শুক্রবার (২১ ডিসেম্বর) রাতে নির্বাচন ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সংসদ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচ টি ইমাম এ অনুরোধ জানানো কথা বলেন।
এদিন বিকেল সোয়া ৬টা থেকে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সোয়া ৮টা পর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে বসে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দল।
এইচ টি ইমাম জানান, আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা আইন মেনে চলার জন্য নির্বাচনের পোস্টারে শুধু দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ফটো ব্যবহার করছে। এমনকি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ফটোও ব্যবহার করছে না।
তিনি বলেন, জাতীয় ঐকফ্রন্ট ও বিএনপির প্রার্থীদের পোস্টারে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ফটো ব্যবহারের বিষয়ে আমরা আপত্তি জানিয়েছি। খালেদা জিয়া যেহেতু কারাগারে ও বিএনপি চেয়ারপারসন নন। তারেক জিয়া বর্তমান চেয়ারপারসন হলেও দণ্ডিত আসামি এবং পলাতক অবস্থায় আছেন। দণ্ডিত আসামি হওয়ায় এবং পলাতক থাকায় কোনোভাবেই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ফটো ব্যবহার করতে পারার কথা নয়।
এইচ টি ইমাম আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দলীয় প্রধান হিসেবে নির্বাচনী প্রচারে ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করেন। ভিডিও কনফারেন্সে সকল সাপোর্ট দলীয়ভাবেই নেওয়া হয়। দল এবং সরকারে মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরার চেষ্টা করছি। কাজেই আওয়ামী লীগ আচরণবিধি মেনেই নির্বাচন পরিচালনা করছে। অন্যদেরও আইন মেনে প্রচার চালানোর বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য বলেছি।
জামায়াত বিষয়ে তিনি বলেন, জামায়াতের প্রার্থীরা বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্রে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের ওয়েব সাইটে সেই প্রার্থিদের নাম ও পদ উল্লেখ করা আছে। কাজেই তারা অসত্য তথ্য দিয়েছে। তাই তারা প্রার্থী হিসেবে থাকতে পারেন না। আদালতও নির্বাচন কমিশনের কাছে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছে। তাই আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে জামায়াতে সদস্য যারা ধানের শীষে প্রার্থী হয়েছেন তাদের প্রার্থিতা বাতিলের দাবি জানিয়েছি।
এইচ টি ইমাম বলেন, আমরা ১১৮টি নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থার মধ্যে চারটি সংস্থা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছি। এগুলো হলো—ডেমোক্রেসি ওয়াচ, যার প্রধান হচ্ছেন শফি রহমানের স্ত্রী তালেয়া রহমান; খান ফাউন্ডেশন ড. আব্দুল মঈন খানের স্ত্রীর; বগুড়ার লাইট হাউজ তারেক রহমানের; আদিলুর রহমানের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মানবাধিকার পরিষদ। এরা সবাই রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। নির্বাচন কমিশনকে আমরা বলেছি নিরপেক্ষ সংস্থাকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমতি দিতে।
এনজিও ব্যুরোর নিবন্ধনের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে সম্প্রতি অধিকার নামে একটি সংস্থার নিবন্ধন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। এইচটি ইমাম বলেন, অধিকার সংগঠনটিই আদিলুর রহমানের। সেটির নিবন্ধন বাতিল হলে এখন তিনি বাংলাদেশ মানবিকার পরিষদ চালাচ্ছেন।
লাঠির ওপর ধানের শীষ নিয়ে প্রচার কাজের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যরিষ্টার মওদুদ আহমদের দেওয়া বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আ’লীগের এই নেতা বলেন, এতে যেকোনো ধরনের সংঘাতের ঘটনা ঘটতে পারে। শুধু বিএনপি নয়, যেকোনো দলেরই নির্বাচনী প্রচারে লাঠি বা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, এমন বস্তুর ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া প্রয়োজন।
নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালকুদার বারবার কমিশনের সিদ্ধান্তে বিরোধিতা করায় আ’লীগের কমিশনের প্রতি আস্থাহীনতা আছে কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে এইচ টি ইমাম বলেন, আস্থাহীনতা আছে বলে মনে করি না। নির্বাচন কমিশন আদালতের মতো। সেখানে বিচারকরা যেমন নোট অব ডিসেন্ট দিতে পারেন, এখানে কমিশনাররাও নোট অব ডিসেন্ট দিতে পারেন। তবে সংখ্যাগরিষ্ঠদের মতামতই গ্রহণযোগ্য হবে।
বিএনপির পোস্টার দৃশ্যমান না হওয়ার বিষয়ে এইচ টি ইমাম আরো বলেন, এটি আমাদের (আওয়ামী লীগ) কাছেও গুঞ্জন আছে, বিষয়টি রহস্যজনক।
তিনি বলেন, সারাদেশে আ’লীগের প্রার্থিদের ওপর ব্যাপক আক্রমণ হচ্ছে। কোথাও সন্ত্রাসী হামলা হচ্ছে। সবকিছু আমরা নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি। আমরা কাউকে আক্রমণ করি না। বিএনপি-জামায়াতের প্রার্থিরা উল্টো এসে ইসিতে অভিযোগ করছে। হামলা আওয়ামী লীগের ওপরেই হয়েছে, স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির ওপর বেশি হামলা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৮
ইইউডি/এমজেএফ