শনিবার (২৩ জুন) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের পুরনো ঠিকানায় গড়ে ওঠা নতুন এ ইমারতের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া দেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে দাঁড়িয়ে নতুন ১০ তলা ভবনের উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা।
এ সময় বেলুন ও পায়রা ওড়ানো হয়। জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।
উদ্বোধন শেষে দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
পরে প্রধানমন্ত্রী ভবনের সামনে একটি বকুল ফুল গাছের চারা রোপণ করেন আ’লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। বকুলের চারা রোপণ শেষে আওয়ামী লীগ সভাপতি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভেতরে যান ও ভবনের ভেতরে ঘুরে দেখেন।
২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে আওয়ামী লীগের সব সাংগঠনিক কার্যক্রম এবং ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে দলের নির্বাচনী কার্যক্রম ও সিআরআইসহ অন্যান্য সংস্থার গবেষণা কাজ পরিচালিত হবে বলে আওয়ামী লীগ নেতারা জানান।
দেশের সর্বাধুনিক রাজনৈতিক কার্যালয়ে রয়েছে ডিজিটাল লাইব্রেরি, কনফারেন্স লাউঞ্জ, ভিআইপি লাউঞ্জ, সাংবাদিক লাউঞ্জ, ডরমিটরি, গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা ও ক্যান্টিন সুবিধা। এখানে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি থাকছে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা লীগসহ বিভিন্ন সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের প্রধান কার্যালয়।
৯৯ বছরের জন্য সরকারের কাছ থেকে জমি লিজ নিয়ে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের জন্য ১০ তলা ভবনটি নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছিল।
ভবনে প্রবেশ করেই হাতের বাম রয়েছে অভ্যর্থনা ডেস্ক। সিঁড়ির দু’পাশে দু’টি লিফট রয়েছে বহুতল এ ভবনে। ভবনের বেইজমেন্ট ও প্রথম তলায় গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা।
ভবনের তৃতীয় তলা পর্যন্ত প্রতিটি ফ্লোর ৪ হাজার ১০০ বর্গফুট এবং চতুর্থ তলা থেকে প্রতিটি ফ্লোর ৩ হাজার ১শ বর্গ ফুটের।
বুলেট প্রুফ নবম তলায় আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়। অষ্টমতলায় সাধারণ সম্পাদকের কার্যালয়।
তৃতীয় তলার সামনের অংশ ‘ওপেন স্কাই টেরেস’। এখানে কৃত্রিম বাগানের ফাঁকে ফাঁকে চেয়ার-টেবিল দিয়ে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ফ্লোরে ২৪০ জন বসার ব্যবস্থা রয়েছে। দশ তলায় রয়েছে ক্যাফেটেরিয়া। দ্বিতীয় তলায় সাড়ে তিনশ জনের বসার ব্যবস্থা সম্পন্ন কনফারেন্স রুম রয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন ফ্লোরে রয়েছে সাধারণ কার্যালয়, ডিজিটাল লাইব্রেরি, মিডিয়া রুম, বিভিন্ন সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের জন্য কক্ষ রাখা হয়েছে।
ভবনের সামনে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে স্থায়ী স্মৃতিসৌধ নির্মাণে পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান আওয়ামী লীগ নেতারা।
১৯৮১ সালের দিকে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা হয়।
এর আগে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার কেএম দাশ লেনের রোজ গার্ডেনে আত্মপ্রকাশ করার পর থেকে বেশ কয়েকবার ঠিকানা বদল হয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের। ১৯৫৩ সাল থেকে ৯, কানকুন বাড়ি লেনে অস্থায়ী একটি কার্যালয় ব্যবহার করা হতো। ১৯৫৬ সালে পুরান ঢাকার ৫৬, সিমসন রোডে আওয়ামী লীগের কার্যালয় হয়।
১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করার পর তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৯১, নবাবপুর রোডে আওয়ামী লীগের কার্যালয় নেন। এর কিছুদিন পর অস্থায়ীভাবে সদরঘাটের রূপমহল সিনেমা হলের গলি এবং পরে পুরানা পল্টনে দু’টি স্থানে দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের কার্যালয় ছিল। এছাড়া বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের নেতাদের বাসায় বাসায় দলের বৈঠক হতো।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩১ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১৮
এমইউএম/এএটি