উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যারা অবস্থান নিয়েছিলেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে মাঠে নামছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।
শুক্রবার (৫ এপ্রিল) দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এবারের উপজেলা নির্বাচনে প্রতিপক্ষ বিএনপিসহ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের বাইরের অন্য কোনো দল অংশ নেয়নি। এতে এবারের উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ অনেকটা আওয়ামী লীগই হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে দলের তৃণমূল পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও দ্বিধা বিভক্তি তৈরি হয়েছে। দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের জেলা ও উপজেলার শীর্ষ নেতা, দলের স্থানীয় সংসদ সদস্য এমনকি কোথাও কোথাও মন্ত্রীদের অবস্থান নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের মতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগ সংগঠিত ও নেতাকর্মীরা ঐক্যবব্ধ ছিলো। কিন্তু উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অনেক জায়গায় বিদ্রোহী হয়েছে। অনেক জায়গায়ই এদের পক্ষে দলের স্থানীয় পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ নেতা, দলীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরাও কাজ করেছেন। এর ফলে তৃণমূল পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বিধা-বিভক্তি তৈরি হয়েছে। বিএনপিসহ বিরোধী পক্ষ্য নির্বাচনে না আসার কারণে এটা হতে পারে। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কাজ করা দলের জন্য উদ্বেগজনক।
এ পর্যন্ত চার ধাপে অনুষ্ঠিত ৪৪৫টি উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের ৩১১ জন নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। আর ১৩০ জন স্বতন্ত্র হিসেবে অংশ নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ৪ জন। দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে এত সংখ্যক বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়া এবং দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও এমপি-মন্ত্রীরা তাদের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় সাংগঠনিকভাবে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন। গত ২৯ মার্চ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সভায়ও বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা জানান,উপজেলা নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যারা অবস্থান নিয়েছেন তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে তালিকা তৈরির জন্য কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এদের ব্যাপারে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অপরাধে তাদের প্রথমে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হতে পারে। এরপর কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে এদের যারা দলের বিভিন্ন পদে রয়েছেন তারা আগামীতে ওই পদ হারাতে পারেন। পাশাপাশি যারা সংসদ সদস্য তারা আগামীতে আর দলের মনোনয়ন পাবেন না, এমন সিদ্ধান্তও নেওয়া হতে পারে।
এছাড়া দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিরসন করে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কেন্দ্রীয় নেতাদের ৮টি টিম গঠন করা হয়েছে। এই টিমগুলো তৃলমুল পর্যায়ে দলের আগামী জাতীয় কাউন্সিল পর্যন্ত কাজ করবে। ইতোমধ্যে টিমগুলোর খসড়া তৈরি করা হয়েছে। শুক্রবার (৫ এপ্রিল) দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণি পর্যায়ের নেতারা জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বাংলানিউজকে বলেন, উপজেলা নির্বাচনে যারা দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কাজ করেছেন তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। সাংগঠনিক সম্পাদকদের দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে তালিকা করার জন্য। তারা কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় প্রতিবেদন দেবেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় সে ব্যাপারে সভায় সিদ্ধান্ত হবে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলানিউজকে বলেন, দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা, এমপি যারা দলীয় প্রার্থীর বিরোধিতা করেছেন, বিরুদ্ধে কাজ করেছেন তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে আমাদের তালিকা করতে বলা হয়েছে। আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। এদের বিরুদ্ধে দল অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেবে। দলের সাংগঠনিক কর্মতাণ্ড বৃদ্ধির জন্য ৮টিম করা হয়েছে। আগামী কাউন্সিল পর্যন্ত এই টিম কাজ করবে। এসব বিষয়ে শুক্রবার কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১১ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১৯
এসকে/এমজেএফ