, আন্দোলন করে লাভ নেই। আওয়ামী লীগ আন্দোলনে চ্যাম্পিয়ন। আমরা মার খেয়ে মাঠে থেকেছি। আর বিএনপি...।
বিএনপিকে জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, যদি সাহস থাকে আগামী নির্বাচনে আসেন। নির্বাচনের মাঠ থেকে পালাবেন না। দেখবো জনগণ কাকে চায়। মিথ্যাচার, মানুষ হত্যা, লুটপাট, ষড়যন্ত্রের রাজনীতির জন্য জনগণ বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করবে।
খালেদা জিয়া ও বিএনপি নেতাদের ‘সিরিয়াল মিথ্যাবাদী’ হিসেবে অভিহিত করে তিনি বলেন, তাদের মিথ্যার জবাব আগামী নির্বাচনে বাংলার জনগণ দেবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বরের হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে যারা জড়িত তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। নইলে কলঙ্কিত ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হতে পারে।
অসুস্থতার কারণে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারেননি জানিয়ে সাধারণ সম্পাদক বলেন, তার অস্ত্রোপচারের পর যতটুকু বিশ্রামে থাকার কথা ছিল, তিনি ততটুকু বিশ্রামে ছিলেন না। তিনি চাপ নিয়ে কাজ করেছেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, তিনি এ রকম জাতীয় দিবসের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেননি এমনটা ঘটেনি। তিনি অসুস্থতার কারণে আসতে পারেননি। আগামী ৫ নভেম্বর কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি কনফারেন্সে (সিপিসি) অংশগ্রহণ করবেন আশা করছি।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন— আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম- সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৩, ২০১৭
এমইউএম/এইচএ/