মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘরে বাংলাদেশ ভারত মৈত্রী সমিতি আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রধান অতিথি কাদের বলেন, আগামী নির্বাচনে (বিএনপি চেয়ারপারসন) খালেদা জিয়াকে জবাব দিতে হবে যে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে পাকিস্তান বিরোধিতায় বিএনপি প্রতিবাদ না করে কেন নীরব ছিল।
তিনি এসময় বলেন, আগামী নির্বাচন হবে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সাতচল্লিশের পাকিস্তানের চেতনার মধ্যে। এ নির্বাচনে অবশ্যই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিজয়ী হবে। আপনারা পাকিস্তানের চেতনা নিয়ে আছেন, পড়ে থাকেন।
আওয়ামী লীগ আপোস করেনি এবং মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকে বিচ্যুতও হয়নি দাবি করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ভুলত্রুটি থাকতে পারতে, কিন্তু আওয়ামী লীগ কারও সঙ্গে আপোস করেনি। অনেক চাপ ও প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে আওয়ামী লীগ সরকার।
তিনি বলেন, বাস্তব পরিস্থিতি ও সময়ের প্রয়োজনে কখনো কখনো কৌশল বদলাতে হয়। কৌশল বদলানো মানে, আদর্শচ্যুত হওয়া নয়। আমাদের ভুল বুঝবেন না।
মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দেওয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘খালেদা জিয়া বলছেন আমরা পাকিস্তানি কায়দায় দেশ চালাচ্ছি। তিনি একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী, এত দায়িত্বহীন কথা কীভাবে বলেন? রাজনীতিতে ভিন্নমত থাকতে পারে, কিন্তু দেশ নিয়ে তো আমরা সবাই গর্ব করবো। ’
‘দেশের উন্নয়নের যে পরিসংখ্যান তুলে ধরলাম, তাতে কী বলে আমরা পাকিস্তানি কায়দায় দেশ চালাচ্ছি? পাকিস্তানের কায়দায় দেশ চালিয়ে আমরা পাকিস্তান থেকে এগিয়ে গেছি। শত চেষ্টা করেও আপনি আওয়ামী লীগকে পাকিস্তানি ভাবধারায় নিতে পারবেন না। ’
এর আগে বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন সুচকে এগিয়ে থাকার চিত্র তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, আজ পাকিস্তানের দিকে তাকিয়ে দেখুন বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক একটি দেশ। আমাদের জিডিপি ৭.২ শতাংশ, পাকিস্তানের জিডিপি ৫.২ শতাংশ। পদ্মাসেতুর কাজ হয়ে গেলে আরও দেড় ভাগ জিডিপি আমাদের বাড়বে। আমাদের দেশের শিক্ষার হার ৭১ শতাংশ আর পাকিস্তানের শিক্ষার হার ৫৮ শতাংশ।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা পাকিস্তান থেকে সব সূচকে এগিয়ে আছি, শুধু পরমাণবিক বোমা ছাড়া। তাদের পরমাণবিক বোমা আছে ওটা আমাদের দরকার নেই। আমাদের পরমাণবিক বোমা আমাদের জনগণ, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জাগ্রত আমাদের তরুণ সমাজ।
‘এই পরমাণু বোমারাই (তরুণ সমাজ) আজকে বাংলাদেশকে নব নব বিজয়ের দিকে পৌঁছে দিচ্ছে। বেগম জিয়াকে বলবো, শত চেষ্টা করেও বাংলাদেশকে আর পাকিস্তানি ধারায় ফিরিয়ে নেওয়া যাবে না। ’
তিনি বলেন, পাকিস্তান বাংলাদেশের পেছনে লেগেই আছে। যুদ্ধাপরাধীদের যখন বিচার হয় তখন পাকিস্তান বিরোধিতা করে। কী জঘন্য ভাষায় কথা বলেছে দেশটি! তখন খালেদা জিয়া চুপ ছিলেন, বিএনপি নীরব ছিলো। আগামী নির্বাচনে খালেদা জিয়াকে এর জবাব দিতে হবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের ভুল হতে পারে কিন্তু আমরা চেতনা থেকে সরে যাইনি। অনেকেই বলছে আওয়ামী লীগ আপোষ করছে। অনেকেই এই বিষয়টা ছড়াচ্ছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে কৌশল বদলানো মানে আপোষ নয়। নির্বাচনকে সামনে রেখে জোট হয়। নির্বাচনী জোট তো আদর্শিক জোট নয়। কৌশল আমাদের পরিবর্তন করতে হয় কিন্তু বাংলাদেশ জন্মের যে শেকড় সে শেকড় থেকে আমরা কোনো দিনও বিচ্যূত হবো না। ’
মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, দুই দেশের বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় হবে।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সমিতির সভাপতি একে আজাদ চৌধুরী। এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৭/আপডেট: ০০১২ ঘণ্টা
এসকে/এইচএ/এমএ
** বিজয়ের মাসে বাংলায় বক্তব্য দিলেন হাইকমিশনার শ্রিংলা