লন্ডন: ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রথম বাঙালি এমপি ও সদ্য নিয়োগ পাওয়া শ্যাডো জুনিয়র মন্ত্রী রোশনারা আলী বলেছেন, তার নুতন দায়িত্ব বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে এইড ও ট্রেডের উন্নয়নে ভূমিকা রাখার সুযোগ এনে দিয়েছে। তিনি এই সুযোগ পুরোপুরি কাজে লাগাতে চান।
বুধবার হাউস অব কমন্সে দায়িত্ব নেওয়ার পর সাংবাদিকদের এভাবেই তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা জানান রোশনারা আলী।
তিনি বলেন, ‘নতুন দায়িত্ব পেয়ে আমি খুবই আনন্দিত। আমি চাই আমাদের নতুন প্রজন্ম আরো বেশি করে ব্রিটিশ রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হোক। ’
রোশনারা বলেন, যেকোন দায়িত্বই কাজের সুযোগ সৃষ্টি করে, আর আমার নতুন দায়িত্বও এরকম একটি সুযোগ আমার জন্যে নিয়ে এসেছে।
রোশনারা জানান, জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতেও কাজ করার ইচ্ছে রয়েছে তার।
দায়িত্ব গ্রহণের পর লেবার পার্টির ডেপুটি লিডার ও ইন্টারন্যাশনেল ডেভেলপমেন্ট (ডিএফআইডি) মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত শ্যাডো মন্ত্রী হ্যারিয়েট হারমেনের পাশে হাউস অব কমন্সের প্রথম সারিতে বসেন রোশনারা। এ সময় তিনি টোরি-লিবডেম জোট সরকারের ডিএফআইডি মন্ত্রী অ্যান্ড্রু মিচেলের প্রশ্নোত্তর পর্বেও অংশ নেন।
ডিএফআইডি মন্ত্রীর কাছে তিনি জানতে চান দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকান জনগণের জন্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহে ব্রিটিশ সরকারের বরাদ্ধ অর্থ বহাল থাকবে কি না।
প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন রোশনারা আলী। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ যে পরিমাণ ব্রিটিশ সাহায্য পেয়েছে, বর্তমান কোয়ালিশন সরকার তা অব্যাহত রাখবে কি না এমন এক প্রশ্নের উত্তরে রোশনারা বলেন, ‘এ নিয়ে আমাদেরও উদ্বেগ রয়েছে। সাহায্যের ক্ষেত্রে লেবার সরকার যে, ০.৭% মাত্রা নির্ধারণ করেছে তা রা করায় এই সরকার অঙ্গিকারাবদ্ধ হলেও বাস্তবতা কিছুটা ভিন্ন। ’
রোশনারা আলী জানান, ডিএফআইডি’র নীতিমালায় রয়েছে তাদের বাজেট থেকে ১০% পর্যন্ত অর্থ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা খাতে ব্যয় করা যাবে। বর্তমান সরকার তা তুলে নিয়েছে।
তবে সাংবাদিকদের তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, ‘আমরা বিষয়গুলোর ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখছি এবং এ নিয়ে পার্লামেন্টে বিতর্কেরও প্রস্তুতি নিচ্ছি। ’
উল্লেখ্য শ্যাডো ডিএফআইডি জুনিয়র মিনিস্টার হিসেবে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য হলো রোশনারার কাজের এলাকা।
ধর্ম ব্যবসায়ীদের ইসলাম হ্যাইজ্যাকের বিরুদ্ধে হুশিয়ারি
এর আগে, টাওয়ার হ্যামলেটস এর মেয়র নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে বক্তৃতা কালে জামাতে ইসলামীর ইউরোপীয় সংস্করণ ইসলামিক ফোরাম ইউরোপের প্রতি ইঙ্গিত করে রোশনারা বলেন, ‘কিছু মানুষ নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্যে আমাদের জনগণের ধর্ম বিশ্বাসকে অপব্যবহারের পায়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। এদের সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। ’
ধর্মব্যবসায়ীদের সকল অপতৎপরতা রুখে দাড়ানোর আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিভেদ, বিদ্বেষ ও ভয় দেখানোর রাজনীতি বিৃটেনে চলবে না। আমরা তাদের ভীতির রাজনীতির কাছে পরাজিত হবো না। ’
তিনি বলেন, ‘আমাদের কমিউনিটি সম্পর্কে ধর্মব্যবসায়ীরা তাদের মনগড়া ব্যাখ্যা হাজির করবে, সে সুযোগ আমরা তাদের দেবোনা। আমাদের এই টাওয়ার হ্যামলেটস গড়ে তুলতে আরও যেসব কমিউনিটি অবদান রেখেছেন তাদের সম্পর্কেও ধর্ম ব্যবসায়ী ঐ বিশেষ মহলকে মনগড়া ব্যাখ্যা হাজির করার সুযোগ দেয়া হবে না। পবিত্র ধর্ম ইসলামের ইচ্ছেমত ব্যাখ্যা হাজির করে ধর্ম ব্যবসায়ীরা ফায়দা হাসিল করবে এটি মেনে নেয়া যায় না। ইসলাম হাইজ্যাক করার সুযোগ দেয়া হবে না তাদের। ’
নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে স্মৃতিচারণ করে রোশনারা বলেন, ‘আশির দশকে আমি এই টাওয়ার হ্যামলেটসে বেড়ে উঠেছি। আমার বাবা-মায়ের সঙ্গে এখানে এসেছি শৈশবে। সে সময় এই এলাকায় চরম ডানপন্থিরা ছিল খুবই সক্রিয়। আমাদের কমিউনিটি এদের বিরুদ্ধে নিরন্তর সংগ্রাম করেছে। তাদের সেই ঐতিহাসিক সংগ্রামের উদ্দেশ্য ছিল আমি এবং আমার জেনারেশনের সকলে যেন এখানে নিরাপদে, নিশ্চিন্তে এবং মর্যাদার সঙ্গে বেড়ে উঠতে পারি। তাদের সেই মহান অবদানের সুবাদেই আজ আমি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য। তাদের সংগ্রামী ভূমিকা আমাকে এবং আমার মতো আরও বহুজনকে মূলধারার রাজনীতিতে আসতে অনুপ্রাণিত করেছে। ’
রোশনারা বলেন, ‘বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের মানুষের সমন্বয়ে আমাদের যে কমিউনিটি, সে কমিউনিটিকে আজ ব্রিটেনের জনগণের কাছে স্পষ্ট করে তুলে ধরতে হবে যে, আমাদের মাঝে যে বৈচিত্র আছে সেটিই আমাদের শক্তি। কোনো ধর্মব্যবসায়ী সাম্প্রদায়িক গ্রুপ বা ইমপোর্ট হয়ে আসা কোন পলিটিশিয়ান আমাদের এই শক্তি নষ্ট করতে পারবে না। ’
বাংলাদেশ সময় ১৬৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১০