ঢাকা, বুধবার, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২ শাবান ১৪৪৬

বাংলানিউজ স্পেশাল

পানির বিলে ওয়াসায় দুর্নীতি: বছরে লুট ২০০ কোটি টাকা

আহমেদ রাজু, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ৫, ২০১০
পানির বিলে ওয়াসায় দুর্নীতি: বছরে লুট ২০০ কোটি টাকা

ঢাকা: পানির বিল নিয়ে ঢাকা ওয়াসায় বেপরোয়া দুর্নীতি ও লুটপাট চলছে।

শিল্পকারখানা, আবাসিক বাড়ি ও বহুতল বাণিজ্যিক ভবন থেকে বছরে অন্তত ২শ কোটি টাকার বিল লুট হচ্ছে।

রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তারা এ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু দুর্নীতিবাজ ওই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ওয়াসা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানায়।


এ বিষয়ে পানির বিলের দুর্নীতি সম্পর্কে ওয়াসার প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ওয়াহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ‘অনেক সময় বড় বড় ভবনের কম বিল দেখে মনে হয় দুর্নীতি হচ্ছে। নইলে এত কম বিল হবে কেন? তবে বেশির ভাগ সময় দুর্নীতি প্রমাণ করা যায় না। তবে কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাড়ির মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওয়াসার মিটার রিডার ও রাজস্ব^ বিভাগের কর্মকর্তাদের মাসোহারা না দিলে তারা ইচ্ছেমতো বিল করেন। আবার নিয়মিত টাকা দিলে তারা খুব কম টাকা বিল করেন। তাদের ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিলেই ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার বিল হয়ে যায় মাত্র ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। একইভাবে, ২০ হাজার টাকা ঘুষ দিলে দেড় /দুই লাখ টাকার বিলও হয়ে যায় ৩০/৪০ হাজার টাকা।

মিরপুরের এক বাসিন্দা মিটার রিডারের দৌরাত্ম্য সম্পর্কে অভিযোগ করে বলেন, ‘তার বাড়িতে আগে মাসে বিল আসতো এক থেকে এক হাজার ২শ টাকা। কিন্তু হঠাৎ তার বাড়িতে পানির বিল বেড়ে গেল কয়েক গুণ।

মিরপুর জোনের রাজস্ব বিভাগ গত জানুয়ারি মাসে তার বাড়ির পানির বিল করেছে ১ হাজার ২শ ৩০ টাকা। কিন্তু, ফেব্রুয়ারি মাসের বিল করেছে ৪ হাজার ২শ ৯০ টাকা। আগের তুলনায় কয়েক গুণ বিল বেশি আসায় মিটার রিডারের কাছে তিনি বেশি বিল আসার কারণ জানতে চান। ওই বাড়ির মালিকের সঙ্গে আলাপের এক পর্যায়ে মিটার রিডার তার কাছে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন।

একই সঙ্গে ওই মিটার রিডার বলেন, তাকে ১০ হাজার টাকা দিলে আগামী মাস থেকে তার বাড়িতে আগের মতো বিল আসবে। কিন্তু,  তিনি ঘুষ দিতে রাজি না হলে তাকে হুমকি দিয়ে মিটার রিডার বলেন, ‘আগামী মাস থেকে ঠ্যালা বুঝবেন। ’ তারপর থেকেই তার বাড়িতে আরো বেশি বিল আসছে বলে তিনি জানান।

একই অভিযোগ করেছেন, মোহাম্মদপুরের এক বাসিন্দা। মিটার রিডারকে ঘুষ না দেওয়ায় তার বাড়িতেও বেশি বিল আসছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। শান্তিবাগ এলাকার অপর এক বাসিন্দাও এমন অভিযোগ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘আগে তার বাড়িতে মাসে পানির বিল আসতো ৭/৮শ টাকা। কিন্তু মিটার রিডার বাড়িতে না এসেই ইচ্ছেমতো বিল করে দেন। এতে তার বিল আসছে অনেক বেশি।

সূত্র জানায়, মিটার কারসাজির সঙ্গে ওয়াসার বিভিন্ন জোনের উপ-রাজস্ব কর্মকর্তারা সরাসরি জড়িত রয়েছেন। তাদের সহযোগিতায় মিডার রিডাররা অতিরিক্ত বিল দেখিয়ে ঘুষ আদায় করছেন। সংশ্লিষ্ট জোনের রাজস্ব কর্মকর্তারাও আদায়কৃত ঘুষের ভাগ পান।

পানির বিল নিয়ে দুর্নীতি সম্পর্কে ওয়াসার এক অডিট রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ‘বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত ও কলকারখানায় অবৈধ ও বাইপাস সংযোগ দিয়ে বছরে লুটপাট হচ্ছে অন্তত ২শ কোটি টাকা। সিস্টেম লসের নামে বছরে লুট হচ্ছে দেড়শ কোটি টাকা।

দুর্নীতিবাজ চক্রটি মিটারবিহীন বাড়ি থেকে মাসোহারা আদায় করে থাকে। এ খাত থেকে তারা বছরে হাতিয়ে নিচ্ছে ৩০ কোটি টাকা।   জেনারেটর চালানোর নামে তেল চুরি করে ওয়াসায় বছরে লুটপাট হচ্ছে ৯ কোটি টাকা। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ না করেও মাসে ওভার টাইম আদায় করছে বেতনের ১০/১২ গুণ বেশি। ’

অডিট রিপোর্ট থেকে আরো জানা যায়, ওয়াসার সাড়ে ৮শ কোটি টাকার কোনো হদিস নেই। বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত ব্যয় দেখিয়ে এ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। সঠিকভাবে বিল না করা, মিটারবিহীন পানির সংযোগ প্রদান ও বিধিবহির্ভূত ভাতা প্রদানসহ মোট ২৭টি খাতে ৮ বছরে এ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ওয়াসা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।