সম্প্রতি ছাত্রলীগ যত কমিটি ঘোষণা করেছে, কোনো ইউনিটেই প্রত্যক্ষ ভোটাভুটির মাধ্যমে করতে দেখা যায়নি। তাই জবি ছাত্রলীগের কমিটিতেও এ ধরনের নির্বাচন প্রক্রিয়া অনুষ্ঠান হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করা হচ্ছে।
এ বিষয়টি বিবেচনায় জবি ছাত্রলীগের কমিটিতে পদপ্রত্যাশীরাও তৎপরতা চালাচ্ছেন সেভাবে। লবিং-তদবিরেও ব্যস্ত অনেকে। নিজেরা লম্বা সময় কেন্দ্রীয় দুই নেতার পেছনে কাটানোর পর সাবেক ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছেও ‘ধর্না’ দিচ্ছেন।
অভিযোগ রয়েছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে প্রধান বেশ কিছু বাণিজ্যিক স্থাপনা, লঞ্চ টার্মিনাল, হাসপাতাল, স্কুল, কোচিং সেন্টার থাকায় এখানে ছাত্রনেতা পরিচয়ে ‘চাঁদা’ আদায় করা হয়। এর ফলে খুব অল্প দিনে ছাত্রসংগঠনের নেতারা কোটিপতি বনে যান। সেজন্য নেতা হওয়ার পেছনে তদবির বাবদ কিছু ব্যয় হলেও তা পুষিয়ে উঠতে বেশি সময় লাগে না বলেও অভিযোগ শোনা যায়।
তাই ছাত্রলীগের সবশেষ কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পর থেকেই শীর্ষ পদে আসীন হতে লবিং-তদবির শুরু করেন পদপ্রত্যাশীরা। এক্ষেত্রে নিজেদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের পরিচিত লোকজনের মাধ্যমে কেন্দ্রে ‘আবদার’ পাঠানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। এক্ষেত্রে মাধ্যম হচ্ছেন মন্ত্রী থেকে শুরু করে এমপি, সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকও।
সম্মেলনের আগ মুহূর্তে ছাত্রলীগের অন্যতম এই ‘হেভিওয়েট’ ইউনিটের নেতৃত্বে আসার দৌড়ে সবচেয়ে বেশি শোনা যাচ্ছে সাতজনের নাম। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সূত্র বলছে, এদের মধ্য থেকেই দু’জন হতে পারেন জবি ছাত্রলীগের কর্ণধার। এরা হলেন- নাহিদ পারভেজ, জামাল উদ্দিন, সৈয়দ শাকিল, ইব্রাহিম ফরায়েজী, আশরাফুল ইসলাম টিটন, আল-আমিন শেখ ও আসাদুজ্জামান আসাদ।
দৌড়ে আরও আছেন তারেক আজীজ, মো. নাজমুল আলম, হোসনে মোবারক রিশাদ, আকতার হোসাইন, শরিফুল ইসলাম, আব্দুর রহিম কাউসার, মশিউর রহমান লিজন, নুরুল আফসার, আনোয়ার সজীব, শাহবাজ হোসেন বর্ষণসহ সদ্য সাবেক কমিটির প্রায় এক ডজন নেতার নাম। তবে শেষ মুহূর্তে ‘চমক’ও দেখা যেতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
এদিকে, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য যারা লবিং-তদবিরে সময় পার করছেন তাদের অনেকের বিরুদ্ধে রয়েছে চাঁদাবাজি, অস্ত্র মামলাসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ।
এদের মধ্যে সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হোসনে মোবারক রিশাদের বিরুদ্ধে রয়েছে জবির টিএসসিসহ বিভিন্ন দোকানপাটে চাঁদাবাজির অভিযোগ। চাঁদাবাজি নিয়ে মারামারির ঘটনায় ছাত্রলীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কারও হন তিনি।
আশরাফুল ইসলাম টিটনের বিরুদ্ধে রয়েছে অস্ত্র আইনের মামলা। নিজেকে কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম রাব্বানীর অত্যন্ত কাছের ব্যক্তি বলে পরিচয় দিতেই বেশ পছন্দ করেন সম্মেলন আয়োজক কমিটির এই আহ্বায়ক।
জবি ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইব্রাহিম ফরায়েজী দীর্ঘদিন ধরেই সম্পৃক্ত রয়েছেন জবি ছাত্রলীগের তৃণমূল রাজনীতিতে। নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে। তিনি পরিচিত হয়ে থাকেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের কাছের লোক হিসেবে।
জবি ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি আল আমীন শেখ এতো দিন ক্যাম্পাসে খুব বেশি সময় ব্যয় না করলেও সম্প্রতি বেশ কর্মী যোগাড় করেছেন। তিনি পরিচিত আওয়ামী লীগের একজন সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রলীগ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের ঘনিষ্ঠ হিসেবে।
কর্মী-সংখ্যার দিক দিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাকিল। তার পেছনে রয়েছেন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতা।
সাবেক কমিটির উপ-মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক নাহিদ পারভেজ এতোদিন ক্যাম্পাসে সক্রিয় না থাকলেও সম্মেলন ঘিরে বেশ তৎপর তিনি। নাহিদ সাবেক ছাত্রনেতা বিপ্লব হাসান পলাশের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত।
বর্তমান ছাত্রলীগ যাদের নিয়ন্ত্রণে চলছে, জামাল উদ্দিন তাদেরই অনুসারী বলে পরিচিত। এছাড়া বাকিদেরও চলছে বেশ জোরালো তদবির।
জবি শাখার সম্মেলন প্রসঙ্গে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বাংলানিউজকে বলেন, কোনো কমিটিতেই কোনো বিতর্কিত লোকের স্থান হবে না। সৃজনশীল ও মানবিক গুণাবলীর অধিকারী ব্যক্তিই ঠাঁই পাবেন ছাত্রলীগের কমিটিতে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৯, ২০১৯
কেডি/এইচএ/