আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, জেলা, উপজেলাসহ ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ে যেসব জায়গায় কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে অক্টোবরে জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে সেসব জায়গায় দ্রুত সম্মেলন করা হবে। একই সঙ্গে যেসব জাগায় সম্মেলন হয়েছে কিন্তু নতুন কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি সেসব জায়াগায় দ্রুত কমিটি দেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জাতীয় সম্মেলনের আগে এসব কাজ তদারকির জন্য ৮টি কেন্দ্রীয় টিম কাজ করা হয়েছে। এই কমিটিগুলো ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। রোজা ও ঈদের কারণে এই টিমের নেতাদের জেলা সফর স্থগিত রয়েছে।
ঈদের পর চলতি মাস থেকেই এটা জোরদার করা হবে।
আগামী ১১ জুন থেকে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট অধিবেশন শুরু হবে। এবারের বাজেট আওয়ামী লীগ সরকারের এই মেয়াদের (টানা তৃতীয় মেয়াদ) প্রথম বাজেট। প্রায় এক মাস এই অধিবেশন চলবে।
দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের অধিকাংশই জাতীয় সংসদ সদস্য। তবে বাজেট অধিবেশন চলাকালে ছুটির দিনে অর্থাৎ শুক্র ও শনিবার ধরে কেন্দ্রীয় টিমের সাংগঠনিক সফর চলবে। পাশাপাশি যারা সংসদ সদস্য নন এমন নেতারা দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন।
এরপর আসছে শোকের মাস আগস্ট, ওই মাসব্যাপী শোকের কর্মসূচি থাকে। আগস্টের পর হাতে সময় থাকে মাত্র সেপ্টেম্বর মাস। এ কারণে আগস্টের আগেই তৃণমূল পর্যায়ে সম্মেলনের অধিকাংশ কাজ এগিয়ে রাখার টার্গেট নেওয়া হয়েছে বলে জানান আওয়ামী লীগ নেতারা।
আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এবার তৃণমূল পর্যায়ের কমিটিতে নতুন নেতৃত্বের ক্ষেত্রে অনেক বিচার-বিশ্লেষণ হবে। বিশেষ করে বিতর্কিত, অনুপ্রবেশকারী, দলের সিদ্ধান্তের বিরোধিতাকারী, কর্মীদের কাছে অগ্রহণযোগ্য ও সমালোচিতরা নতুন কমিটিতে স্থান পাবেন না।
এ রকম অভিযুক্ত যারা বর্তমান কমিটিতে আছেন তারাও বাদ পড়বেন। বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি-জামায়াত থেকে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশের অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরোধিতা করে দলের অনেকেই বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন। তাদের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছে দলটির নেতৃত্ব।
দলীয় সূত্র বলছে, বিতর্কিতদের বাদ দেওয়ার পাশাপাশি দলের সব পর্যায়ে পরিচ্ছন্ন ও তরুণ নেতাদের নিয়ে আসা হবে। বিশেষ করে ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রেখে চলেছেন তারাই এবার গুরুত্ব পাবেন দলে। এই সার্বিক বিষয়গুলো সুচারুভাবে তদারকি করবেন কেন্দ্রীয় ৮টিমের সদস্যরা।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান বাংলানিউজকে বলেন, যে ৮টি টিম গঠন করা হয়েছে সেই টিমগুলো ইতোমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছে। কিছু কিছু জেলা-উপজেলা পর্যায়ে নেতাদের সঙ্গে এই টিম বৈঠকও করেছে। স্থানীয় নেতাদের নিয়ে অনেকগুলো সাব কমিটিও গঠন করে দিয়েছে।
‘জুন থেকেই পুরোদমে সাংগঠনিক কাজ শুরু হবে। জুনে সংসদ অধিবেশন আছে। অধিবেশন চলাকালে ছুটির দিন শুক্র ও শনিবার সফর কার্যক্রম চলবে। তাছাড়া নেতাদের মধ্যে যারা সংসদ সদস্য না তারা কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন। দ্রুতই আমরা তৃণমূলের কাজ গুছিয়ে ফেলবো। এবার নতুন কমিটিতে তরুণদের গুরুত্ব দেওয়া হবে। ’
তরুণদের গুরুত্ব দেওয়া প্রসেঙ্গ তিনি বলেন, সংগঠনকে গতিশীল করতেই এটা করা হবে।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে প্রতি তিনবছর পর কেন্দ্র থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে সম্মেলন করার বিধান রয়েছে। সে অনুযায়ী, সব পর্যায়ে (যেসব জায়গায় কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ) সম্মেলনের পর জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। চলতি বছর ২৩ অক্টোবর বর্তমান কমিটির মেয়াদ তিনবছর পূর্ণ হবে। অতীতে অনেক সময় কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর নানা কারণে সম্মেলন অনুষ্ঠান করা সম্ভব না হলেও এবার নির্ধারিত সময়ে অর্থাৎ অক্টোবরেই জাতীয় সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলানিউজকে বলেন, কাজ তো শুরু হয়ে গেছে। আমরা কিছু কিছু জেলার নেতাদের সঙ্গে সভা করেছি। রোজার কারণে কাজে একটু শিথিলতা আছে। তবে ঈদের পর কাজ শুরু হবে।
‘জাতীয় সম্মেলনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করার জন্য দ্রুতই আমরা তৃণমূল পর্যায়ের কার্যক্রম এগিয়ে নিতে চাই। সে লক্ষ্যেই কাজ চলছে,’যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৯ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০১৯
এসকে /এমএ